প্রাক্তন বনাম বর্তমান নয়

ছবি: অর্ধাঙ্গিনী

পরিচালনা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়

অভিনয়ে: চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, জয়া আহসান, কৌশিক সেন, লিলি চক্রবর্তী, অম্বরীশ ভট্টাচার্য

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★★★☆☆☆

‘আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি।’ জীবনে চলার পথে ফেলে আসা সব সম্পর্ক কী সত্যিই ভুলে যাওয়া যায়? নাকি সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হলেও ভোলা যায় না হাজারো মনকেমনের স্মৃতি, দায়িত্ব, কর্তব্য। সম্পর্কের রসায়নকে সেলুলয়েডে নিপুণ হাতে ফুটিয়ে তুলতে সিদ্ধহস্ত পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নতুন ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’র ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলো না। ট্রেলার দেখে প্রাক্তন ও বর্তমানের একঘেয়ে লড়াই মনে হলেও ছবি শেষ পর্যন্ত অন্য গল্প বলল।



অধ্যাপক সুমন (কৌশিক সেন) এবং স্কুলশিক্ষিকা শুভ্রার (চূর্ণী) ১৭ বছরের বৈবাহিক জীবন। আপাতদৃষ্টিতে সুখী দম্পতি মনে হলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কে চিড় ধরে একটি বিষয় নিয়েই। সন্তানহীনতার ব্যথা গ্রাস করে দুজনকেই। নিজের বন্ধ্যাত্ব সম্পর্কে অবগত হয়েও সেই দায় শুভ্রার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় সুমন। সমাজে, পরিবারে, সর্বক্ষেত্রেই শুভ্রাকে অপমানিত হতে হয়। একটা সময়ের পর সম্পর্কের ভাঙন স্পষ্ট হয় এবং দুজনে আলাদা হয়ে যায়। দীর্ঘদিনের দাম্পত্য জীবনকে বিদায় জানানোর সময় অনেক বেশি সাবলীল থাকে তারা। শুভ্রার মধ্যে কোথাও দোলাচল চললেও সব ভুলে সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

এরপর কেটে যায় দীর্ঘদিন। হঠাৎই এক দোকানে শুভ্রার চোখের সামনে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে সুমন, পাশে তখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা (জয়া)। বিবাহ বিচ্ছেদের বেশ কয়েক বছর পর পরিবারের অমতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন ধর্মালম্বী বাংলাদেশি গায়িকা মেঘনা মুস্তাফিকে বিয়ে করে সুমন। বাড়ির সঙ্গে কোনওরূপ যোগাযোগ না থাকায় শুভ্রাই উপযাচক হয়ে সুমনের ভাই সুকান্তকে ঘটনাটি জানায়।

প্রাক্তন বনাম বর্তমান

এরপরই শুরু হয় গল্পের আসল দিক। চিরকালের আপনভোলা সুমনের সঞ্চয়ের হিসেব রাখত শুভ্রা। পরের দিকে শুভ্রার তাগিদেই সুমন সবকিছু তার ব্যক্তিগত একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে শুরু করেছিল। মেঘনাকে বিয়ে করার পর সুমন সেই সব ব্যক্তিগত তথ্যর কিছুই জানায়নি। সুমনের অসুস্থতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে মেঘনা। যত তাড়াতড়ি সম্ভব স্বামীর ব্রেন অপারেশন করাতে হবে। এদিকে সুমনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, স্বা্স্থ্য বিমার ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। অবশেষে সুকান্তের মধ্যস্থতায় মেঘনা এসে উপস্থিত হয় শুভ্রার কাছে। 

আরও পড়ুন: সৌরভের বায়োপিকে অভিনেতা চূড়ান্ত?

প্রাক্তন-বর্তমানের এই পুতুলনাচের ইতিকথাকে জীবন্ত করেছে চূর্ণী ও জয়ার অভিনয়। তবু অভিনয়ে সকলকে ছাপিয়ে গেছেন চূর্ণী। প্রাক্তন স্ত্রীর উপস্থিতি শুধুই স্মৃতি নয় তার প্রয়োজন জীবনের শেষ পর্যন্ত। মেঘনার চরিত্রে জয়া যথাযথ। কয়েকটি দৃশ্যে দুজনেই সমান টক্কর দিয়েছেন। সুমনের প্রতি জমে থাকা অভিমান শুভ্রা উগরে দেয় মেঘনার ওপর। যদিও সুমন-শুভ্রার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য কোনওভাবেই দায়ী নয় মেঘনা। শেষপর্যন্ত এমন এক কঠিন সত্য উন্মোচিত হয় যেখানে নিজের শান্ত স্বরূপ ধরে রাখতে পারে না মেঘনা। এই ছবির ক্ষেত্রে এই দৃশ্যটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: ‘মাসুম’-এর সিক্যুয়েল করবেন শেখর?

সুমনের ভূমিকায় কৌশিক সেন যথাযথ। লিলি, অম্বরীশ দুজনেই নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। যথেষ্ট সিরিয়াস দৃশ্যের মধ্যেও অম্বরীশের দু’-তিনটি সংলাপ আনন্দ দেয়। ছবির গান সেভাবে দাগ কাটে না।

‘অর্ধাঙ্গিনী’র আসল সম্পদ এর কাহিনি ও চিত্রনাট্য। এর জন্য কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশংসা প্রাপ্য। প্রাক্তন- বর্তমানের সংসারের দড়ি টানাটানি খেলার উর্ধ্বে গিয়ে বাস্তব সমস্যা নিয়ে ছবি করেছেন তিনি। দমবন্ধ হয়ে, অশান্তি করে এক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার থেকে দুজনের আলাদা হয়ে যাওয়া কোনও অপরাধ নয়। তবে জীবনে দ্বিতীয়বার কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে তাকে নিজের কিছু ব্যক্তিগত তথ্যও জানানো উচিত। এ ছবি প্রাক্তন বনাম বর্তমান নয়। চিরাচরিত প্রেম-অপ্রেমের সাংসারিক টানাপোড়েনের জাঁতাকল থেকে বেরিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা নির্মিত ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী’।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *