সব থেকে অপছন্দের বিষয়ে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়েছিল গিরিশ: অপর্ণা

কলকাতা: তাঁর সব থেকে অপছন্দের বিষয় ছিল অঙ্ক অথচ তাতেই ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন গিরিশ কারনাড, এমনটাই জানালেন বিশিষ্ট পরিচালক অপর্ণা সেন। ১০ জুন বেঙ্গালুরুতে প্রয়াত হন প্রখ্যাত এই নাট্যকার ও অভিনেতা।

সম্প্রতি কলকাতায় গিরিশের এক স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অপর্ণা বলেন, “টেলিভিশনে যখন প্রথম ওঁর মৃত্যু সংবাদটা শুনি, আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘না, আপনি যেতে পারেন না।’ আমার মনে হয় আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান যে গিরিশের কার্যকালে থাকতে পেরেছি এবং তিনি ভারতবর্ষে তাঁর মূল কাজগুলি করেছেন। তাঁর মত পন্ডিত মানুষ পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে গিয়ে কাজ করতে পারতেন।”

‘যযাতি’, ‘তুঘলক’, ‘হায়বদন’ ও ‘নাগমন্ডলম’-এর মত নাটকের রচয়িতা গিরিশ দেশে-বিদেশে বহু সম্মান পেয়েছেন। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, জ্ঞানপীঠ ও সঙ্গীত নাটক আকাদেমী পুরস্কারও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এছাড়াও পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে পেয়েছেন চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার।

এখনও অনেক পথ চলা বাকি: অমিত কুমার

অপর্ণার স্মৃতিচারণায় উঠে এল গিরিশের বিষয়ে নানান কথা। “আমি গিরিশকে প্রথম দেখি স্ক্রীনে। ‘সংস্কারা’ ছবিটা দেখে আমি গিরিশের প্রেমে পড়ে গেছিলাম। যেভাবে ভক্তরা অভিনেতার প্রেমে পড়ে আর কি,” বললেন অপর্ণা।

গিরিশের জন্ম নিয়ে একটি ঘটনার কথা শোনালেন ‘পরমা’র পরিচালক, “যখন গিরিশের মা দু-তিনমাসের সন্তানসম্ভবা, তখন তিনি ভেবেছিলেন গর্ভপাত করাবেন। সেটা সম্ভব হয়নি কেন না যে ডাক্তারের এটা করার কথা ছিল তিনি সেই সময় অনুপস্থিত ছিলেন। পরে যখন তিনি ফিরলেন ততদিনে গিরিশের মা তাঁর মত পাল্টে ফেলেছেন। এই ব্যাপারটা  নিয়ে গিরিশ নিজেও ভেবেছিলেন পরে। ‘এই পৃথিবীর সবকিছু থাকত অথচ আমি সেখানে থাকতাম না,’ বলতেন গিরিশ।”

“গিরিশের জীবনে তাঁর মায়ের ভুমিকা ছিল অপরিহার্য,” বললেন অপর্ণা। “প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি গিরিশের বাবাকে বিয়ে করেন। খুব উদারমনস্ক মহিলা ছিলেন গিরিশের মা। বাবার সঙ্গে নানান জায়গায় ঘুরতেন গিরিশ। ওই বয়সে শোনা পুরাণের গল্প, লোকনাট্য এই সবকিছুই ওঁর মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। ভালো ছাত্র হিসেবে গিরিশের ইচ্ছে ছিল বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার। সেই সময় শুধুমাত্র স্কলারশিপ পেলেই বিদেশে যাওয়া সম্ভব ছিল আর তার জন্য ফার্স্টক্লাস পেতে হত। কিন্তু সাহিত্য, ইতিহাস বা ভুগোলে ফার্স্টক্লাস পাওয়া বেশ কঠিন। একমাত্র অঙ্কে ফার্স্টক্লাস পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। তাই গিরিশ তাঁর সব থেকে অপছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হলেন। ফলে স্কলারশিপও জুটে গেল এবং তিনি বিলেত গেলেন ।”

বাচ্চাদের নাচের রিয়্যালিটি শো নিয়ে সতর্ক করল কেন্দ্রীয় সরকার

পড়াশোনা ছাড়াও বিলেতে ছবি আঁকা ও ইংরেজি কবিতায় আগ্রহী হয়ে উঠলেও মা-বাবার ইচ্ছায় এক সময় দেশে ফিরে আসেন গিরিশ এবং কন্নড় ভাষায় নাটক লেখা শুরু করেন। এই সময় তিনি ‘যযাতি’ লেখেন, যদিও তখনই  তা প্রকাশিত না হওয়ায় তিনি আবার অক্সফোর্ডে ফিরে যান। সেখানে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অক্সফোর্ডে থাকাকালীন গিরিশ খবর পান ‘যযাতি’ প্রকাশিত ও মঞ্চস্থ হয়ে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছে।

“‘যযাতি’র সাফল্য অনেকাংশেই গিরিশকে তাতিয়ে দেয়। তখন তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ফেরার সময়  জাহাজে বসে গিরিশ রচনা করেন ‘তুঘলক’। সেই নাটককে তিনি পাঠকের কাছে একেবারে অন্যভাবে উপস্থাপন করেন। ‘তুঘলক’ বিভিন্ন ভাষায় বিরাট সাফল্য পায় ও গিরিশ জাতীয় ক্ষেত্রে বিখ্যাত নাট্যকার হয়ে ওঠেন,” বললেন অপর্ণা।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *