ভাইরাল ভিডিও ও একটি রাত

RBN Web Desk: বাড়ির মূল দরজায় পা রাখতেই চিৎকারটা শোনা গেল। একটা মেয়ের গলা। আর তারপরেই ধমক, ‘তাই বলে এরকম করে চিৎকার করবে! তুমি আর কিসে-কিসে ভয় পাও বলো তো?’ নিচ থেকেই গলার আওয়াজটা শোনা যাচ্ছিল। সেটা অনুসরণ করে এগোতেই দৃশ্যটা চোখে পড়ল।

বিশাল বড় এক রাজবাড়ি। পলেস্তারা খসে যাওয়া দেওয়াল আর মাথার ওপরে শতাব্দী প্রাচীন কড়িকাঠ দেখে এ বাড়ির বয়স আন্দাজ করা যায়। মাঠ আর দালান পেরিয়ে একফালি ঘোরানো সিঁড়ি পার করে ওপরের বড় ঘরে পৌঁছলে দেখা যাবে সেখানে আধো অন্ধকারে এক প্রৌঢ়ের সামনে দুই হাত বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসে রয়েছে কলেজপড়ুয়া মেয়ে আরু। প্রৌঢ়ের চেহারা সাধারণ। পাঞ্জাবি, পায়জামা আর চাদর গায়ে দেওয়া এক ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালি। আরুর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। প্রৌঢ় নির্লিপ্ত। তিনি আপাতত খেতে ব্যস্ত। আরুকে জিজ্ঞাসা করলেও সে খেতে রাজি হলো না। ওদিকে আচমকা কোনও প্রাণী তার পায়ের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ায় আরু এমন চিৎকার করে ওঠে যে চমকে লোকটির হাত থেকে খাবার পড়ে যায়।

ধমকে ওঠে লোকটি, ‘কী হলো?’

‘ইঁদুর,’ ভয়ে-ভয়ে উত্তর দেয় আরু।

‘তাই বলে এরকম করে চিৎকার করবে! তুমি আর কিসে-কিসে ভয় পাও বলো তো? ভূতে তো ভয় পাও জানি। ইঁদুরেও ভয় পাও, আবার অন্ধকারেও পাও!”

প্রৌঢ়ের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ঘরের ভেতরে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা একরত্তি আলোটাও নিভে যায়। ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে আরু। 

আরও পড়ুন: ১৩ লক্ষ পেরোল অরুণা আর্যর ‘লাজ়মি’

না, এ বাস্তবের কোনও অপহরণকারীর ডেরা নয়। এই দৃশ্য দেখা গেল পরিচালক সাগ্নিক (সমু) চট্টোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ় ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’-এর সেটে। লোকেশন ছিল বারুইপুর রাজবাড়ি। সিরিজ়ে অভিনয় করছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রেমো, শ্রীতমা দে, দীপ দে, ঈপ্সিতা কুন্ডু, ভাস্কর দত্ত, রোহিনী চট্টোপাধ্যায়, সোমনাথ ভট্টাচার্য, প্রিয়দর্শিনী দাশগুপ্ত ও অয়ন্তিকা পাল। অভিজ্ঞ অভিনেতার সঙ্গে একঝাঁক নতুন ও চেনা মুখের শুটিং দেখতে সেদিন সেটে হাজির হয়েছিল রেডিওবাংলানেট। 

রাজবাড়ির একপ্রান্তে যখন কৌশিক ও ঈপ্সিতার দৃশ্যের কাজ চলছে তখন শীতের দুপুরে ছাদের ওপর পাওয়া গেল দীপ, শ্রীতমা ও রেমোকে।




“এই সিরিজ়ে আমার চরিত্রের নাম রুবেন,” জানালেন দীপ। “চারজন বন্ধু ভিকি, আরু, শিরিন আর রুবেন প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানায়। তাদের নিজেদের একটা চ্যানেল আছে। সেখানে তারা নতুন ধরণের প্র্যাঙ্ক করে দর্শকদের চমকে দেয়। প্রচুর লোক সাবস্ক্রাইব করে। তারা আরও নতুন চমক দেওয়ার জন্য আরও ভয় দেখানো ভিডিও বানাবার প্ল্যান করে।” থিয়েটার অভিনেতা দীপের এটাই প্রথম ওয়েব সিরিজ়।

“শিরিন আর রুবেনের চরিত্রটা একটু বেপরোয়া,” জানালেন শ্রীতমা। “চার বন্ধু মিলে প্র্যাঙ্কেনস্টাইন নামক চ্যানেলটা শুরু করে। চারজন প্রকৃতিতে চার রকম। কেউ খুব মাথাগরম করে আবার কেউ অন্যদের চালনা করে।”

আরও পড়ুন: অস্কারে মনোনীত নবাগত বাঙালি পরিচালকের ছবি

শ্রীতমাকে থামিয়ে দিয়ে রেমো বললেন, “ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে যা চারজন বন্ধু কোনওদিন ভাবা তো দূর, তাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই। চারটে চরিত্রের চাররকম রং আছে যেটা তাদের পোশাকে দেখা যাবে। তারা লোককে চমকে দিলেও তাদের সঙ্গে যা ঘটতে থাকে ওই প্র্যাঙ্কের ভয়ের চেয়ে চারগুণ।”

সাগ্নিকের ওয়ার্কশপ খুব কাজে লেগেছিল বলে জানালেন শ্রীতমা। “তাছাড়া কাজ করার সময় সাগ্নিকদা পূর্ণ স্বাধীনতা দেন, খুব ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সামলান। তাই কাজটা এমনিই অনেক সহজ হয়ে যায়,” বললেন শ্রীতমা।

কৌশিকের সঙ্গে কাজ করা এক স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ঘটনাই বলে মনে করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ

শটের শেষে পাওয়া গেল ঈপ্সিতাকে। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার সদ্য প্রাক্তনী জানালেন, “আরু চরিত্রটা ভীতু টাইপের। অন্ধকার আর ভূতে খুব ভয় পায়। কৌশিকদার সঙ্গে একই দৃশ্যে অভিনয় করা বিরাট একটা ভাগ্যের ব্যাপার তো বটেই, তবে আমি চেষ্টা করি আমার জন্য যেন ওনার কোনও অসুবিধা না হয়। তবে এত বড় একজন অভিনেতা কিন্তু আমার যতবার ভুল হয়েছে ধৈর্য ধরে বসে কিউ দিয়েছেন।” 

প্রথমবার কোনও ওয়েব সিরিজ়ের কাজের প্রসঙ্গে কৌশিক জানালেন, “এটার জন্য রাজি হলাম কারণ অভিনয়টা করতে ভালোবাসি। আর এরকম একটা চরিত্র খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে আমি সাগ্নিকের কাজে কখনও নাক গলাই না, মনিটরও দেখি না। এটা ওর ভাবনা, তাই ও যেমন চাইছে সেইভাবেই কাজটা করার চেষ্টা করছি।” 



সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর কালো চাদর গায়ে কৌশিকের চরিত্রটির কোনও নাম নেই এই সিরিজ়ে। তবে নাম না থাকলেও হাতে থাকবে একটা নাইনএমএম পিস্তল। 

“ভাইরাল শব্দটার সঙ্গে এখন সকলেই পরিচিত। যে কোনও উপায়ে, যা খুশি করে ভাইরাল হতে চায় প্রায় সকলেই। লোকের সঙ্গে প্র্যাঙ্ক করা হলো অন্যতম একটি উপায়। মানুষকে চমকে দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে এক অদ্ভুত আনন্দ পাওয়া যায়, এমনকি যার সঙ্গে করা হলো অনেকসময় তারও সেটা ভাল লাগে। এখান থেকেই আমার সিরিজ়ের গল্প শুরু,” জানালেন সাগ্নিক। 

আরও কিছুদিন চলবে শুটিং। ‘ক্লিক’ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’।

ছবি: প্রতিবেদক



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *