সাদাকালো প্লটে চালিয়ে খেললেন সবাই
ছবি: সন্তান
পরিচালনা: রাজ চক্রবর্তী
অভিনয়ে: মিঠুন চক্রবর্তী, অনসূয়া মজুমদার, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, খরাজ মুখোপাধ্যায়, সোহিনী সেনগুপ্ত, অহনা দত্ত
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট
RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆
কথাতেই আছে কুসন্তান যদি বা হয়, কুমাতা কখনও নয়। প্রবাদ হিসেবে প্রাচীন হলেও বাঙালি আজও এ কথা অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলে। ব্যতিক্রম আছে, থাকবেও। তবে ব্যতিক্রমই তো নিয়মকে প্রতিষ্ঠা দেয়। কতকটা এই প্রবাদকে সামনে রেখেই তৈরি হয়েছে রাজের ‘সন্তান’। তফাত শুধু এখানে সন্তান মন্দবুদ্ধির অধিকারী, অন্যদিকে তার মাতা এবং পিতাও সন্তান অন্তপ্রাণ।
এ ছবির কাহিনি বসু পরিবারের। শরদিন্দু (মিঠুন) ও মেঘমালা (অনসূয়া) নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে একমাত্র ছেলে ইন্দ্রনীলকে (ঋত্বিক) মানুষ করেছেন। সে এখন বড় কোম্পানিতে চাকরি করে, বিশাল ফ্ল্যাটে স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে থাকে। কিন্তু বাবা-মায়ের প্রতি তার বিন্দুমাত্র টান নেই। কখনও ভুলেও খোঁজ নেয় না বাবা-মা কেমন আছে বা তাদের কোনও প্রয়োজন আছে কিনা। উল্টে মায়ের অপারেশনের ব্যাপারে বাবা পরামর্শ করতে গেলে সেটাও পরে হবে বলে সে এড়িয়ে যায়। তার কাছে নাকি মায়ের চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই। অথচ সে পরিবারকে নিয়ে ব্যাংকক বেড়াতে চলে যায় লাখতিনেক টাকা খরচ করে। দিনের পর দিন ইন্দ্রনীলের দুর্ব্যবহার সহ্য করতে-করতে একসময় শরদিন্দু তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। শরদিন্দুর হয়ে কোর্টে সওয়াল করে ইন্দ্রানী সেন (শুভশ্রী)। উল্টোদিকে ইন্দ্রনীলের পক্ষে মামলা লড়তে আসেন বিকাশ মুন্সী (খরাজ)।
ট্রেলার দেখে বোঝা গিয়েছিল ছবির গল্প কী হতে চলেছে। প্রত্যাশিত প্লট নিয়েই এগিয়েছে গল্প। ছবির বিষয় যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবু এই ধরনের গল্পে এক পক্ষকে সম্পূর্ণ সাদা এবং অন্য পক্ষকে সম্পূর্ণ কালো হিসেবে দেখানোই রীতি। সেই রীতি মেনেই একপেশে চিত্রনাট্যে এগিয়েছে ছবি। কিন্তু বাস্তবে মানুষ এতটাও একরঙা হয় কি? পরিস্থিতি এবং চরিত্রের ওঠাপড়া কি আর একটু জটিল হতে পারত না? ছবির খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় শরদিন্দু ও মেঘমালা ছেলেকে শাসন করেনি, মানুষ করতে পারেনি, তবে সেই ছেলেই পরে কী করে শুধরে যায়? নাকি সেটাও তার অভিনয়, কেস হেরে যাওয়ার কারণে?
আরও পড়ুন: বাজিকা ভাষায় প্রথম ছবি, সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন আরিয়ান
অভিনেতারা প্রত্যেকেই চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছেন। ইন্দ্রনীলের চরিত্রে ঋত্বিক সত্যিই অনবদ্য। আগাগোড়া নেগেটিভ চরিত্রে দর্শকের বিরক্ত ও রাগ উদ্রেক করতে তিনি একশো শতাংশ সফল। মিঠুন এই ছবির সবটা জুড়ে রয়েছেন। দর্শকের সহানুভূতির সমস্তটাই অনায়াসে কুড়িয়ে নেবেন তিনি। তবু মিঠুন মুম্বই এবং বাঙালির চিরকালীন নায়ক, তাঁর চেহারায় কিছুটা নায়কোচিত ব্যাপার রাখলে ভালো লাগত। মা মেঘমালার চরিত্রে অনসূয়াকে দেখতে ভালো লাগে, বরাবরের মতোই তিনি অভিনয়ে অসাধারণ। তবে মিঠুন-অনসূয়া রসায়ন পর্দায় খুব একটা রং ধরায় না।
কোর্টের দৃশ্যে নাটকীয়তা কম, বাস্তব বেশি দেখানো হয়েছে। প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কেসের সওয়াল করতে গিয়ে শুভশ্রীর যুক্তি ও স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ দেখতে ভালো লাগবে। বিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে বিকাশের চরিত্রে খরাজের খুব বেশি কিছু করার ছিল না। তবু স্বল্প পরিসরে তিনি চেষ্টা করেছেন নিজেকে মেলে ধরার। ব্যস্ত জীবনে ছেলেমেয়ে কীভাবে বাবা-মায়ের খেয়াল রাখতে পারে তার উদাহরণস্বরূপ একটা ছোট্ট নাটক করে দেখান শুভশ্রী, কোর্টের ভেতরেই। ছবির মূল বক্তব্য ও সেরা মুহূর্ত ওটাই বলা চলে। মন ছুঁয়ে যাবে ওই দৃশ্যে তাঁর অভিনয়। লতার চরিত্রে সোহিনী বরাবরের মতোই মনোযোগ টেনে নেবেন।
জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে অমিত কুমারের কণ্ঠে ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ’ গানটি শুনতে ভালো লাগে। ছবির সম্পাদনা আর একটু টানটান হলে দৈর্ঘ্য কমিয়ে দু’ঘন্টার মধ্যে রাখা যেত। তবে মধ্যবিত্ত পারিবারিক মূল্যবোধকে সামনে রেখে বাঙালি দর্শকের সমর্থন পেতে সফল হবে ‘সন্তান’। শীতের ছুটিতে বাড়ির সকলে মিলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে জমিয়ে দেখে আসবেন রাজের সাম্প্রতিক ছবি, এমনটা আন্দাজ করাই যায়।