জমজমাট, তবু অনেক ফাঁক রয়ে গেল

ছবি: বগলামামা যুগ যুগ জিও

অভিনয়ে: খরাজ মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত, কৌশিক সেন, অপরাজিতা আঢ্য, বিশ্বনাথ বসু, ঋদ্ধি সেন, দিতিপ্রিয়া রায়, রেশমী সেন, সুমিত সমাদ্দার, নরেন ভট্টাচার্য, সন্দীপ ভট্টাচার্য

পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট।

RBN রেটিং: ★★★★★☆☆☆☆☆

বগলামামা নামটি বাংলা সাহিত্যে অত্যন্ত কম চর্চিত। অন্তত বাকি দাদাদের তুলনায় তো বটেই। বিশাল বপু, পাতলা হয়ে আসা কেশ, ঢোলা খাকি প্যান্ট, সব মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যায় মানুষটি বেদম হাসির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এহেন একটি চরিত্র নিয়ে কাজ করা মুখের কথা নয়। ধ্রুব সেটাই করে ফেললেন।



কাহিনির প্রেক্ষাপট আশির দশকের শেষভাগ। মফস্বল এলাকার থিয়েটারপ্রেমী ও সব ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করা বগলাচরণ ভট্টাচার্য, অন্য এক এলাকার আধা-গুন্ডা ফেলু আচার্যির থেকে থিয়েটারের বরাত পান। পরপর দুবার স্থানীয় হেডমাস্টারের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে হেরে ফেলু তখন জিততে মরিয়া। বগলাচরণ ও তার দলবল মঞ্চস্থ করে ‘কীচক বধ’। ওদিকে হেডমাস্টারের দল নামাতে চায় ‘সিরাজদ্দৌলা’। মঞ্চে কি ঘটল তা নিয়েই ধ্রুবর ছবি।

আরও পড়ুন: সৃজিতের থ্রিলারে দেব

চিত্রনাট্যের খাতিরে মূল কাহিনির থেকে প্রায় পুরোটাই সরে গেলেও কোথাও বগলাচরণের সৃষ্টিকর্তা রাজকুমার মৈত্রের নাম পাওয়া গেল না। আরও আছে। গোমো এলাকা সে সময় ছিল বিহারে, বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে। সেখানে আশির দশকের শেষে সরকারি কর্মচারী বগলা ভট্ট অফিসে এসে সই করে বেরিয়ে যাওয়ায় বামফ্রন্ট সরকার কেন পড়ে যাবে তা বোধগম্য হলো না। বিহারে কবে বামফ্রন্ট ছিল সেটা ঠিক জানা নেই। হেডমাস্টারের বাড়ি রাতে লুকিয়ে ঢোকার দৃশ্য ‘বসন্ত বিলাপ’ আর শেষ নাটক ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ থেকে না নিয়ে অন্য ভাবেও করা যেত নিশ্চয়ই। তাছাড়া মধুজা চরিত্রের জন্য দিতিপ্রিয়ার ব্যবহার করা শাড়ির বুনন ও ধাঁচ সে সময় ছিল না, তা অনেক হালের। যেমন ছিল না বাড়িগুলোর গেটে ব্যবহৃত ফলকগুলোর  ফন্টও।

আরও পড়ুন: ‘সেনা উর্দি পরতে পারাই সবথেকে বড় পুরস্কার’

এছাড়া সাউন্ড মিক্সিং সর্বত্র নিখুঁত নয়। প্রথমার্ধে বহু সংলাপই বোঝা যায়নি। গল্পের গতিও ছিল খুব ধীর। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্যই ছবি গতি পেয়েছে। আসলে চল্লিশের দশকের শুরুর দিকের প্রেক্ষাপটের কাহিনি, আশির দশকের শেষে মফঃস্বলে নিয়ে গিয়ে, শহরের চোখ দিয়ে ২০২৩-এর চশমা ব্যবহার করে দেখলে যা হয়, তাই ঘটেছে। শুধু বিজলি সিনেমা হলের সামনে ‘নাগিনা’র কাটআউট, টিকিট ব্ল্যাকারের সিরিয়াস চাহুনি, ডায়াল-যুক্ত ল্যান্ড ফোনে প্রেমালাপ এবং হাতে বোনা সোয়েটার আর মাফলার দিয়ে আশির দশকের মফঃস্বল ধরা পড়ে না। পিরিয়ড-পিস করতে গেলে সেই সময়টা ধরতে হয়। এটা বাংলা ছবির নির্মাতারা কবে বুঝবেন কে জানে!



প্রাপ্তির ভাঁড়ার কি তবে একেবারেই শূন্য?

না। বগলামামা চরিত্রে খরাজ দুর্দান্ত। একেবারে বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে বগলামামা। সংলাপ, অভিনয়, নিখুঁত টাইমিংয়ে তিনি অনবদ্য। যেটুকু জায়গা পেয়েছেন, কেবুর চরিত্রে ঋদ্ধি ভালো অভিনয় করেছেন। অপরাজিতার অভিনয়ও দারুণ। তবে চরিত্রটি আরও অন্যরকমভাবে বিস্তার ঘটালে ভালো লাগত। প্রায়-খল একটি চরিত্র যেভাবে কমিক রিলিফের মাধ্যমে রজতাভ তুলে ধরলেন, তা নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের কাছে শিক্ষনীয়। বগলামামা সিরিজ়ের ছোটমামা চরিত্রের অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট (কিন্তু সিরিয়াস চরিত্র) মেজকা বেশ ভালো ফুটিয়ে তুললেন কৌশিক।  রেশমী, সুমিত, সন্দীপ, নরেন প্রত্যেকে দারুণ অভিনয় করেছেন স্বল্প পরিসরে। বিশ্বনাথের বিজ্ঞানী চরিত্রটি নিয়ে বেশী বলার সুযোগ নেই। তিনি অভিনয় করার সুযোগ কম পেয়েছেন। তবু তা ভোলার মতো অভিনয় নয়। কেবুর বন্ধুদের চরিত্রে বাকিরা সপ্রতিভ। কেবুর বান্ধবীর চরিত্রে দিতিপ্রিয়াকে দারুণ লাগল। এককথায় অভিনয়ে সকলে সেরাটাই দিয়েছেন, খামতি রাখেননি। তবে এ ছবির সঙ্গীত মোটেও মনে রাখার মতো নয়।

অনেক ফাঁক থাকলেও ছবি জমজমাট। দর্শকদের উচ্ছ্বাস, হাসি, উল্লাস ও হাততালিতে ফেটে পড়া প্রেক্ষাগৃহ বলছে কিছুটা হলেও নজর কেড়েছে বগলামামা। তবে কারগলি কোলিয়ারির বগলা ভট্ট ও তার কাহিনিকার রাজকুমার মৈত্র বেঁচে থাকলে কতটা খুশি হতেন বলা মুশকিল। হয়ত বগলা নিজেই ফিল্ম করতে মরিয়া হয়ে উঠতেন।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Sumit

Educator by profession. Now researching on history, cricket, and pop culture. Can't imagine a life without books. Music is his second skin. Collector of yesteryear songs. Sold on Salil Chowdhury and Mohd Rafi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *