রেখে যায় কিছু প্রশ্নও

সিরিজ়: কেমিস্ট্রি মাসি

পরিচালনা: সৌরভ চক্রবর্তী

অভিনয়ে: দেবশ্রী রায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, সপ্তর্ষি মৌলিক, সৌম্য মুখোপাধ্যায়, ঋত্বিকা পাল, শ্রেয়া ভট্টাচার্য, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট (৬ পর্বে)

RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆

শিক্ষার ইঁদুরদৌড়ে নেমে পড়েছে সবাই। ছাত্রছাত্রী হোক বা তাদের মা-বাবা, সকলের একটাই লক্ষ্য, যেভাবে হোক, জিততে হবে। যত দিন যাচ্ছে, এই ইঁদুরদৌড় কেবল পড়ুয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। প্রতিযোগিতার আঁচ এসে পড়ছে শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারেও। কোচিং সেন্টারগুলির মধ্যে চাপা প্রতিযোগিতা চলছে, কে কার আগে পরীক্ষার সাজেশন মেলাতে পারে যাতে পরের বছর আরও বেশি ছাত্র পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে এতটাই রেষারেষি যে অনেক সংস্থাই কাদা ঘাঁটতেও কসুর করে না। তেমনই এক প্রতিদ্বন্দ্বীতা নিয়ে সৌরভের নতুন সিরিজ় ‘কেমিস্ট্রি মাসি’ (Chemistry Mashi)



সিরিজ়ের শুরুতেই দেখা যায় জয়েন্ট এনট্রান্সের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপরাধে গ্রেফতার হয় সুচরিতা লাহিড়ি ওরফে কেমিস্ট্রি মাসি (দেবশ্রী)। অভিযোগ ওঠে, সুচরিতা তার অনলাইন টিউশন চ্যানেলের মাধ্যমে পড়ানোর সময়েই এই প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। আক্রমণের মুখে পড়ে সুচরিতার পরিবারও। সুচরিতার স্বামী সুশোভন (শঙ্কর) শিক্ষা দপ্তরে চাকরি করায় অভিযোগ ওঠে, তার সাহায্যেই সে এরকম কাণ্ড ঘটিয়েছে। কিছুদিন আগে পারিবারিক অশান্তি তো ঘটেইছিল, তার মধ্যে এই নতুন ঝামেলায় দুর্বিষহ হয়ে পড়ে সুচরিতার ছেলে রিভু (সপ্তর্ষি) ও বৌমা মৌয়ের (শ্রেয়া) জীবনও।

মাকে কাজে সাহায্য করা ছোটমেয়ে পুলুমা (ঋত্বিকা) নিজের মতো করে চেষ্টা করতে থাকে এই রহস্য সমাধানের। এদিকে পুলুমার ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাগুলিকে যেন আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে তার প্রাক্তন প্রেমিক অর্ঘ্য (সৌম্য)।

আরও পড়ুন: আবারও ‘গল্প হলেও সত্যি’র রিমেক

সিরিজ়ের বুনোট জমাটি করতে বেশ কয়েকটি সাবপ্লট এনেছেন কাহিনিকার সৌরভ ও ঈশিতা সরকার। শিক্ষাদানের ইঁদুরদৌড়ে সংস্থাগত বিভেদ ছাড়াও এসেছে রাজনীতিগত দুর্নীতি, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা প্রকাশ, বাবা-মায়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং মানব-চরিত্রের একাধিক স্তর। একেকটি স্তর পরিষ্কারভাবে দর্শকদের সামনে পরিস্ফুট করে দেওয়ার জন্য একেকটি চরিত্রকে একেকরকম সমস্যা দিয়ে সাজানো হয়েছে। গণ্ডগোলও হয়েছে সেখানেই। এতগুলি স্তর থাকার কারণে সিরিজে বেশ কিছু প্লট টুইস্ট আনতে হয়। সৌরভ তা এনেছেনও তবে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি টুইস্ট আগে থেকেই অনুমান করা যায়। এতটা কম সময়ের সিরিজ়ে এতগুলো টুইস্ট থাকার কারণে আগের ঘটনার সঙ্গে পরের ঘটনার সূত্র খুঁজতে একটু অসুবিধায় পড়তে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিরিজ় শেষ করার তাড়া থাকায় বহু অভিনেতাই তাঁদের অভিনীত চরিত্রগুলিকে ফুটিয়ে তোলার বিশেষ সময় পাননি। কপিরাইটের কারণে কিছু পরিচিত ব্র্যান্ডের নাম বদল করা হয়েছে। তবে ‘লেসবিয়ান’ শব্দটি কি রিভু ও অর্ঘ্যর মতো আধুনিক চরিত্রের কাছেও রিগ্রেসিভ যার জন্য কথাটি শেষ অবধি আলোচ্য হয়ে থাকলেও কারও মুখ দিয়ে বলানো গেল না?



নামভূমিকায় দেবশ্রী আরও বেশি সাবলীল হতে পারতেন। পারিবারিক সমীকরণ ফোটানোর দিক থেকে দেখতে গেলে দেবশ্রী, শঙ্কর, সপ্তর্ষি, শ্রেয়া ও ঋত্বিকা একেবারে যথাযথ। তবু আলাদা চরিত্র হিসেবে শঙ্করের যাও বা কিছু কাজের সুযোগ ছিল, সপ্তর্ষির তেমনটা ছিল না। শ্রেয়া তাঁর ভূমিকায় ভালো। সিরিজ়টিকে যথার্থ অর্থে নিজেদের অভিনয় দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন ঋত্বিকা ও সৌম্য।

আরও পড়ুন: জাতীয় পুরস্কার থেকে বাদ পড়ল ইন্দিরা গান্ধী ও নার্গিসের নাম

ইমন চক্রবর্তীর কণ্ঠে, সৌরভ চক্রবর্তীর কথায় টাইটেল ট্র্যাক শুনতে বেশ ভালো লাগে। অমিত বসু ও যশ গুপ্তর আবহ ও সুরক্ষেপণ বেশ সুন্দর। তবে ট্র্যাকটির অতিরিক্ত ব্যবহার একটু বিরক্তিও উদ্রেক করে। চিত্রগ্রাহক শুভদীপ দে-র নতুন কিছু করার সুযোগ ছিল না। সিরিজ়টিকে টানটান বানাতে গিয়ে সম্পাদক অমিতাভ দাশগুপ্ত এতটা নির্মম না হলেও পারতেন।

তবে সিরিজ়টি সৌরভ খুবই বুদ্ধিদীপ্তভাবে শেষ করেছেন। যদি এটি জনপ্রিয় হয়, তাহলে এর পরবর্তী সিজ়ন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার সিরিজ়ের শেষে কিছু উপাদান এমনও আছে, যা ‘কেমিস্ট্রি মাসি’র গল্প ছয় পর্বেই শেষ করে বাকি প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার দায়িত্ব দর্শকের হাতেই ছেড়ে দেয়।

সবমিলিয়ে বোর্ডের পরীক্ষা চলকলীন এই সিরিজ় দেখলে দর্শক বেশ কিছু ভাবনার খোরাক পেতে পারেন।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Diptajit

An avid reader and a passionate writer of crime fiction. Poems and verses are his second calling. Diptajit is the editor of a Bengali magazine. Nothing makes him weaker than books, films and food

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *