নির্যাতিতার প্রতি সমাজের মানসিকতার আসল চেহারা দেখাবে ‘ইতি ভালবাসা’

RBN Web desk: নারীর অধিকার নিয়ে সবাই এখন অতিরিক্ত সচেতন। ঘরে বাইরে নারীর কোনওরকম নির্যাতনই মেনে নেওয়া যায় না, এ কথাও সকলেই জানেন। নির্যাতিতা বা ধর্ষিতা নারীর জন্য লেখা হয় কয়েক হাজার ফেসবুক পোস্ট, দরকারে মোমবাতি মিছিলেও হাঁটতে পারেন শয়ে-শয়ে মানুষ। কিন্তু সেই নারী যদি নিজের বাড়ির বা পাড়ার কেউ হয়? তখন কতটুকু সহানুভূতি বা মানসিক সমর্থন পায় সে? একটি মেয়েকে শুধু একটি শরীর হিসেবে না দেখে একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে পারে কতজন?

মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণা আঁকড়ে বেঁচে থাকা এই সমাজ ও তার দৃষ্টিভঙ্গির আসল চেহারা নিয়ে পরিচালক সুমিত দাস তৈরি করেছেন তাঁর আগামী ছবি ‘ইতি ভালবাসা’। ছবির বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দেবলীনা কুমার, ঈশান মজুমদার, শতরূপা সেনগুপ্ত, অভিরাজ দাশগুপ্ত, ঐন্দ্রিলা ঘোষ, বোধিসত্ত্ব মজুমদার, মৌসুমী সাহা, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, মল্লিকা সিংহ রায় ও ছন্দা চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: ‘সারেগামাপা’ বিতর্কে ইতিবাচক দিকও খুঁজে পাচ্ছেন রূপঙ্কর

রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে ইন্দ্রাণী। সে ও নিলয় একে অপরকে ভালোবাসে। এদিকে নিলয়ের জন্মদিনের রাতে রাস্তার মাঝে ইন্দ্রাণীকে ধর্ষণ করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। আচমকা পাল্টে যায় নিলয়ের ভালোবাসা। সে এই অবস্থায় ইন্দ্রাণীকে গ্রহণ করতে নারাজ। তার পরিবারও এ ব্যাপারে একমত। পরিচিত সমস্ত জায়গায় যেন ইন্দ্রাণীর জন্য সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়। পাড়ায় বা আত্মীয়মহলে সে এখন খারাপ মেয়ে। মানুষের মনে করুণা ছাড়া তার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। একমাত্র নীলাদিকে পাশে পায় ইন্দ্রাণী। সঙ্গীত শিক্ষিকা নীলাদি ইন্দ্রাণীকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দিগন্তর কাছে নিয়ে যান।

এদিকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে নিলয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আচমকা দু’দিক থেকে আসা আঘাত ইন্দ্রাণীকে ভেঙেচুরে দেয়। দিগন্ত কি তাকে সারিয়ে তুলতে পারবে? আবার কি কখনও ঘুরে দাঁড়াবে ইন্দ্রাণী? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে ‘ইতি ভালবাসা’।

আরও পড়ুন: কলকাতার বুকে ক্যাফে থিয়েটারের অভিনব প্রয়াস

ছবিতে দিগন্তর ভূমিকায় রয়েছেন ঈশান। তিনি জানালেন, “একটা মেয়ে যখন ধর্ষিতা হয় তখন তার শারীরিক কষ্ট তো থাকেই, তবে তার চেয়েও অনেক বেশি থাকে মানসিক ক্ষত। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর চেনা মানুষগুলো যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেটা তার কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্টের হয়ে ওঠে। সেই জায়গায় একজন মনোবিদের ভূমিকা কী হতে পারে, বা কীভাবে সে ইন্দ্রাণীর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়, সেটাই এই কাহিনীর মূল ঘটনা। আমার পরিচিত এক মনোবিদকে দেখে তার কাজের পদ্ধতি বোঝার চেষ্টা করেছি।”

এই মুহূর্তে এই ছবির প্রাসঙ্গিকতা যে অনস্বীকার্য সে কথা দর্শকমাত্রেই মানবেন বলে মনে করেন সুমিত। ২০১৯-এ ছবির কাজ শেষ হয়ে গেলেও করোনা অতিমারীর কারণে ছবিটি এতদিন আটকে ছিল। “একটা মেয়ে ধর্ষিতা হলেই সমাজের মুখোশগুলো একে-একে খুলে যায়। কেউ তার পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসে না। এমনকি যে ছেলেটি একসময় তার জন্য প্রাণ দিতে পারত সেও পরিবারের দোহাই দিয়ে দূরে সরে যায়। অথচ একসময় সেই ছেলেটির বিপদের দিনে কিন্তু এই মেয়েটিই তার পাশে দাঁড়ায়। কীভাবে ইন্দ্রাণী সুস্থ হয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে সেটাই এই ছবির বিষয়বস্তু বলা যায়। ধর্ষণ নিয়ে ছবি এর আগেও হয়েছে। ‘দহন’-এ আমরা দেখেছি কীভাবে একটা মেয়ে একদিনের এক ঘটনার জন্য সমাজে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এই ঘটনাগুলো আমাদের খুব চেনা। এই ছবির ক্লাইম্যাক্সটা বলে দেবে যে এভাবেও গল্পটা হতে পারত।”




মুখে যে যতই প্রযুক্তির বুলি আওড়াক, আসলে বেশিরভাগ মানুষের চিন্তাভাবনা সেই প্রাচীনকালেই পড়ে আছে বলে মনে করেন সুমিত। “অচেনা একটি মেয়ের জন্য সহানুভূতি দেওয়া যতটা সহজ, নিজের লোকের সঙ্গে সেই ঘটনা ঘটলে আমরা সবটা সহজভাবে নিতে পারি না। সেই মানসিক সাপোর্টটাও আর দিতে পারিনা,” জানালেন সুমিত।

ছবির কাহিনী শতরূপার, চিত্রনাট্য লিখেছেন সুমিত। চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন চয়ন কর্মকার, সম্পাদনায় অমিত দেবনাথ। ছবিতে সুরারোপ করেছেন দেবজিত রায়।

৩০ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ইতি ভালবাসা’। 



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *