ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী পণ্যময়
ছবি: দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট
পরিচালনা: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: ঋত্বিক চক্রবর্তী, বিশ্বনাথ বসু, প্রিয়াঙ্কা মন্ডল
দৈর্ঘ্য: ১৮ মিনিট
RBN রেটিং: ৩.৫/৫
প্রতিটি মানুষ তাঁর নিজের মতো করে ভাব প্রকাশ করে। কেউ প্রতিবাদে মুখর হয়, কেউ বা রোষের ভয়ে কথাই বলে না। প্রতিবাদীরা বেশিরভাগই একটা সময়ের পর স্রোতে গা ভাসালেও, উজানমুখী কিছু মানুষ নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করেই যান। সে প্রতিবাদ যখন পরিচিতি পায়, তখন মানুষ নতুন খেলনা পাওয়ার মতো কিছুকাল তাকে মাথায় তুলে রাখলেও, পরে অন্য কিছু পেলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে কসুর করে না। জীবনের এই উপজীব্যকে ভিত্তি করেই ফ্রানজ় কাফকা লিখেছিলেন ‘এ হাঙ্গার আর্টিস্ট’। কাফকার সেই গল্প অবলম্বনেই কমলেশ্বরের নতুন স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট’।
এই ছবিতে মূল চরিত্র তিনটি। কেন্দ্রীয় চরিত্র ভুতো, ওরফে ভূতনাথ মালাকার (ঋত্বিক), যে কোনও আন্তর্জাতিক সমস্যার প্রতিবাদে অনশন করে। সারা বিশ্বে সমস্যার তো অন্ত নেই! ফলে ক্রমে সেই অনশন তার গা সওয়া হয়ে যেতে থাকে। ভুতোর অনশনের, বলা ভালো দীর্ঘদিন না খেয়ে বাঁচতে পারার ‘প্রতিভা’কে আবিস্কার করে তার বন্ধু ঘনা (বিশ্বনাথ)। চতুর ব্যবসায়ী বুদ্ধিসম্পন্ন ঘনা বুঝতে পারে, চটজলদি টাকা কামিয়ে নেওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ তার হাতের কাছেই রয়েছে। ভুতো শিল্পী, এই ধারণা বন্ধুর মনের মধ্যে রোপণ করে ঘনা। ভুতোর অনশনকে সে ব্যবসার পণ্যে পরিণত করে। এক সাংবাদিক (প্রিয়াঙ্কা) বোঝানোর চেষ্টা করলেও ভুতো ততদিনে নিজেকে পুরোদস্তুর একজন শিল্পী ভাবতে শুরু করেছে। সে নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। সে শিল্পী! আর শিল্পীদের নিরন্তর প্রদর্শন করে যেতে হয়। জনজাতির এক অমোঘ অভ্যাসকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন কমলেশ্বর।
আরও পড়ুন: কলকাতায় শ্যুটিং সারলেন পরেশ রাওয়াল, সত্যজিৎ রায়ের গল্প?
‘দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট’ যেন কোনও একাঙ্ক নাটক। প্রতিটি দৃশ্যপট এবং সেখানে ব্যবহৃত প্রতিটি খুঁটিনাটি এক একটি রূপক হিসেবে দেখানো হয়েছে। ঋত্বিকের সঙ্গে বিশ্বনাথের প্রতিটি দৃশ্য উপভোগ্য। ‘উড়ো চিঠি’র পর আবারও কমলেশ্বরের ছবিতে নিজের জাত চেনালেন বিশ্বনাথ। ঋত্বিক তাঁর স্বভাবসিদ্ধ অভিনয়গুণে দুর্দান্ত। সাংবাদিকের ভূমিকায় প্রিয়াঙ্কা যথাযথ।
অদীপ সিং মানকি এবং অনিন্দিত রায় নিপুণ দক্ষতায় আবহ নির্মাণ করেছেন। এই আবহই অনেক কথা বলে যায়। মনোজ মিশ্রের চিত্রগ্রহণ ও সুজয় দত্ত রায়ের সম্পাদনাও যথাযথ।
বাজার অর্থনীতিতে সবই যখন পণ্য, তখন ক্ষুধাই বা বাদ যায় কেন? প্রহসনের মাধ্যমে সেটাই দেখালেন কমলেশ্বর।