লিলি-পরাণের জীবনে ‘পান্তুয়া’
কলকাতা: জীবনে যতই ওঠাপড়া থাকুক, শেষ বয়সটুকু শান্তিতে কাটাবার আশাতেই সবকিছু বিনিয়োগ করে মানুষ। কিন্তু সেই বয়সে পৌঁছে যদি কোনও এক অন্ধকার ছায়া গ্রাস করে নেয় সমগ্র অস্তিত্বকে? যেমন আশুতোষবাবু ও উমাদেবীর সংসারে শূন্যতাই একমাত্র সত্য। অপরাধবোধ আর একাকীত্ব নিয়ে দিন কাটে আশুতোষের। তবু কাউকে তো ঘুরে দাঁড়াতেই হয়। তাই উমাই উদ্যোগ নিয়ে চৈতন্যপুরে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে পান্থনিবাসের আতিথেয়তায় মুগ্ধ বন্দোপাধ্যায় দম্পতির দেখা হয়ে যায় পান্তুয়ার সঙ্গে। পান্তুয়ার বাবা-মা নেই, সে কাকা-কাকিমার কাছে অনাদরে মানুষ। পান্থনিবাসে বেড়াতে আসা ঝালদাদু ও মিষ্টিদিদুনকে তার খুব পছন্দ হয়ে যায়। যদিও পান্তুয়ার এই যখন তখন এসে হাজির হওয়াটা আশুতোষ মোটেও পছন্দ করেন না।
উমার ইচ্ছা অনাথ পান্তুয়াকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার। কী হবে তারপর? আশুতোষ কি কোনওদিন মেনে নেবেন পান্তুয়াকে? এই কাহিনী নিয়েই আসতে চলেছে পরিচালক রাজা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি ‘পান্তুয়া’। অভিনয়ে রয়েছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, আরাত্রিকা বিষয় রজতাভ দত্ত, সোমা বন্দোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, মেঘনা হালদার, সুমিত সমাদ্দার, শুভাশিস, সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়, সঞ্জয় বিশ্বাস। গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ছবির শিল্পীরা।
আরও পড়ুন: ফাগুন লেগেছে বনে বনে
উমার চরিত্রে অভিনয় করছেন লিলি। “এই ছবিতে আমরা কলকাতার বাসিন্দা,” বললেন লিলি। “আশুতোষ আর উমার জীবনে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এই দুর্ঘটনার জন্য আশুতোষ নিজেকে দায়ী করে। সেই গ্লানি থেকে তাকে বার করার জন্য উমা তার স্বামীকে জোর করেই বেড়াতে নিয়ে যায় এক গ্রামে।”
বর্তমান পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগে? “আমি শুধু জানি কাজ করলেই ভালো থাকব। তুলনা করে কী হবে। যে যার নিজের মত করে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। আমার তো দিব্যি ভালো লাগে কাজ করতে,” বললেন লিলি।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
পরাণ রয়েছেন এই ছবিতে আশুতোষের ভূমিকায়। নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, “চরিত্রটা অবশ্যই গতানুগতিক, তবে শেষে একটা টুইস্ট আছে। রোজ-রোজ তো আর দারুণ চরিত্র পাওয়া যায় না। তবে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যে সব ছবি করছে আমি তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।”
ছবির নামভূমিকায় রয়েছেন আরাত্রিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই তাঁর প্রথম ছবি। যদিও তিনি আপাদমস্তক শহুরে তবু গ্রামের মেয়ের চরিত্রে মানিয়ে নিতে কোনও অসুবিধা হয়নি বলে জানালেন। “নামভূমিকায় থাকেলও আসলে ছবিটা সকলকে নিয়েই। পান্তুয়া খুব দুষ্টু মিষ্টি একটা মেয়ে। বাবা-মা না থাকার ফলে সে কারও কাছে সেভাবে ভালোবাসা পায়নি। এই দাদু-দিদাকে সে খুব ভালোবেসে। ছবিতে সবাই বড় শিল্পী। সবার কাছেই কাজ শিখেছি আমি,” জানালেন আরাত্রিকা।
‘ভূতের ভবিষ্যত’ ছবিতে গুছাইতের চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সঞ্জয়। এই ছবিতে তাঁর চরিত্রের নাম মাধব। সে আশুতোষ-উমার সর্বক্ষণের সঙ্গী। “মাধবের ওপর বাড়ির যাবতীয় ব্যাপারে এই দুজন ভরসা করেন। এমনকি সিন্দুকের চাবি নিয়ে বেড়াতে গেলেও কর্তা ফোন করে খোঁজ নেয় কেউ সেটা খুলেছিল কিনা। কিছু মজার দৃশ্য আছে। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর একটা ছবি হতে চলেছে, বললেন সঞ্জয়।”
ছবিতে সুমিতের চরিত্রের নাম ভোলা। “আমি পান্থনিবাসের একজন পরিচারক। ছবিতে একটা ক্রাইসিস আছে, আর তার থেকে উত্তরণও আছে, যেটা এই ছবির মূল আকর্ষণ।”
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
ছবি নিয়ে কী বলছেন পরিচালক? “গত দুটো বছরের অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে একা বাঁচা যায় না। সেই সময়েই এই গল্পটা আমার মাথায় আসে। একাকীত্ব মানুষকে কতটা অসহায় করে দেয়, যাঁরা এখনও মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরে বাঁচেন তাঁদের কাছে জীবনের অর্থ ঠিক কী, সেই সবকিছু নিয়েই এই ছবি,” জানালেন রাজা।
ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এম তীর্থ। ছবির গানগুলি গেয়েছেন ইন্দ্রানী সেন, নচিকেতা চক্রবর্তী, অভিজিৎ (পটা) বর্মন, রূপঙ্কর বাগচী ও অন্যেরা। পরিচালনার পাশাপাশি ছবির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও গানগুলি লিখেছেন রাজা। চিত্রগ্রহণে রয়েছেন সুশান্ত ঘোষ ও গৌরাঙ্গ মিত্র।
সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেতে পারে ‘পান্তুয়া’।