চণ্ডী ও উমা, ‘মুকুট’-এ দুই রূপেই শ্রাবণী
কলকাতা: সংহারী না স্নেহময়ী, চণ্ডী না গৌরী, কোন রূপে আমরা দেখতে চাই দেবী দুর্গাকে? প্রশ্নটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। দুষ্টের দমনের জন্য দশ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল আনন্দময়ী। তারপরেও তো তিনি মা। সতের এবং অসতেরও। তবুও সুর ও অসুরের এই দ্বন্দ্বের প্রভাব এসে পড়ছে সমাজে। সবাই যেন মারমুখী। কেন?
এই প্রশ্নকে সামনে রেখেই শুরু হতে চলেছে নতুন ধারাবাহিক ‘মুকুট’। এক মৃৎশিল্পীর মেয়ে মুকুট। সে বিশ্বাস করে মা দুর্গা যেমন ভালোর তেমনই খারাপেরও। তাহলে সবসময় অস্ত্র হাতে তাঁকে কেন আগুয়ান হতে হবে? সন্তানকে ভালোবাসাই তো মায়ের ধর্ম। অস্ত্র নয়, মুকুট তাই মাকে সাজায় ফুল দিয়ে, গৌরী রূপে।
গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে ‘মুকুট’-এর চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তী বললেন, “এই প্রেক্ষাপটের পেছনে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতাও আছে। রুক্ষতা ছড়িয়ে আছে গল্পের পরতে-পরতে। সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মেয়ে চোরাচালান হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। সেই সংখ্যার দিকে তাকালে শিউরে উঠতে হয়। আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে মেয়েরা এখনও পণ্য। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
আরও পড়ুন: অতনুর ছবিতে খিটখিটে, হতাশাগ্রস্ত ‘বাল্মীকি’ প্রসেনজিৎ
এই বাস্তব পরিস্থিতি থেকেই ‘মুকুট’-এর প্লট সাজিয়েছেন স্নেহাশিস। যাকে দেবী বলা হচ্ছে সে কেন পণ্য হবে? সেও তো মা, বোন, স্ত্রী বা প্রেমিকা। সুতরাং ভালোবাসারই জয় হোক সবদিকে। মুকুটও তাই চায় গৌরী রূপে দেবী দুর্গাকে সাজাতে। এদিকে ধারাবাহিকের প্রোমো বলছে প্রয়োজনে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে দ্বিধা করে না এই মেয়ে। এক বিয়ের কনেকে ধাওয়া করা দুর্বৃত্তদের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে রুখে দাঁড়ায় মুকুট। তখনও সে জানে না একদা তার মাকেও অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। এও জানে না, এসআই বাবা পরেশ কর্মকার সব ছেড়ে পারিবারিক পেশায় কেন আত্মনিয়োগ করেছেন।
“সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য,” বললেন স্নেহাশিস। “মুকুটের জীবনেও ধেয়ে আসবে ভয়ঙ্কর বিভীষিকা। আপাতত মুকুটের মানসিকতা আর ঘটে যাওয়া বাস্তবতার মিশেলেই এগোবে ধারাবাহিক।”
‘মুকুট’-এর নামভূমিকায় থাকছেন শ্রাবণী ভুঁইঞা। এর আগে স্নেহাশিসেরই ‘মাধবীলতা’ ধারাবাহিকের নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। শ্রাবণী জানালেন, পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে চণ্ডী ও উমা, দুই রূপেই তিনি দর্শন দিতে পারেন। “তবে আমি উমারই পক্ষে,” বললেন তিনি। “মানুষকে আঘাত দিয়ে একদম কথা বলতে পারি না। কষ্ট পাই। আমি চাই সকলের ভালো হোক।”
টিম ‘মুকুট’
গল্পের অন্যদিকে আছে রায়চৌধুরী পরিবার। সেই পরিবারের ছোটছেলে রায়ান। মুকুটের সম্ভাব্য প্রেমিক। এই চরিত্রে অভিনয় করছেন অর্ঘ্য মিত্র। এর আগে টেলিভিশনে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেও নায়ক হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম কাজ। বললেন, “আমি যেমন, রায়ানও তেমন। শান্ত। একদম বদমায়েশি করে না।”
‘মুকুট’-এর বড় চমক যদি হয় পরেশ কর্মকার চরিত্রে শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে টেলিভিশনের পর্দায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা, তবে টুইস্ট হলো ‘কড়ি খেলা’র জুটি শ্রীপর্ণা রায় ও আনন্দ ঘোষকে পার্শচরিত্রে পেশ করা। ‘কড়ি খেলা’র টুসু এবার ‘মুকুট’-এর দোল। শ্রীপর্ণা বললেন, “চরিত্রের প্রধান অপ্রধান জানি না। স্নেহাশিসদা আমার পিতৃসম। উনি যে চরিত্রে কাজ করতে বলবেন, আমি সেখানেই চোখ বুজে অভিনয় করব। টুসুর মিথকে ভাঙার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত।”
আরও পড়ুন: দেবরাজ ইন্দ্রের ভূমিকায় যীশু সেনগুপ্ত
বড়ভাই আয়ানের চরিত্রে আছেন আনন্দ। এখানে তিনি পরিবারের কর্তা। বাবা নেই, মা আছেন। “ভাই, বোন, কাকা, কাকিমাদের নিয়ে একান্নবর্তী পরিবারের দায়িত্ববান ব্যক্তি আয়ান। জনপ্রিয়তার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নয়, চরিত্রের গুরুত্ব অনুযায়ী অভিনয় করার চেষ্টা করি। আয়ানের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না,” বললেন আনন্দ।
‘মুকট’-এর অন্যান্য চরিত্রে আছেন গৌরব ঘোষাল, ইন্দ্রাক্ষী দে ও সুকন্যা চট্টোপাধ্যায়।
২৭ মার্চ, সোমবার থেকে শুক্রবার, জ়ি বাংলায় রাত সাড়ে ন’টায় সম্প্রচারিত হবে ‘মুকট’।