হাতি নিয়ে দেবদূত ঘোষের ভালোবাসার ছবি ‘আদর’
RBN Web Desk: বাংলা ছবিতে ইদানিং গোয়েন্দা ও পুলিশের দাপটে ক্লাসিক সাহিত্যিনর্ভর ছবির অবস্থা প্রায় দুয়োরানির মতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাদে প্রায় অস্পর্শিত এক বিশাল বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডার অবহেলায় পড়ে রয়েছে। সেই অমূল্য ভাণ্ডার থেকেই দেবদূত ঘোষ তুলে এনেছেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘আদরিনি’কে। বহুপঠিত এই কাহিনি নিয়েই দেবদূত তৈরি করেছেন তাঁর নতুন ছবি ‘আদর’। অভিনয়ে রয়েছেন রজতাভ দত্ত, তুলিকা বসু, প্রদীপ চক্রবর্তী, বাসবদত্তা বন্দোপাধ্যায়, বিপ্লব বন্দোপাধ্যায়, মানসী সিংহ, আল্লারাখা কলাবন্ত, তমাল রায়চৌধুরী ও আরও অনেকে। একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী এবং অবশ্যই মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে জয়মালা নামে একটি হাতি। সম্প্রতি মুক্তি পেল ছবিটির ট্রেলার।
মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সামান্য একটা হাতি চাওয়ায়, জমিদার গিন্নির ব্যবহারে আঁতে ঘা লাগায় আইনজীবী জয়রাম মুখার্জি জেদের বশে একটি হাতি কিনে ফেলেন। জীবনের প্রায় সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে কেনা সেই হাতির নাম তিনি রাখেন আদর। দিনে-দিনে বাড়ির সকলের অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে আদর। এমনকি পাড়ার সকলকেও আনন্দে ভরিয়ে রাখত হাতিটি। কিন্তু জয়রামের নাতনির বিয়েতে যৌতুক দেওয়ার জন্য যখন অর্থাভাব দেখা দিল তখন সকলেই পরামর্শ দিল এই অবস্থায় আদরকে বিক্রি করে অর্থের ব্যবস্থা করতে। জয়রাম এবার কী করবে?
আরও পড়ুন: পাল্প ফিকশন লেখক শ্রীস্বপনকুমারের ভূমিকায় পরাণ
ছবিতে জয়রামের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রজতাভ। তিনি জানালেন, “আমি যে ধরণের চরিত্র সাধারণত করে থাকি তার থেকে একেবারে আলাদা একটা চরিত্র দিয়েছে দেবদূত। এর জন্য ওকে ধন্যবাদ।”
ইদানিং বাংলা সাহিত্য নিয়ে কাজ হচ্ছে না বলে যে আফসোস দেখা যায়, সেই প্রসঙ্গে রজতাভ বললেন, “গত কয়েক বছরে পৃথিবী এতটাই বদলে গেছে যে পুরোনো দিনের গল্প নিয়ে কাজ করতে গেলে যে খরচটা হবে, সেটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে পাওয়া সহজ নয়। সেই কঠিন কাজটাই করেছে দেবদূত। আস্ত একটা এলাকা খুঁজে বার করা এবং সেই পঞ্চাশের দশককে ফিরিয়ে আনা, এটা যে কত বড় পাহাড় তোলা সেটা যারা ছবির কাজ করেন তারাই জানেন। এমন একটা প্রাণীকে নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছে যেটা সাধারণ কুকুর বা বেড়াল নয়, একটা হাতি, যাকে নিয়ে কাজ করা আজকের দিনে সত্যিই কঠিন। সব মিলিয়ে ছবিটা সত্যিই বড়পর্দার মতো করেই করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: ‘মাসুম’-এর সিক্যুয়েল করবেন শেখর?
বাসবদত্তা রয়েছেন এক গ্রাম্য বধূর চরিত্রে। তিনি জানালেন, “একটা হাতির সঙ্গে কাজ করতে হবে কোনওদিন ভাবিনি। প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিলাম। তবে আস্তে-আস্তে ব্যাপারটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমার অভিনীত চরিত্রটা দেবদূতদা এমন করে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে কোনও অসুবিধা হয়নি। রনিদাও অনেক জায়গায় খুব সাহায্য করেছে। আমি সবসময়ই সাহিত্যনির্ভর ছবিতে কাজ করতে চাই। তাই এই ছবিটাকে ঘিরে একটা আলাদা ভালোলাগা থাকবেই।”
তাছাড়া শ্যুট করতে গিয়ে এমন সব ঘটনা ঘটেছে যে কারণে ছবিটা চিরকাল মনে থাকবে বলে জানালেন বাসবদত্তা।
আরও পড়ুন: মুক্তি পেল ‘নীহারিকা’র টিজ়ার
“আমি পশুপ্রেমী। তাই পশুদের ওপর অত্যাচার হতে দেখলে মানসিকভাবে খুব আঘাত পাই। ওদের এলাকায় আমরা যেভাবে ঢুকছি, রেললাইন পাতছি, রাস্তা বানাচ্ছি, আবার ওদের ওপরেই অত্যাচার করছি, তাতে আমার মনে হয় ছোটদের জন্য এরকম ছবি আরও তৈরি হওয়া দরকার যেখানে খুব কম বয়স থেকে অন্য প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারটা ওরা বুঝতে শিখবে,” বললেন দেবদূত।
বন্যপ্রাণী নিয়ে শ্যুট করার মধ্যে নানারকম সমস্যা থাকে। তবু এরকম একটা বিষয় নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের কমফর্ট জ়োনকে চ্যালেঞ্জ করার একটা আনন্দ আছে বলে মনে করেন দেবদূত। “আর আমি হাতি ভালোবাসি। তাই এই গল্পটাকে বেছে নেওয়া,” বললেন তিনি।
হাতি নিয়ে শ্যুটিংয়ের অনুমতি পেতে এবং সবটা শেষ করতে তিনবছর সময় লেগেছে। সময়ের সঙ্গে সেই ঋতু পরিবর্তনও দেখা যাবে ছবিতে।
“হাতির মুড বুঝে আমাদের কাজ করতে হতো,” জানালেন দেবদূত। “জয়মালার প্রতিদিন একশো লিটার জল আর দেড়শো লিটার খাবার লাগত। সে মাঝেমধ্যেই খাবারের খোঁজে জঙ্গলে ঢুকে পড়ত। তবে বন্যপ্রাণী নিয়ে শ্যুট করতে গিয়ে ত্রিপুরা সরকারের তরফে গৌতম দাস ও মানিক সরকার এবং কেন্দ্রের তরফে রূপাদি (গঙ্গোপাধ্যায়) আমাকে সাংঘাতিক সাহায্য করেছেন। ওই লাল ফিতের গিঁট না খুললে কাজটা আদৌ করতে পারতাম না।”
ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন দেবদূত নিজেই। সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। ছবিতে সুর দিয়েছেন তন্ময় বসু এবং সম্পাদনায় আছেন অর্ঘ্যকমল মিত্র।
২৩ জুন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ‘আদর’।