তখন যদি সৌমিত্রদার কথাগুলো শুনতাম: মমতা শংকর
RBN Web Desk: তাঁর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মমতা শংকর। একসঙ্গে অজস্র ছবিতে অভিনয় করেছেন তাঁরা। ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘বালিগঞ্জ কোর্ট’, ‘ফ্ল্যাট নং 609’, ‘শেষের গল্প’ ও আরও অনেক ছবিতে দেখা গেছে বাংলা ছবির দুই জনপ্রিয় শিল্পীকে।
সৌমিত্র প্রসঙ্গ উঠতেই ভেঙে পড়লেন অভিনেত্রী। রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “সব জেনেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। এখন টেলিভিশনে এত ইন্টারভিউ দেখছি, ছবি দেখছি, এসব দেখে মনেই হচ্ছে না উনি নেই। এত জীবন্ত সবকিছু যে বিশ্বাস করাই কঠিন। লোকে শুনলে হয়তো আমাকে ভুল বুঝবে, কিন্তু আমার কেমন যেন মনে হয় এমন একটা সময় এসেছে, ভবিষ্যতটা আরও কত কঠিন হবে আমরা জানি না। তার থেকে এত প্রিয়, এত চেনা মানুষরা যেমন সৌমিত্রদা বা আমার মা (অমলা শংকর) চলে গেলেন, তাঁরা যেন বেঁচে গেলেন। তাঁরা যেখানে গেলেন সেখানে ভালো থাকবেন। এই বলে নিজের মনকে সান্তনা দিচ্ছি।”
আরও পড়ুন: সব কান্নার শব্দ হয় না, বেজে উঠল পটদীপ
সম্প্রতি একসঙ্গে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন মমতা শংকর ও সৌমিত্র। সে কথা বলতে গিয়ে মমতা শংকর জানালেন, “বোধহয় বয়স হচ্ছে বলেই এই কথাটা বারবার মনে হয় যে দাঁত থাকতে আমরা দাঁতের মর্ম বুঝি না। সৌমিত্রদার সঙ্গে কত ছবি করেছি। আবার এই কয়েক বছরে অনেকগুলো ছবি করলাম। সেখানে শুটিংয়ের ফাঁকে সৌমিত্রদা কতরকম গল্প বলতেন। সেই সময়ে মনে হয়েছে উনি তো আছেনই, পরে না হয় শোনা যাবে। এখন বরং চিত্রনাট্যটা নিয়ে আলোচনা করে নিই। এখন মনে হচ্ছে, তখন যদি সৌমিত্রদার কথাগুলো শুনতাম। এটা আমার মাকে নিয়েও হয়েছে। মা হয়তো পুরোনো কোনও কথা বলছেন, আমি ভাবছি এটা তো জানি, পরে আবার শুনে নেব। কিন্তু মা চলে গেলেন। আমার আর জানা হলো না। মানুষগুলো চলে গেলে জানবো কার কাছে? এগুলো যেন একটা ধাক্কা দিয়ে শিখিয়ে দিয়ে যায় যে যতটুকু আমরা পাচ্ছি সেটুকু যেন মনপ্রাণ দিয়ে আহরণ করি। এমন যেন না ভাবি যে এভাবেই জীবন কেটে যাবে। যতটুকু ভালো পাচ্ছি সেটুকুই যেন যত্নের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারি।”
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
বিভিন্ন সম্পর্কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র-মমতা শংকর। কখনও বাবা-মেয়ে, কখনও ভাসুর-ভাজ, কখনও স্বামী-স্ত্রী তো কখনও শুধুই প্রিয় বন্ধু। সেই প্রসঙ্গে মমতা শংকর বললেন, “একবার একজন বলেছিলেন ‘বাবাঃ, সৌমিত্রদা তো তোমার সঙ্গে সবরকম সম্পর্কের চরিত্রে অভিনয় করে ফেললেন।’ আমি বলেছিলাম আমার একটা ছবিতে সৌমিত্রদা নেগেটিভ চরিত্রেও অভিনয় করেছেন।” ১৯৯৪ সালে পরিচালক অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সোপান’ ছবিতে মমতা শংকরের বিপরীতে নেগেটিভ চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র।
২০১৯-এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ অবলম্বনে পরিচালক জিৎ চক্রবর্তীর ‘শেষের গল্প’ ছবিতে অমিত ও লাবণ্যর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র ও মমতা শংকর।
“আমার স্বামী চন্দ্রোদয় শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেছে। ও মাঝেমাঝেই বলতো ‘শেষের কবিতা’ নিয়ে কেন কেউ ছবি করছে না’, বা ‘তোমাকে কেন কেউ লাবণ্যর চরিত্র দেয় না’। বিয়ের আগেই ও আমাকে ‘শেষের কবিতা’ বইটা উপহার দিয়েছিল। আমার পড়ে এত ভালো লেগেছিল যে বারবার ভেবেছি আমাকে যদি কেউ লাবণ্যর চরিত্রে নেয়। যদিও তখন আমার বয়স খুবই কম, লাবণ্যর চরিত্র করার মতো পরিণত নই। কিন্তু তখনই মনে হয়েছিল অমিতের চরিত্রে কিন্তু সৌমিত্রদা ছাড়া আর কাউকে মানাবে না। ভগবানের কী অদ্ভুত লীলা যে সেই ‘শেষের কবিতা’ হলো এতদিন পরে নতুন গল্প নিয়ে, জিতের প্রথম ছবি ছিল। ছবিটায় খুব সুন্দর একটা গল্প ছিল। জিৎ আমাকে লাবণ্যর চরিত্রের প্রস্তাব দিল, সেখানে কে অমিত হলেন, না সৌমিত্রদা। এর থেকে বেশি আমি আর কীই বা চাইতে পারি,” বললেন ‘গনশত্রু’র ইন্দ্রানী।