মনোরঞ্জনের মোড়কে প্রথা ভাঙার বার্তা

ছবি: জনহিত মে জারি

পরিচালনা: জয় বসন্তু সিং

অভিনয়ে: নুসরত ভরুচা, অনুদ সিং ঢাকা, বিজয় রাজ, ব্রিজেন্দ্র কালা, টিনু আনন্দ, পরিতোষ ত্রিপাঠী, সুকৃতি গুপ্ত

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ২৭ মিনিট

RBN রেটিং: ৩.৫/৫

সাহিত্য এবং চলচ্চিত্র বরাবরই সমাজের দর্পণের ভূমিকা নেয়। ‘তাসের দেশ’ হোক বা ‘অচলায়তন’, তাঁর একাধিক লেখায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজের সঙ্কীর্ণ চিন্তাধারা অতিক্রম করে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন। ভারতের একাধিক ভাষায় বহু ছবি হয়েছে যা ঘুণধরা সমাজকে বদলানোর কথা বলে। আসলে সমাজ ব্যবস্থা অনেকটা বহমান নদীর মতো চিরকালীন। তাই বহু বছর ধরে চলে আসা সমাজের কিছু চিন্তাভাবনাকে বদলানো আবশ্যক। সেই উদ্দশ্যেই জয় বসন্তু তৈরি করেছেন ‘জনহিত মে জারি’।



একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে যৌনতা, কন্ডোম, পিরিয়ডস এই শব্দগুলো উচ্চারণে এখনও বহু মানুষের অস্বস্তি। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিষের মধ্যে কন্ডোমও একটি পণ্যমাত্র। সেখানে আজও দোকানে গিয়ে একজন পুরুষ যদি স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনেন বা কোনও মহিলা কন্ডোম কিনতে চাইলে আশপাশে চোখগুলো কপালে উঠে যায়।

এই প্রশ্নগুলোকেই সহজভাবে তুলে ধরে ‘জনহিত মে জারি’। ভারতের এক ছোট্ট শহরের মেয়ে মনোকামনা ত্রিপাঠী (নুসরত) ডবল এমএ পাশ করে চাকরি খুঁজছে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বাড়ির বড় মেয়ে মনোকামনা। ফলত দিবারাত্র বাবা-মা তাকে বিয়ের চাপ দিতে থাকে। কিন্তু মনোকামনা ওরফে মন্নু বদ্ধপরিকর। নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে কিছুতেই বিয়ে করবে না । এ হেন পরিস্থিতিতে সে এক কন্ডোম কোম্পানিতে সেলস এগজ়িকিউটিভের চাকরি পায়। মাসে চল্লিশ হাজার টাকা বেতনের লোভে এবং বিয়ের চাপ থেকে মুক্তি পেতে চাকরির প্রস্তাব গ্রহণ করে মন্নু। কিন্তু একজন মেয়ে রাস্তায় ঘুরে-ঘুরে দোকানে-দোকানে কন্ডোম বিক্রি করবে? এ তো মেয়েটির লজ্জা! পরিবারের লজ্জা! সমাজের লজ্জা!

আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ

ছবির বিষয় সাধারণ কথাবার্তায় কন্ডোম ব্যবহার নিয়ে ছুঁতমার্গ হলেও, ‘জনহিত মে জারি’ আরও বেশ কয়েকটি বাস্তব সমস্যা তুলে ধরে। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বহু সংস্থা নামমাত্র পারিশ্রমিকে কর্মী নিয়োগ করে। একটি ছোট্ট দৃশ্যের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিচালক। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সবসময় স্বামীকেই রোজগার করতে হবে, এই ধারণাতেও আঘাত হানে ছবিটি।

মন্নুর ভূমিকায় নুসরতের অভিনয় প্রশংসনীয়। এ ধরণের একটি চরিত্রে অভিনয় করতে যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন। টিনু, বিজয়, ব্রিজেন্দ্র নিজেদের সাবলীল অভিনয় দিয়ে মন জয় করেছেন। মন্নুর স্বামী রঞ্জন প্রজাপতির চরিত্রে অনুদ যথাযথ। সবচেয়ে ভালো লাগে দেবীপ্রসাদের চরিত্রে পরিতোষকে। কী সহজ সরল অভিনয় দিয়ে গোটা ছবিতে মুগ্ধ করলেন তিনি। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে হারিয়েও হাত ছাড়েননি তিনি।

আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান

ছবি বানানোর ক্ষেত্রে যে সবসময় একঝাঁক নামকরা অভিনেতার প্রয়োজন হয় না তা প্রমাণ করল এই ছবি। রাজ শান্ডিল্যের চিত্রনাট্য সুন্দর, ছিমছাম। ছবির সঙ্গীত কোনওভাবেই গল্পকে ব্যহত করে না। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, ছবির মূল গল্প কোনওভাবেই দিকভ্রষ্ট হয়নি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বসন্তু তাঁর বক্তব্যে স্থির। কোনওরকম অস্বস্তিকর দৃশ্য ছাড়াই একটি ‘বড়দের ছবি’ বানিয়ে ফেলার জন্য পরিচালককে সাধুবাদ। তবে ছবির দৈর্ঘ্য কিছুটা কম হলে ভালো হতো। মাঝের বেশ কিছু দৃশ্য বাদ গেলেও গল্পে তার কোনও প্রভাব পড়ত না।

পারিবারিক মেলোড্রামা এবং থ্রিলারের বাইরে মনোরঞ্জনের মোড়কে প্রথা ভাঙার বার্তা দেওয়া এই ছবি একবার অন্তত দেখা উচিৎ।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *