ঠেকায় পড়ে তদন্তে, অঞ্জনের নতুন গোয়েন্দা ড্যানি
কলকাতা: পুরোনো এক বাড়ির অন্ধকার একটা অফিস। একটা মাত্র টেবিল, আর দুটো চেয়ার। টেবিলের পিছনে একটা হ্যাঙ্গারে ঝুলছে মান্ধাতা আমলের একটা লং কোট আর হ্যাট। সামনের টেবিলে জরুরি ফাইল, কাগজপত্র, টেলিফোন, পেন স্ট্যান্ড আর জলের বোতলের সঙ্গে একটা পানীয়ের বোতলও রাখা। এটাই প্রাইভেট ডিটেকটিভ ড্যানি ব্যানার্জির অফিস। ডিটেকটিভ বললেই যেমন দারুণ তুখোড় ও স্মার্ট কোনও সর্বগুণসম্পন্ন ব্যক্তির কথা মাথায় আসে, ড্যানি ঠিক তার উল্টো। কেসও তেমন আসে না। সাধারণ কেস, যেমন বিয়ের আগে ছেলের চালচলন কেমন তার খোঁজ নেওয়া, কিংবা স্বামী বা স্ত্রীর পরকীয়ার প্রমাণ জোগাড় করে দেওয়া, এসব ছোটখাটো কেসে কুড়ি-পঁচিশ হাজার টাকা জুটলেই ড্যানির চলে যায়। তার প্রতিদ্বন্দী ক্যামাক স্ট্রিটের গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোও একই ভাবে চলে, অন্তত ড্যানির তাই বক্তব্য। ড্যানির সেক্রেটারি সুব্রত শর্মা। গোয়েন্দাগিরিতে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। সে একসময় চাকরির খোঁজে এসেছিল। তারপর ঠেকায় পড়ে ড্যানির কাছে গোয়েন্দাগিরির অ-আ-ক-খ শিখতে হয় তাকে। তবে সুব্রত ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। কোনও এক জায়গায় বাঁধা পড়া তার স্বভাবে নেই।
এহেন ছাপোষা মধ্যবিত্ত ড্যানির ‘অফিসে’ গতকাল হাজির হয়েছিল রেডিওবাংলানেট। ড্যানি ও সুব্রতর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত। ড্যানিদের আগামী কেস নিয়েই অঞ্জনের নতুন ওয়েব সিরিজ় ‘ড্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’। মুক্তি পেল ট্রেলার। ড্যানির ভূমিকায় থাকছেন অঞ্জন নিজে। তার সেক্রেটারি তথা পরবর্তীকালে এজেন্সির মূল গোয়েন্দা সুব্রতর ভূমিকায় রয়েছেন সুপ্রভাত দাস। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন বরুণ চন্দ, অঙ্কিতা চক্রবর্তী, সমদর্শী দত্ত ও সুদীপা বসু।
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান
“ড্যানি কখনওই ব্যোমকেশ বক্সী বা ফেলুদা নয়,” স্পষ্ট করে দিলেন অঞ্জন। “সে এক সময় পুলিশে চাকরি করতো। পরে সেই চাকরি ছেড়ে নিজস্ব এজেন্সি খোলে। ড্যানির গল্পগুলো আমার লেখা হয়ে গেছে। সেগুলো বইয়ের আকারেও প্রকাশ পাবে। তবে আগে মানুষ সিরিজ়ের মাধ্যমে ড্যানিকে চিনুক, সুব্রতকে জানুক। তারপর তাদের নিয়ে লেখা গল্পগুলো আসবে।”
ড্যানি ও সুব্রতর কাহিনী নিয়ে তিনি ২০১৯ থেকে চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানালেন অঞ্জন। “২০১৮-তে আমি ঠিক করি আর ব্যোমকেশ করব না। তখন মনে হয়েছিল নিজের একটা গোয়েন্দা সিরিজ় শুরু করব। শুরুতে গল্প হিসেবেই ভেবেছিলাম। বই হিসেবে বেরোবে ভেবেই লেখা। গতবছর ভাবি আগে সিরিজ়টাই হোক। এটাই আমার সৃষ্ট শেষ গোয়েন্দা চরিত্র। তবে সুব্রতকে নিয়ে পরবর্তীকালে আরও গল্প আসবে,” জানালেন অঞ্জন।
আরও পড়ুন: হিন্দি ছবিতে মাইক টাইসন
সিরিজ়ের ট্রেলারে দেখা যায় ড্যানি মারা যাচ্ছে। তাহলে আগামী সিজ়নে ড্যানিকে কীভাবে পাওয়া যাবে? “ড্যানি বেঁচে থাকাকালীন যেভাবে সুব্রতকে কাজ করতে শিখিয়েছে, সেগুলো সে ভুলে যেতে পারে না। ড্যানি অ্যালকোহলিক, লম্পট, খারাপ লোক হলেও তার শিক্ষাটা সুব্রত মনে রেখে দেয়,” জানালেন অঞ্জন। “সুব্রত ড্যানিকে মরতে দেয় না। বরং মৃত বসের বলে যাওয়া কথাগুলোকে সঙ্গী করে এগিয়ে যায়। এরকম কোনও গোয়েন্দা যার পার্টনার বা বস মৃত, এটা বিদেশি গল্পেও নেই। সুব্রত যেভাবে পরিস্থিতির চাপে রহস্যসন্ধানী হয়ে ওঠে, সেটাও যে কোনও গোয়েন্দা কাহিনীতে একেবারেই নতুন।”
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
সুব্রতর চরিত্র তাঁর কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল বলে জানালেন সুপ্রভাত। এ জন্য পরিচালকের কাছে কৃতজ্ঞ তিনি। “গোয়েন্দা সম্পর্কে সকলের যা ধারণা থাকে সুব্রত তার থেকে একেবারেই আলাদা। সে কোনও দিক থেকেই সুপারহিরো নয়। বরং সে একটু পাড়ার দাদা গোছের যাকে একটু উস্কে দিলেই লড়ে যায়। সুব্রত কখনওই গোয়েন্দা হতে চায়নি। কিন্তু ড্যানির মৃত্যুটা ওকে তদন্তে নামতে বাধ্য করে।”
কোনও গোয়েন্দা চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছে যেমন সব অভিনেতার মধ্যেই থাকে, তেমন সুপ্রভাতের মধ্যেও ছিল। “আমাকে ভেবে অঞ্জনদা গল্প লিখবেন এটা আমার কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি। কখনও ভাবতে পারিনি এরকম কোনও সুযোগ আমি পাব,” জানালেন সুপ্রভাত।
অন্য গোয়েন্দাদের মতো সুব্রতর জীবনেও কি ভালোবাসা নেই? উত্তরে সুপ্রভাত জানালেন, “ভালোবাসা অবশ্যই আছে, নারীও আছে। কিন্তু কোনও গতে বাঁধা সম্পর্কে সুব্রত আটকে থাকতে পারে না। সে বেড়াতে ভালোবাসে। মানিকতলার কেসে যদি বেশি টাকা দেয়, ওদিকে শিলং থেকে কোনও কম টাকার কেস আসে, সুব্রত দ্বিতীয়টাই নেবে। সে কোনও বন্ধনে আটকাতে নারাজ। তাই তার জীবনে প্রেম ভালোবাসা কখনওই স্থায়ী হয় না।”
সিরিজ়ের চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন প্রভাতেন্দু মণ্ডল। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন নীল দত্ত। দীপাবলির সময়ে ক্লিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ‘ড্যানি ডিটেকটিভ আইএনসি’।