মোবাইল ফোনে জীবন্ত কাশীর ঘাট, অলিগলি

সিরিজ়: বারাণসী জংশন

পরিচালনা: অর্ণব রিঙ্গো বন্দোপাধ্যায়

অভিনয়ে: অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, জিতসুন্দর চক্রবর্তী, যুধাজিৎ সরকার, ঋদ্ধীষ চৌধুরী, কোরক সামন্ত, অভিজিৎ সেনগুপ্ত, অরূপ জাইগিরদার, মহম্মদ করীম, অগ্নীভ বন্দোপাধ্যায়, প্রতীক রায়

দৈর্ঘ্য: ৫ পর্ব

ওটিটিক্লিক

RBN রেটিং ★★★★★★★☆☆☆

‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান’। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে কথাটা যেমন সত্যি তেমনই বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন শহর বারাণসী বা কাশীর ক্ষেত্রেও তাই। অগণিত মানুষ, যার কেউ এ শহরের পুরনো বাসিন্দা, কেউ বা ট্যুরিস্ট, কেউ তীর্থযাত্রী, কেউ সাধু, কেউ হয়তো চোর, আবার কেউ বা ভিখারী। সকলেই এসে জড়ো হয়েছে ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’। এত মানুষের সমাগমে প্রতিদিন গমগম করে কাশীর ঘাট, মন্দির, জলপথ আর গোধূলিয়ার রাস্তা। রাতের অন্ধকারে এই বারাণসীই আবার অন্য রূপ ধরে। 



বন্ধু র‌্যাক্সিটের (ঋদ্ধিশ) ডাকে সাড়া দিয়ে, কাশীর ঘাট নিয়ে ভিডিও বানাতে বারাণসী এসেছিল ব্লগার রণদীপ (জিতসুন্দর)। প্রথম রাতেই তার চোখের সামনে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর অপরাধ। ঘাবড়ে যায় রণদীপ। ওদিকে টেলিভিশন চ্যানেলে নিখোঁজ সুপ্রিয়ার (অমৃতা) ছবি দেখে তাকে খুঁজে দিতে সাহায্য করতে চায় রণদীপ। তবে তাতে করে যেন তার হিতে বিপরীত হয়ে যায়। এবার কোথায় পালাবে সে? কোন রহস্যের খোঁজে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সাংবাদিক সুপ্রিয়া?

আরও পড়ুন: ৩৪ বছর পর একসঙ্গে ‘রামায়ণ’ জুটি

পবিত্র দেবভূমিতে পাপের ব্যবসা ফেঁদে বসা কয়েকজন ভয়ঙ্কর অপরাধীর গল্প ‘বারাণসী জংশন’। এই সিরিজ়ের মূল আকর্ষণই হলো মোবাইল ফোনে পাঁচটি পর্বের শুটিং। সিরিজ়টি ভালো লাগার অন্যতম কারণ হলো এর চিত্রগ্রহণ। নিজে চিত্রগ্রাহক হওয়ায় রিঙ্গোর প্রতিটি কাজে সেই সংক্রান্ত নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা থাকেই। এই সিরিজ় যত না গল্পের সূক্ষ্মতার কারণে আলোচিত হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি চর্চায় থাকবে বারণসীকে পর্দায় এমন জীবন্ত তুলে ধরার জন্য। আকাশ থেকে তোলা ড্রোন শটে কাশীর ঘাটের দৃশ্য দেখে মুগ্ধতা কাটতে চায় না। যেমন বিস্ময়কর সেই ছবি তেমনই তার কালার কারেকশন। লোকে লোকারণ্য গঙ্গারতির দশাশ্বমেধ হোক, চিতার আগুনের উত্তাপ মাখা মণিকর্নিকা হোক বা গভীর রাতের শুনশান শহরের গলি, সর্বত্র ক্যামেরার গতিবিধি সমান। দেখতে বসে মনে হবে নিজেই যেন হেঁটে চলেছি গলির রাস্তা ধরে।

মোবাইল ক্যামেরায় রিঙ্গো যা করেছেন ততটা তিনি বড় ক্যামেরা নিয়ে পারতেন কিনা সন্দেহ। কাশীর রাস্তাঘাটের জনসমুদ্রকে একটুও প্রভাবিত না করে সিরিজ়ের শুটিং করা সহজ কাজ নয়। এমনকি যাকে বিগ স্ক্রিন ফিল বলা হয়, সেই ধরণের একাধিক লং শটেও গঙ্গা এবং বালিয়াড়ির দৃশ্য দেখতে অসামান্য লাগে। ক্যামেরার কাজ ও আলোর ব্যবহার সিরিজ়টিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। না হলে ক্রাইম থ্রিলার তো কতই হয়!

আরও পড়ুন: প্রচার ছাড়াই চতুর্থ সপ্তাহে, খুশি টিম ‘তরঙ্গ’

সিরিজ়ে রহস্য অননুমেয় নয়। মিনি সিরিজ়ের মাঝামাঝি জায়গা থেকে আন্দাজ করা যায় মূল অপরাধীর পরিচয়। তবে তাতে দেখার আগ্রহ কিছুমাত্র কমে না। কারণ ঘটনার অলিগলি এমনই যে শুধুমাত্র অপরাধীকে চিনে ফেললেই রহস্য শেষ হয় না। তবু ক্লাইম্যাক্স আরও একটু জটিল হতে পারত। ধূর্ত অপরাধীরা বাস্তবে এত সহজে হার মানে কি? যে ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য অপরাধচক্র নিয়ে গল্পের প্লট দানা বেঁধেছে, তার আরও কিছু ভয়াবহতা দেখানো যেতে পারত। তবে শুরু থেকে গল্পের জাল বিস্তার দেখতে দিব্যি লাগে। গল্পে কাশীর প্রেক্ষাপটকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। চৌষট্টি ঘাট, দশাশ্বমেধ বা সীতা হোটেল, সবটাই বাস্তব লোকেশন হওয়ায় গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে সময় লাগে না। 



অভিনয়ের ক্ষেত্রে এই সিরিজ়ে বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা গেল। তার মধ্যে অন্যতম জিতসুন্দর। এটি তাঁর প্রথম কাজ কিনা জানা নেই, তবে সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালি ব্লগারের চরিত্রে অবাক করলেন তিনি। ক্যামেরাকে প্রায় অগ্রাহ্য করে অসম্ভব সাবলীল অভিনয় ও নানারকম অভিব্যক্তির চড়াই উৎরাইতে মুগ্ধ করলেন জিতসুন্দর। আগামীদিনে আরও কাজ করবেন তিনি আশা করা যায়। সিরিয়াস চরিত্রে অমৃতা বরাবরই সমীহ আদায় করে নেন। এখানেও প্রত্যাশা পূরণ করেছেন তিনি। যুধাজিৎ, ঋদ্ধিশ, অগ্নীভ প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় যথাযথ। আলাদা করে মনে থাকবে কোরককে। স্বল্প পরিসরেও মনে দাগ কেটেছেন অভিজিৎ ও প্রতীক। 

সিরিজ়ের আবহ সঙ্গীত আগাগোড়াই গল্পের মেজাজ ধরে রাখে। সম্পাদনা স্মার্ট এবং মেদহীন। কোথাও মনে হবে না এই দৃশ্য না থাকলেও চলতো। মোট কথা, মাত্র পাঁচটি পর্বে নিটোল একটি থ্রিলার দেখতে হলে ‘বারাণসী জংশন’ হতাশ তো করবেই না বরং বেশ কিছুটা চোখের তৃপ্তিও দেবে। 

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *