‘টালিগঞ্জে মূলধারা ও সমান্তরাল ছবির বিভাজন ইচ্ছে করে করা হয়েছে’

তাঁর পরিচালিত আগের দুটি ছবির একটি ভৌতিক গল্প নিয়ে আর অন্যটি শহুরে প্রেক্ষাপটে। বছরে একটি করে ছবি করার অভ্যাসের মধ্যেও তিনি বজায় রাখেন বিষয় বৈচিত্র্য। দশম ছবি ‘বিবাহ অভিযান’ নিয়ে হাজির বিরসা দাশগুপ্ত। এক ঝাঁক তারকা নিয়ে পুরোদস্তুর এই কমেডি ছবি সম্পর্কে কথা বললেন রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে। উঠে এল টালিগঞ্জে মূলধারা ও সমান্তরাল ছবির বিভাজন নিয়ে ক্ষোভও।

বিরসা দাশগুপ্ত মানেই একটু সিরিয়াস ছবি হবে বলেই দর্শক ধরে নেয়। সেখানে হঠাৎ একটা কমেডি ছবি করার কথা ভাবলে কেন ?

এটা অনেক ভেবেচিন্তেই করেছি। আমি মনে করি কমেডি ছবি করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমাদের দেশে সব থেকে বেশি সফলতা পায় মূলধারার কমেডি ছবি। যদিও ‘মূলধারা’ এই কথাটায় আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। তবে ‘গোলমাল’ সিরিজ় বা রাজকুমার হিরানীর কমেডি ছবি যে কোনও সিরিয়াস ছবির সাফল্যকে ছাপিয়ে যায়। মানুষকে আনন্দ দেওয়া মুখের কথা নয়।

এই ছবিতে অনির্বাণের অভিনীত চরিত্রটির নাম রাখা হয়েছে গনশা। এটা কি বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ‘বিবাহ অভিযান’-এর কথা মাথায় রেখে?

একদমই তাই। বিভূতিভূষণের আসল গল্পের নাম ছিল ‘বরযাত্রী ও বাসর’।  সেখান থেকে টেলিভিশন ধারাবাহিক হয়েছিল ‘বিবাহ অভিযান’। সেখানে গনশার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শঙ্কর চক্রবর্তী। এই ছবিটার সঙ্গে ওই ধারাবাহিকের কোনও মিল নেই। ধারাবাহিকটা আমাদের বড় হয়ে ওঠার সময় দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার একটা কাল্ট ফলোয়িং আছে। তাই ছোটবেলায় দেখা একটা প্রিয় ধারাবাহিক বলেই ছবির নামকরণ ও গনশা চরিত্রের নাম দিয়ে আমি একটা ট্রিবিউট দিতে চেয়েছি বলতে পারো।

মূল গল্পটা তো রুদ্রনীল ঘোষের লেখা। কিভাবে ঘটল এই ব্যাপারটা?

আমার দুটো অন্য ছবির চিত্রনাট্য তৈরি ছিল। এর মধ্যে রুদ্র একদিন এসে বলল একটা গল্প আছে। ও আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা আলোচনা করছিলাম কি ধরণের গল্প এখন চলছে, তখন ও এই গল্পটা বলল। আমার ভালো লাগায় আমরা প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কথা বললাম। সকলেরই গল্পটা ভালো লাগল। এই গল্পটার জন্য আমাকে প্রযোজককে কনভিন্স করতে হয়নি।

তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

এই বছরের প্রথম ছ’মাস বাংলা ছবি তো ভালোই চলল বলা যায়

হ্যাঁ। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি খুশি। ‘সোনাদা’ (দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন) এত ভালো চলছে, এটা একটা দারুণ ব্যাপার। সিরিজ়টা একেবারে নতুন, কোথাও থেকে নেওয়া নয়। ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’র আগে ‘সোনাদা’র নামও কেউ শোনেনি। এছাড়া সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) থ্রিলার (ভিঞ্চিদা) ভালো চলেছে। আর ‘কন্ঠ’র নাম তো করতেই হবে। ‘কন্ঠ’ এখনও অবধি শিবুর (পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সব থেকে পরিণত ছবি বলে আমার মনে হয়। এই তিনটে ছবি থেকে প্রমাণ হয় যে বাংলা ছবি বোধহয় আঁতলামি এবং লারেলাপ্পার থেকে বেরিয়ে এসেও স্বাবলম্বী হতে পারছে।

টালিগঞ্জে মূলধারা ও সমান্তরাল ছবির একটা বিভাজন রয়েছে সকলেই জানে। তোমার এই ছবিটা কি সেই ধারণাটাকে ভাঙতে চলেছে ?

দেখো, আমি কিচ্ছু ভাঙতে আসিনি। আমার ছবি বানাতে ভালো লাগে তাই বানাই। এর বাইরে আর কিছু না। আমি এখনও ৪০ পেরোইনি, তাই আমার প্রচুর ছবি করা বাকি। বাংলা ছাড়া অন্য ভাষাতেও ছবি করব। একটা ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই বিরাটভাবে সাফল্য পাবে এমন তো হতে পারে না। তবে সেই সাফল্যে সকলের কনট্রিবিউশন থাকে। সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। তবে এই যে বিভাজনটা তুমি বললে—মূলধারা ও সমান্তরাল বা আঁতেল—এটা কয়েক বছর হল শুরু হয়েছে এবং ইচ্ছে করে করা হয়েছে। এটা আগে বাংলায় ছিল না। একই ইন্ডাস্ট্রিতে ঋতুপর্ণ ঘোষ ও স্বপন সাহার ছবি একই হলে পরপর শোয়ে চলেছে। দুজনেই তাঁদের জায়গায় সফল ছিলেন। তাই এরকম কোনও ভাগাভাগিতে আমি বিশ্বাসী নই।

‘বিবাহ অভিযান’-এর কি সিকুয়েল হবে?

বাংলা ছবি মোটের ওপর খুব একটা চলে না। এটা আগে চলুক, তারপরে ভাবা যাবে।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Prabuddha

Foodie, lazy, bookworm, and internet junkie. All in that order. Loves to floor the accelerator. Mad about the Himalayas and its trekking trails. Forester in past life. An avid swimmer. Also an occasional writer and editor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *