হারিয়ে যাওয়া চিঠির দিন ফেরাবে ‘ডাকঘর’
কলকাতা: সব কথা কি মুখে বলা যায়? দূরের মানুষকে মনের সব অনুভূতি কী টেলিগ্রাম বা টেলিফোনে বোঝানো যেত? বা এমন কোনও খবর যা হয়তো মুখে বলা মুশকিল? সে যুগে চিঠিই ছিল এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর। ইন্টারনেট-পূর্ব নিস্তরঙ্গ শান্ত জীবনে একটা চিঠির মূল্য ছিল অনেকখানি। হারিয়ে যাওয়া সেই চিঠির যুগের নস্টালজিয়া নিয়ে আসছে পরিচালক অভ্রজিত সেনের নতুন ওয়েব সিরিজ় ‘ডাকঘর’। অভিনয়ে রয়েছেন সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, দিতিপ্রিয়া রায় ও কাঞ্চন মল্লিক। গতকাল সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁরা।
শান্ত সাদাসিধে এক গ্রাম হাগদা। বড় সরল জীবনযাপন করে এখানকার মানুষ। একে অন্যের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়ে দিন কাটায় তারা। এ গ্রামেই পোস্টমাস্টারের শূন্য চেয়ার পূরণ করতে আসে দামোদর দাস (সুহোত্র)। পোস্টঅফিসে জমা হওয়া চিঠির বান্ডিলগুলোর এবার হিল্লে হবে ভেবে উল্লসিত গ্রামের লোকজন। কিন্তু তারপর? মঞ্জরীর (দিতিপ্রিয়া) সঙ্গে তার সম্পর্ক নাকি দামোদরের অতীত, কোন ঘটনা এগিয়ে নিয়ে যাবে সিরিজ়কে?
আরও পড়ুন: আসছে ‘কান্তারা’র প্রথম ভাগ
“এই সিরিজ়ের গল্পটা যতটা ইমোশনাল, আমাদের ক্যামেরার পেছনের গল্পটাও ঠিক ততটাই ইমোশনাল ছিল,” বললেন দিতিপ্রিয়া। “প্রত্যেকটি চিঠির সঙ্গে একটা করে গল্প জুড়ে আছে। খুব মিষ্টি একটা সিরিজ়। একটা এপিসোড দেখলে বাকিগুলো না দেখে থামা যাবে না এটুকু বলতে পারি।”
সুহোত্রের মতে, “আমরা যারা শহরের মানুষ, তারা কিন্তু খুব জটিল। গ্রামের মানুষ অনেক বেশি সরল। এই সিরিজ়টা দেখলে ওই হাগদা গ্রামের চরিত্রগুলোকে দর্শক ভালোবাসতে বাধ্য হবেন।”
আরও পড়ুন: গিরিশচন্দ্র ঘোষের ভূমিকায় এবার কৌশিক
কাঞ্চন রয়েছেন পোস্টমাস্টারের সহকারী মধুসূদনের চরিত্রে। “একটা চিঠি কীভাবে একজন মানুষের জীবন পাল্টে দিতে পারে, এটা ‘ডাকঘর’ দেখলে বোঝা যাবে। এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে এই সিরিজে়র এক একটা ঘটনা চোখে জল এনে দেবে। ডাকঘরের প্রতিটা না পৌঁছনো চিঠি অনেক গল্প বলবে। এটা সপরিবারে, একসঙ্গে দেখার মতো একটা সিরিজ় হতে চলেছে,” বললেন কাঞ্চন।
“আমি নিজে যদিও শহুরে তবু গ্রাম নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে,” বললেন অভ্রজিত। “একটা সময় গ্রামে প্রচুর ঘুরতে গেছি। তাই গ্রামবাংলা আমার কাছে একটা নস্টালজিয়া। যদিও এই সিরিজে়র গল্পটা কোন সময়ের সেটা কোথাও বলা হয়নি, তবু ধরে নেওয়া যায় তখন মোবাইল ফোন সেভাবে আসেনি। এই গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল।”
হাগদার মানুষের কাছে চিঠিটাই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম বলে জানালেন অভ্রজিত। সেই গ্রামের পোস্ট অফিস অনেকদিন বন্ধ হয়ে পড়ে থাকার পরে দামোদরের আগমন ঘটে। “দামোদর আসার পর সেই না পৌঁছনো চিঠিগুলো যখন এক-এক করে খোলা হতে থাকে সেগুলো পেয়ে গ্রামের মানুষের আনন্দ, দুঃখ এবং অনেক না-বলা গল্প উঠে আসে, যেটা দামোদরের নিজের জীবনের ওপরেও প্রভাব ফেলে,” জানালেন পরিচালক।
আরও পড়ুন: গোয়েন্দার অবতারে আসছেন করিনা
‘ডাকঘর’-এর শুটিং হয়েছে বর্ধমানের একটি গ্রামে। গ্রাম্য আমেজকে মাথায় রেখেই সিরিজ়ের চিত্রগ্রহণ বা শব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানা গেল।
সিরিজ়ের কাহিনী লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। চিত্রগ্রহণে রয়েছেন শান্তনু মণ্ডল (শান)।
২৪ ফেব্রুয়ারি হইচইতে মুক্তি পাবে ‘ডাকঘর’।
ছবি: স্বাতী চট্টোপাধ্যায়