৫ কোটিরও বেশি বকেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত শিশুশিল্পীরাও, গণ আন্দোলনে যেতে পারে ফোরাম

কলকাতা: টালিগঞ্জ স্টুডিওপাড়ায় বিভিন্ন ধারাবাহিকে কর্মরত শিল্পী, কলাকুশলী ও টেকনিশিয়নদের ৫ কোটি টাকারও বেশি পারিশ্রমিক বাকি। আর এরই দাবীতে গণ আন্দোলনের পথে যাওয়ার কথা ভাবছে আর্টিস্টস ফোরাম। গতকাল শহরে ফোরামের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়।

ফোরামের দাবী, এত বড় আর্থিক দুর্নীতির সম্মুখীন তাদের এর আগে হতে হয়নি। অভিযোগের তীর মূলত প্রযোজক রাণা সরকারের দিকে। রাণার প্রযোজিত যে ধারাবাহিকগুলি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলি হল ‘জয় বাবা লোকনাথ’, ‘আমি সিরাজের বেগম’, ‘খনার বচন’, ‘মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য’ ও ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’। এর মধ্যে ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ গত ফেব্রুয়ারী মাসে শেষ হয়ে যায়। বাকি ধারাবাহিকগুলি ১৬ মার্চ থেকে অন্য প্রযোজনা সংস্থা দায়িত্ব নিলেও আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে আসছে প্রায় সবকটির ক্ষেত্রেই। এই মাসেই বন্ধ হয়ে গেছে ‘আমি সিরাজের বেগম’। হাতবদল হলেও বকেয়া পারিশ্রমিকের এই বিপুল অর্থ নিয়ে কলাকুশলীদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ।

পঁচিশে ‘উনিশে এপ্রিল’

প্রসেনজিৎ ও অরিন্দম ছাড়াও ফোরামের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পার্থসারথি দেব, শঙ্কর চক্রবর্তী, ভরত কল, বিদিপ্তা চক্রবর্তী, রূপা ভট্টাচার্য, দিগন্ত বাগচী, সৌমিলী বিশ্বাসের মত শিল্পীরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রসেনজিৎ জানালেন, “আগেও রাণার সংস্থা দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও আমরা আরও একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন। একাধিক ধারাবাহিকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমরা ভেবেছিলাম আর কোনও সমস্যা হবে না। এমন নয় যে অন্য প্রযোজকদের সঙ্গে অসুবিধা হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই টাকা বাকি থাকলেও পরে তা মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার সমস্তটাই অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে প্রতারণা করা হয়েছে।”

বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ

ফোরামের অভিযোগ, শুধুমাত্র শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাবদই বাকি রয়েছে ১.৩৩ কোটি টাকা। বহু শিল্পী ও কলাকুশলীরা গত কয়েক মাস ধরে চরম আর্থিক সমস্যায় দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় অনেকের পক্ষে স্টুডিওতে এসে কাজ করাও আর সম্ভব হচ্ছে না। চ্যানেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এই অর্থে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয় যে শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রাপ্য টাকা তাদের কাছে সুরক্ষিত আছে এবং কিছুদিনের মধ্যেই তা মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই ঘটনার আড়াই মাস কেটে যাওয়ার পরেও চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে পারিশ্রমিক মেটানোর কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। উপরন্তু দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার তরফে শিল্পীদের বকেয়া থেকে প্রায় ২০-২৫ লক্ষ টাকা টিডিএস বাবদ কেটে নিলেও তা এখনও সরকারী কোষাগারে জমা পড়েনি। এই প্রসঙ্গে রাণার নাম উঠে আসছে বার বার। গত ছ’মাসে তিনি একটিও মিটিং-এ যোগ দেওয়ার সৌজন্য দেখাননি। এই অবস্থায় ক্ষুব্ধ ফোরাম আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছে। তাঁদের দাবী, সংশ্লিষ্ট বিষয়টি এখন চরম প্রতারণার আওতায় পড়ে।

প্রসেনজিতের অভিযোগ, “অনেক শিল্পী যারা তেমন পরিচিত মুখ নন, অথচ দিনে ১২-১৪ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেন, তাদের অবস্থা খুবই করুণ। নিজের প্রাপ্য টাকার জন্য তাদের আজ অন্যের কাছে দয়া ভিক্ষা করতে হচ্ছে। এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর মানুষের জীবন জড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে কেউ হয়ত অন্তঃসত্ত্বা, কেউ অসুস্থ। তাদের হাসপাতালে যাওয়ার অবস্থাও নেই। সব শিল্পী প্রতিষ্ঠিত নন। সেই সব অচেনা শিল্পীদের জন্যই এই লড়াইটা আরও বেশি করে দরকার। এমন কি শিশুশিল্পী, যাদের নিয়মের জন্য ফোরামের আওতায় আনা যায় না, তারাও সারাদিন কাজ করে পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে এই শিশুশিল্পীরা এক একটা ধারাবাহিকের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ।”

তাশি গাঁওয়ে একদিন

ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয় আগামী দিনে দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার সঙ্গে কোনও ব্যাপারেই সংগঠনের কেউ যুক্ত থাকবেন না।

একই অভিযোগ ‘ভূমিকন্যা’ ধারাবাহিকের প্রযোজনা সংস্থার বিরুদ্ধেও। জানুয়ারী মাসে এই ধারাবাহিকের সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেলেও, পারিশ্রমিক বকেয়া রয়েছে অনেকেরই। এই প্রসঙ্গে অরিন্দম জানালেন, “‘ভূমিকন্যা’ দাগ ক্রিয়েটিভের ধারাবাহিক ছিল না। সংশ্লিষ্ট প্রযোজকের সঙ্গে সমস্যা থাকলেও পরে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে তার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। একটা বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়াও গেছে। আশা করা যায় বাকিটাও পাওয়া যাবে।” তিনি জানিয়ে দেন, দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার নজিরবিহীন প্রতারণার বিরুদ্ধে  আগামীদিনে সংগঠিত আন্দোলনে যেতে চলেছে ক্ষুব্ধ ফোরাম।

তবে ফোরামের দাবী, বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকা সত্বেও, শিল্পীরা এখনও অবধি কোনও অসহযোগিতা করেননি। যেহেতু নতুন প্রযোজকের সঙ্গে কোনও সমস্যা নেই তাই কাজ চলবে। তবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আগামী দিনে কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *