উপকরণ থাকা সত্বেও রান্নাটা জমল না

ছবি: চেজ়—নো মার্সি টু ক্রাইম

পরিচালনা: শুভেন্দু ঘোষ

অভিনয়ে: মুস্তাক খান, গুলশন পান্ডে, গার্গী পাটেল, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, সমীক্ষা গৌর, অমিত শেঠি, দীপাঞ্জন বসাক

দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৫২ মিনিট

RBN রেটিং: ১.৫/৫

অনেক সময় উপযুক্ত সবরকম উপকরণ থাকা সত্বেও রান্নাটা ঠিক জমে না। নুন কম বা ঝাল বেশি খাবার যেমন উপাদেয় হয় না ঠিক তেমনই হজম হল না শুভেন্দু ঘোষের ‘চেজ়—নো মার্সি টু ক্রাইম’।

ছবির গল্প শুরু হয় একটি ট্রেন ডাকাতির মাধ্যমে। ভেলোরে একটি ট্রেন থেকে লুট হয়ে যায় ৯০ কোটি টাকা। এই ঘটনার পেছনে অঙ্গুলিহেলন ছিল ঝাড়খণ্ডের দুই বাহুবলী শৈলেন্দ্র যাদব ও সত্যেন্দ্র যাদবের। বাবা শৈলেন্দ্র তার ছেলে সত্যেন্দ্রর রাজনীতিতে টিকিট পাওয়ার ইচ্ছাকে পূরণ করতে এই ডাকাতি করায়। কিন্তু অন্যায় করে পার পায় না তারা। মন্ত্রীর নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তের ভার এসে পরে কলকাতা পুলিশের ওপর। শুরু হয় অপরাধীদের পিছনে দৌড়।




কান টানলেই মাথা আসে তাই প্রথমে পুলিশের টোপে গ্রেফতার হয় সত্যেন্দ্রর শাকরেদ লল্লন। ধীরে ধীরে পুলিশ মাকড়শার জাল ছড়াতে থাকে ও তাতে আটকা পরতে থাকে শৈলেন্দ্র, আনোয়ারের মত জঘন্য অপরাধীরা। কিন্তু ধরতে ধরতেও পিছলে বেরিয়ে যায় সত্যেন্দ্র। পাড়ি দেয় ব্যাংককে তার কাকা মহেন্দ্র যাদবের কাছে। ওড়িশা থেকে ঝাড়খণ্ড, নেপাল থেকে ব্যাংকক পর্যন্ত ধাওয়া করার পর ধরা পড়ে অপরাধী সত্যেন্দ্র ও তার কাকা।

আরও পড়ুন: বড় পর্দায় অপু হয়ে আসছেন অর্জুন

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘চেজ়’-এ খামতি অনেক। একটি হিন্দিভাষী ছবিতে বাঙালি অভিনেতাদের দিয়ে প্রথমেই বাংলায় সংলাপ কেন বলানো হল সেটাই বোঝা গেল না। এরপর পুনরায় সেই সংলাপ হিন্দিতে ডাব করানো হল যা পর্দায় দেখলে বিরক্তির উদ্রেক হতে বাধ্য। কিছু কিছু জায়গায় অবশ্য বিশুদ্ধ বাংলা সংলাপ ছবিটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ বিশ্লেষণ করেছে যা মানানসই। তবে ছবির বেশিরভাগ দৃশ্যই দর্শকদের বিশেষ ভাবনার সুযোগ দেবে না। কোথাও কোথাও নীরজ পান্ডে পরিচালিত ‘বেবি’ ছবির হালকা ছায়াও চোখে পরল ‘চেজ়’-এ। হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গটিও ছবিতে অপ্রয়োজনীয়। সুন্দর লোকেশনগুলিকে  সুযোগ মত ব্যবহার করতে পারেননি চিত্রগ্রাহক অরবিন্দ নারায়ণ দলাই। ছবির দৈর্ঘ্যও অহেতুক বাড়ানোর ফলে অধৈর্য হয়ে পড়বেন দর্শক।

অভিনয় নিয়ে সেভাবে হতাশ করেননি কেউ। যেখানে ছবির গল্প ও পরিচালনা দুর্বল, সেখানে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকলেও বিশেষ কোনও লাভ হয় না। মন্ত্রীর ভূমিকায় মুস্তাক খানের বিশেষ কিছু করার ছিল না। আইপিএস অফিসার অবিনাশের চরিত্রে সুদীপ তাঁর দাপট বজায় রেখেছেন। পুলিশ অফিসার ইমরানের ভূমিকায় দীপাঞ্জন বসাক বেশ স্বপ্রতিভ। এছাড়া সত্যেন্দ্রর ভূমিকায় অমিত শেঠি চরিত্র অনুযায়ী মানানসই।

আরও পড়ুন:  স্মরণে কিশোর, ২৭ বছর পর শহরে আসছেন লীনা

ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বব এস এন, রোহন পাঠক এবং পিনাকি বোস। কুমার শানুর কণ্ঠে ‘হর খুশি তেরে বিন’ ব্যতীত কোনও গানই বিশেষ মনে রাখার মত নয়। বেশ অনেকদিন পর নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গানের জগতে ফিরলেন শানু।

বাংলার কর্তব্যপরায়ণ পুলিশকর্মীদের কথা বলে ‘চেজ়’। দিনের পর দিন যাঁরা নিজেদের জীবন, পরিবারের কথা না ভেবে, জাতপাত, ধর্মের উর্দ্ধে গিয়ে দেশের জন্যে লড়াই করেন, তাঁদের জন্য এই ছবি। তবুও যেন একদল যোগ্য অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং একটি ভালো অ্যাকশন থ্রিলারের উপাদান থাকা সত্বেও ছবিটি অসম্পূর্ণ থেকে গেল। দু ঘন্টা দৌড়েও শেষমেশ জিততে পারল না ‘চেজ়’। দুর্বল পরিচালনা এর অন্যতম কারণ। পরিচালক হিসেবে এটি শুভেন্দুর দ্বিতীয় ছবি। প্রথম ছবি ‘শূন্যতা’র পরেও নিরাশ করলেন তিনি। এরপরেও পর্দায় পুলিশের সাহসিকতা দেখার ইচ্ছে হলে, একবার অন্তত ‘চেজ়’ দেখাই যায়।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *