মেওয়ারি ভাষার ছবি বিদ্যুৎ এনে দেবে প্রত্যন্ত গ্রামে
কলকাতা: কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে জনগণনায় অন্তর্ভুক্ত দেশের প্রতিটি কোণেই বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। মণিপুরের লেইসাং ছিল এ সংক্রান্ত শেষ গ্রাম। শুনতে অবাক লাগলেও, ভারতের এখনও বহু প্রত্যন্ত গ্রাম রয়ে গিয়েছে জনগণনার বাইরে, কারণ সেখানে পৌঁছনোর পথ অত্যন্ত দুর্গম। এমনই এক গ্রামের গল্প বলেছেন জিগর মদনলাল নাগড়া তাঁর ‘আ বয় হু ড্রেমট অফ ইলেকট্রিসিটি’ ছবিতে। গতকাল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন জিগর এবং প্রধান চরিত্রের অভিনেতা কুণাল মেহতা।
পশ্চিম রাজস্থানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে একুশ বছরের ভেরু। তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে। ভেরু ঠিক করে সে গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে আসবে।
বছর দশেক ধরে অনির, মণীশ গুপ্তা ও অনুরাগ কাশ্যপের মতো পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন জিগর। রাজস্থানের মেওয়ারি ভাষায় নির্মিত ৭২ মিনিটের এই ছবি প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, “আমি নিজের ভাষায় গল্পটা বলতে চেয়েছিলাম। তাই হিন্দি এবং রাজস্থানি ভাষার মধ্যে দ্বিতীয়টাই বেছে নিই। অবশ্য সেই কারণে ওটিটিতে ছবিটা যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হবে। তার কারণ হিন্দি ছাড়া অন্য ভাষায়, বিশেষ করে যেখানে রাজস্থানে প্রতিটা গ্রামের কথ্যভাষা আলাদা, সেখানে মেওয়ারির মতো একটা অপ্রচলিত ভাষায় তৈরি সিনেমা কেউ নেবে না। সেই কারণেই কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটা নির্বাচিত হওয়ায় আমাদের অনেকটা সুবিধা হলো।”
আরও পড়ুন: মৃণাল সেনের প্রদর্শনী ঘুরে গর্বিত অঞ্জন, মমতা শঙ্কর
যে গ্রামে গিয়ে জিগর শ্যুটিং করেছেন সেখানে সত্যিই কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। “আমি কোথাও সরকারবিরোধী কথা বলতে চাইনি,” বললেন জিগর। “বরং খোঁজ নিয়ে বুঝেছিলাম সরকারের পক্ষে ওই জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। কোনও প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। অন্ততপক্ষে বেশ কিছু ঘর অধিবাসী না থাকলে সেই জায়গায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যায় না। কাজেই এমন নয় যে সরকার ইচ্ছে করে এদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না।”
প্রথমদিকে শ্যুটিং করতে দিতে গ্রামের লোকজনের আপত্তি ছিল। পরে বুঝিয়ে বলায় তারা সাহায্য করেছেন বলে জানালেন জিগর। এমনকি তাদের মধ্যে থেকেই কয়েকজন অভিনেতাকেও বেছে নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: বড়দিনের লড়াইয়ে জমি ছাড়বেন না সোহম-দেব
“ছবিটা তৈরি হওয়ার পর যে বাড়িতে আমি শ্যুটিং করছিলাম, সেখানে সোলার প্যানেলের সাহায্যে একটা আলো আর পাখা চালাতে পেরেছি। এটা আমার বিরাট বড় প্রাপ্তি। এছাড়া একটি সোলার কোম্পানিও বলেছে তারা আমাদের ছবির প্রচারে অংশ নেবে এবং পরবর্তীকালে ওই গ্রামে বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান তারাই করবে,” তৃপ্তির হাসি জিগরের মুখে।
ছবি: সুফল ভট্টাচার্য