শীতের আমেজ মেখে জমজমাট চলচ্চিত্র উৎসব
কলকাতা: দুর্গাপুজোয় শহরে জনসমুদ্র প্রতিবছরই দেখা যায়। তাই বলে নন্দন-রবীন্দ্র সদন চত্বরে কোনওদিন জনসমুদ্র দেখা গেছে কি? সেটা দেখতে হলে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আসতে হবে। দেখলে মনে হবে অকাল দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে বুঝি। একটা সময় ছিল যখন চার বছর অন্তর উৎসব হতো। কার্ড না থাকলে কাউকেই নন্দনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হতো না। সেসব এখন অতীত। চলচ্চিত্র উৎসবকে বাহ্যিক দিক থেকে আমজনতার আগ্রহের কেন্দ্রস্থল করে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কারণ এই ভিড়ে যেমন দেখা মিলবে বিদগ্ধ সিনেমাপ্রেমীর, তেমনই রয়েছেন ফিল্ম স্টাডিজ বা সাংবাদিকতার ছাত্রছাত্রীরাও।
নন্দন-১ বা ২-এ এক একটা শোয়ে মানুষ দুই রোয়ের মাঝে মাটিতে বসেও ছবি দেখছেন। তবে এর বাইরেও রয়েছে বিরাট সংখ্যক মানুষ যারা আসেন নন্দন চত্বরের সাজসজ্জা দেখতে, এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে বেড়িয়ে উৎসবের উত্তাপে হাত সেঁকে নিতে। প্রদর্শনী দেখতে আসেন প্রচুর মানুষ। কেউ আসেন একা তো কেউ পরিবার নিয়ে। কেউ বা আসেন বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে ছবি আর সেলফি তুলতে। কারণ যাই হোক না কেন, সাতদিন ধরে শহরের এই অংশে জনতার আনাগোনা বেড়ে ওঠে বিশ্ব সিনেমাকে কেন্দ্র করে। এ বড় কম কথা নয়।
আরও পড়ুন: ডেভিড হেয়ারের জীবনী প্রকাশ
বরানগর থেকে এসেছেন শুভজিৎ কর। গত কয়েকদিন ধরেই আসছেন তিনি। গতকাল রোমানিয়ার একটা ছবি দেখেছেন। আজ দেখবেন অনুরাগ কশ্যপের ‘কেনেডি’। বললেন, “আগে কলকাতায় থাকতাম না তাই সুযোগ হয়নি। এ বছর এসে বেশ ভালো লাগছে।” ছবি শুরু সন্ধ্যা সাতটায়, তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিকেল পাঁচটা থেকে। কারণ দেখাতে বললেন, “লাইনের জন্যই আগে এসেছি। অনেকেই লাইন দিয়ে ঢোকেন দেখি। কিন্তু ছবি শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আবার অনেকে চলেও যান।”
সিনেপ্রেমীদের দীর্ঘ লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো
সাংবাদিকতার ছাত্রী তানিয়া বণিক এসেছেন বেহালা থেকে। প্রতি বছরই আসেন। ‘কেনেডি’ দেখতে এসেছেন তিনিও। “আজই প্রথম এলাম। ভালো লাগে বলেই প্রতিবার আসি। তবে প্রচুর ছবি দেখা হয়ে ওঠে না। এবার অঞ্জন দত্তের ছবিটাও (‘চালচিত্র এখন’) দেখার ইচ্ছে আছে,” বললেন তিনি। আজই ছবিটা দেখানো হয়ে গেছে শুনে বেশ হতাশ হলেন তানিয়া। নজরুল তীর্থে আর একদিন দেখালেও সেখানে গিয়ে দেখা হয়ে উঠবে না বলে জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন: মৃণাল সেনের প্রদর্শনী ঘুরে গর্বিত অঞ্জন, মমতা শঙ্কর
সোদপুর থেকে স্ত্রী এবং মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সৌরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। “মেয়েকে নিয়ে এসেছি। ও প্রথমবার দেখবে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব। আমি আগেও এসেছি। তাই ওকে নিয়ে এলাম।” কীসের জন্য আসেন? এত ভিড় ভালো লাগে? “ভালো লাগে বলেই তো আসা। এই সাজানোগুলো দেখতে আসি। এগজ়িবিশনগুলো দেখি এসে, ভালো লাগে এগুলোই। এত বড় একটা বিশ্ব সিনেমার প্রাঙ্গণ, ভিড় তো হবেই। আমাদের কিন্তু এই আলো, এত সুন্দর সাজানো এগুলোই দেখতে ভালো লাগে,” বললেন সৌরেন্দ্র।
হালকা শীতের আমেজ মেখে তাই বাঙালির বার্ষিক সিনেপার্বণ জমজমাট।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য