সময়োপযোগী রূপকথা
ছবি: ভটভটি
পরিচালনা: তথাগত মুখোপাধ্যায়
অভিনয়ে: ঋষভ বসু, বিবৃতি চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীব সরকার, মনু মুখোপাধ্যায়, দেবলীনা দত্ত, মমতা শঙ্কর, দীপঙ্কর দে, রজতাভ দত্ত, অনির্বাণ চক্রবর্তী, রানা বসু ঠাকুর, তথাগত মুখোপাধ্যায়
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট
RBN রেটিং: ৩/৫
আর পাঁচটা বাচ্চার মতো ভটভটিও ভালোবাসে রূপকথা। তবে রাজা-রানী বা লালকমল-নীলকমলের গল্প নয়, ভটভটির পছন্দ মৎস্যকন্যার রূপকথা। বয়সে বড় হলেও মানসিক দিক থেকে এখনও সে ছোটই। ভটভটির সারাদিনের কাজ বলতে লোকজনকে খবরের কাগজ থেকে ভুল ইংরেজি বলে মিথ্যা খবর শোনানো আর মাঝেমধ্যে শ্মশানে হরিদাকে ডোমের কাজে সাহায্য করা। এরই ফাঁকে ভটভটির আরেকটি প্রিয় কাজ আছে। সে বাড়িতে বিদেশী ছবির ডিভিডি এনে দেখে।
এভাবেই একদিন মৎস্যকন্যা নিয়ে তৈরি একটা ইংরেজি ছবি দেখে ফেলে ভটভটি। তারপর থেকে তার শয়নে স্বপনে শুধুই জলপরী। জন্মসূত্রে গঙ্গার ধারে জাহাজবস্তির বাসিন্দা বলেই জলের সঙ্গে ভটভটির নিবিড় যোগ। ডুবসাঁতার দিয়ে একবারেই ভটভটি তুলে আনে মা গঙ্গাকে দেওয়া প্রনামীর টাকা। আবার গভীর সমুদ্রের মাছেদের মতোই জলের তলায় দীর্ঘক্ষণ ভেসে বেড়ায় সে। এভাবেই একদিন ভটভটি খুঁজে পায় তার এরিয়েলকে। বাস্তবে তার পরিচয় যাই হোক, ভটভটির কাছে সে জলপরী। রূপকথার সোনালী জগতে ভেসে থাকা ভটভটি বোঝে না রাজনৈতিক চক্রান্ত। কে এই এরিয়েল? তার আসল পরিচয় কী? গল্প এগোনোর সঙ্গে-সঙ্গে সবকিছুই উন্মোচিত হয়।
আরও পড়ুন: বাইপোলার ডিসঅর্ডার থেকে চরম অবসাদ, হোমসে ‘ডুবে’ গিয়েছিলেন জেরেমি
মানুষ যত বেশি বাস্তবের সম্মুখীন হয়, তত বেশি সে কোনও কল্পনাকে আঁকড়ে ধরতে চায়। কঠিনতম ও চরম মুহুর্তে সে খুঁজে বেড়ায় কোনও এক মিরাকেল। জাহাজবস্তির প্রতিটি মানুষের জীবন সংগ্রামের মধ্যেও প্রদীপের ক্ষীণ আলোর মতো একটাই আশা বেঁচে থাকে, একদিন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তবু বাস্তব আর পরাবাস্তবের দুনিয়া যে বড্ড আলাদা সেই কথাই তথাগত শোনালেন তাঁর ‘ভটভটি’ ছবিতে। অভিনয়ের পাশাপাশি তথাগত একজন বলিষ্ঠ পরিচালকও বটে। ভটভটির চরিত্রে মুগ্ধ করলেন ঋষভ। মনের দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম একটি চরিত্রে তাঁর প্রতিটি অভিব্যক্তি, সংলাপ বলার ধরণ বলে দেয় ঋষভ লম্বা রেসের ঘোড়া। ভালো লাগে স্বভাব শান্ত বিবৃতিকে। এ ছবিতে একদিকে যেমন সে ভটভটির এরিয়েল আবার অনেকের কাছে সে সহায়-সম্বলহীনা এক দুঃখী মেয়ে। ভাসা-ভাসা চোখ দিয়ে বিবৃতি অনেক না বলা কথাই বলে যায় গোটা ছবি জুড়ে।
খুবই ভালো লাগল এই ছবির ভিএফক্সের কাজ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে ছবির আবহ সঙ্গীত অনবদ্য। অবশ্য অভিনয়ের দিক থেকে শুধুমাত্র ঋষভ, বিবৃতি নয় প্রত্যেকেই ভীষণ ভালো কাজ করেছেন। পাখির চরিত্রে দেবলীনা, হরিদার ভূমিকায় রজতাভ বরাবরের মতোই সাবলীল। কোনও সংলাপ ছাড়া শুধুমাত্র অভিব্যক্তি দিয়ে বাঘার চরিত্রটি অসাধারণ ফুটিয়ে তুলেছেন অনির্বাণ। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে নজর কেড়েছেন তথাগত। দুটি বিশেষ চরিত্রে দেখা গেল মমতা শঙ্কর এবং দীপঙ্করকে।
আরও পড়ুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার, তবুও ঔজ্জ্বল্যে অম্লান
ছবির চিত্রনাট্য বেশ অভিনব। বাংলা ছবির সীমিত বাজেটে জলের তলায় শুট করার সাহস দেখিয়েছেন পরিচালক। এর জন্য তাঁর সাধুবাদ প্রাপ্য। তবে ছবির দৈর্ঘ্য আরও কমানো যেত। বেশ কয়েকটি স্বপ্নদৃশ্যে বিবৃতির মৎস্যকন্যার মেকআপ চোখে পড়ার মতো। বাংলা ছবিতে মৌলিক কনটেন্টের অভাব নিয়ে অনেকই হা হুতাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তথাগত তার বাইরে এসে চেষ্টা করেছেন। বাংলায় ম্যাজিক রিয়্যালিজ়ম নিয়ে খুব বেশি ছবি হয়নি। তাই সময়োপযোগী রূপকথা হিসেবে ভটভটি একবার অন্তত দেখা উচিৎ।