তবু সেই কিন্তুটা থেকেই গেল

ছবি: দৃষ্টিকোণ

নির্দেশনা: কৌশিক গাঙ্গুলি

অভিনয়ে: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, চূর্ণী গাঙ্গুলি, কৌশিক সেন, কৌশিক গাঙ্গুলি

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ২০ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

‘অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো।’ সেই আলো যা কিনা অন্ধজনে পথ দেখায়, নতুন করে বাঁচতে শেখায়, তারাও এই একই কথা হয়ত বলেন বা ভাবেনও। এক যুগের অবসানে তারা আজ আর ‘প্রাক্তন’ নন। চেনা রসায়নে অচেনা সম্পর্ককে দেখার ‘দৃষ্টিকোণ’ তারাই তৈরি করেন। কাণ্ডারি কৌশিক গাঙ্গুলি।

দুবছর পর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আবার এক ফ্রেমে, ছবির নাম দৃষ্টিকোণ। প্রত্যাশার পারদ কলকাতার আবহাওয়ার চেয়েও বেশি চড়েছিল। নায়ক নায়িকার পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলির সাথে প্রথম কাজ। শোনা গেছিল এ ছবি সম্পর্কের কথা বলবে। দেখলামও তাই।

কিন্তু খটকা একটা থেকেই গেল।

স্বামীর (কৌশিক সেন) মৃত্যুর তদন্তের কিনারা করতে শ্রীমতী (ঋতুপর্ণা) গেলেন উকিল জিয়নের (প্রসেনজিৎ) কাছে। কাজের তাগিদেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ল। গায়ে পড়ে ভাব জমালেন শ্রীমতী জিয়নের পরিবারের সাথে। শুধুমাত্র কেসের কিনারা পেতে এত কাছে আসা? সন্দেহ দানা বাঁধে রুমকির (চূর্ণী গাঙ্গুলি), মানে জিয়নের স্ত্রীর মনে। আর হবে নাই বা কেন? ওকালতি বিদ্যে তো তারও জানা। যদিও শ্রীমতীর দৃষ্টি শুধুই জিয়নের চোখের কোনে, মনে মনে তারও কাছাকাছি উকিলমশাই।

তাশি গাঁওয়ে একদিন

শুধু জিয়ন নয়, রুমকি ও তাদের দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ে শ্রীমতির। এমনকি, অতি অল্প পরিচয়ে তারা দু-তিনদিনের জন্য পুরী বেড়াতে চলে যান। আর তার পরেই একাকী শ্রীমতি প্রায় আত্মসমর্পণ করে জিয়নের কাছে, একান্তে হোটেলের ঘরে। ভালোমানুষ জিয়ন কিন্তু তখনও বেশ সংযত। একদিকে খুনের কিনারা, আর একদিকে পরকীয়া। এখানেই ইন্টারেস্টিং হয়ে ওঠে এই গল্প। প্রাক্তনের মতই এ ছবির মূল আধার প্রেম। তার সঙ্গে কৌশিকের নিজস্ব স্টাইলে থ্রিলার কক্‌টেল পরিবেশন।

পরিচালকের অন্য বিকল্পধারার ছবিগুলির মতই কি দৃষ্টিকোণ?

প্রেমের পাপে

না, তা হয়তো বলতে পারব না। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় প্রসেনজিৎ–ঋতুপর্ণা ছাড়া আর কেউ এ ছবিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারত না এই সময়ে। ম্যানারিজ়ম, স্টাইল, অভিব্যাক্তি সব দিকেই জিয়ন এবং শ্রীমতী একে অন্যকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। চূর্ণী সাবলীল সব ফ্রেমে। নায়ক নায়িকার ঘনিষ্ঠতার রসায়ন চিত্রনাট্যের দাবি মেনে চাহিদা পূরণ করেছে দর্শকের। তবু সেই কিন্তুটা থেকেই যায়। প্রশ্ন উঠল, জিয়ন যেভাবে তদন্ত করল, তাতে তার উকিল হবার খুব দরকার ছিল কি? একটা দৃশ্যেও তো তাকে কোর্টরুমে ওকালতি করতে দেখা গেল না।

ঘটনা ও বিশ্লেষণের স্তরগুলোও সাধারণ দর্শকের কাছে কিছুটা ধাঁধার মতো লাগতে পারে। তা আরও স্পষ্ট হতে পারত।

সত্যজিৎ ও রেলভূত

ছবিতে গানের ব্যবহার নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। অনুপম রায়ের সুর ভাবায় আর ভালো লাগায়। ‘আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি’  বুকে ধাক্কা  দেয়। কিন্তু রূপঙ্করের গাওয়া গানটি বোধহয় ওইভাবে ব্যবহার না করলে ছবির খুব একটা ক্ষতি হত না।

কৌশিক গাঙ্গুলি তার ছবির চরিত্রগুলির মানসিকতা বিশ্লেষণে বরাবরই খুব যত্নবান। তাই দর্শকের দৃষ্টিকোণটাও যেন প্রতি মুহূর্তে পালটে যায়। ত্রিকোণ প্রেমের খেলা, থ্রিলারের উত্তেজনা, ঝকঝকে ক্যামেরা, সম্পাদনা, সবটাই বেশ ভালো লাগে। রহস্য সমাধানের পরবর্তী জিয়ন-শ্রীমতীর দৃশ্য ফ্ল্যাশব্যাক মনে করায়। শ্রীমতীকে চেনার দৃষ্টিকোণ বদলে যায়, কিন্তু পূর্ণতা পায় না কেন? হল থেকে বেড়িয়ে বুঝতে হয়, আমরা সাদা চোখে যা দেখি, সবসময় সেটা সত্যি নয়। কিন্তু সেই সবকিছু মন ছুঁয়ে যায় না। কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি। গল্পে, অভিনয়ে চমক আছে। কিন্তু আত্মা ছুঁতে না পারায় বেশ কিছুটা ফাঁক থেকেই গেল।

Amazon Obhijaan

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
41

Jeena

Workaholic, romantically challenged, and suffering from UTS (unstoppable talking syndrome). The wanton explorer. Maybe a walk on a frozen lake, placing my feet where they have never been before. Nonformal, tounge-in-cheek sometimes.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *