চেনা ছন্দে টেলিদুনিয়া, আশঙ্কার মেঘ কিন্তু রয়েই গেল
কলকাতা: সাত দিনের মাথায় খুলল বন্ধ স্টুডিয়োর তালা। আজ সকাল থেকেই চেনা ছন্দে টেলিদুনিয়া। শুরু হয়েছে থমকে থাকা বিভিন্ন ধারাবাহিকের শ্যুটিং। শিল্পী ও কলাকুশলীদের ব্যস্ততা চোখে পড়েছে টালিগঞ্জের গোটা স্টুডিয়োপাড়াতেই।
গতকাল নবান্নে যুযুধান সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় প্রযোজক, আর্টিস্ট ফোরাম, কলাকুশলীদের সংগঠন, ও চ্যানেল প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি হয় একটি যৌথ কমিটি। ভবিষ্যতে বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সব সমস্যা সমাধান করার কথা এই কমিটির, যার প্রধান উপদেষ্টা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কমিটি তৈরি হলেও, স্টুডিয়োপাড়ায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন।
১. এক ঘন্টারও কম সময়ের বৈঠকে যে সমস্যার তথাকথিত সমাধান হয়ে গেল, তা হতে ছয় দিনেরও বেশি সময় লাগল কেন? এই কমিটি তো সব পক্ষ একসাথে বসে নিজরাই তৈরি করতে পারতেন। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কোনও দরকার ছিল কি?
গান শেষ আর জান শেষ তো একই কথা রাজামশাই
২. শিল্পীদের মূল দাবী ছিল দুটি। এক, ১৫ আগস্টের মধ্যে তাদের সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া এবং প্রতিমাসে ওই তারিখের মধ্য সেই মাসের পারিশ্রমিক প্রধান। দুই, দৈনিক ১০ ঘন্টার বেশি কাজ না করানো এবং করতে হলে তার জন্য ওভারটাইম পারিশ্রমিক দেওয়া। এই দুটি বিষয়ের কোনওটিরই সুরাহা হয়নি কালকের বৈঠকে। প্রযোজক পক্ষ কেবল মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন যে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত বকেয়া পারিশ্রমিক মিটিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আগামী মাসেও যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না তার নিশ্চয়তা কি? আর ১০ ঘন্টার বেশি কাজ না করার দাবীটিরই বা কি হবে?
যে মৃত্যু আজও রহস্য
৩. প্রযোজক সংস্থার অভিযোগ ছিল এক একজন শিল্পী একই সময়ে একাধিক ধারাবাহিকে কাজ করেন। সেক্ষেত্রে ১০ ঘন্টার হিসাব কিভাবে হবে? এরকম কোনও ক্ষেত্রে সেই অভিনেতা/অভিনেত্রী যদি ১০ ঘন্টার পরে অতিরিক্ত সময় শ্যুট করে কাজ শেষ করেও দেন, তাহলে সেই শিল্পীর পারিশ্রমিক কিভাবে নির্ণয় করা হবে?
৪. প্রযোজকদের দাবী, প্রায় সব নতুন শিল্পীকেই শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে অনেক শট নষ্ট হয়। এক একটি শট রিটেক করতে হয় বহুবার। সেক্ষেত্র ১০ ঘন্টার মধ্যে এই সময়টা ধরা হবে কি? যদি তাই হয়ও, তা হলে কতগুলি শট পর্যন্ত তা গ্রাহ্য হবে?
Advertisement
৫. এই যৌথ কমিটির আইনী ভিত্তি কি? রেজিস্টার্ড সংস্থা না হলে, কাউকে বাধ্য করার ক্ষমতা এই কমিটির আছে কি?
৬. শিল্পীদের তরফে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অরিন্দম গাঙ্গুলী বরাবরই বলে আসছিলেন, শতকরা ৩০ শতাংশের বেশি প্রযোজক পারিশ্রমিক দিতে দেরি করেন না। তাহলে বাকি ৭০ শতাংশ প্রযোজকদের থেকে এই কদিনে সেই কতিপয় প্রযোজকদের কেন অনুরোধ করা হল না পারিশ্রমিক দিয়ে দিতে? তাহলে কি সমস্যা আসলে জিইয়ে রাখা হল?
চিত্রনাট্য তৈরি, তবুও আসছে না অদম্য সেন
৭. পারিশ্রমিক এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে প্রযোজক পক্ষ ও আর্টিস্ট ফোরামের মধ্যে জুলাই মাসের শুরুতে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি এখনও বলবৎ আছে। যৌথ কমিটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর তাহলে সেই চুক্তির ভবিষ্যৎ কি?
৮. কয়েক বছর আগে মমতা নিজেই গড়ে দিয়েছিলেন টেলি অ্যাকাডেমি নামক সংস্থা যার মধ্যে রয়েছেন বিবাদমান সব পক্ষের প্রতিনিধি এবং রাজ্যের সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিকরা। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির দেখভাল করা সেই সংস্থারই কাজ। টালিগঞ্জের একাংশের মত, বছরে একটা টেলি-সম্মান প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা ছাড়া আর কোনও কাজই করে না এই সংস্থা। নতুন যৌথ কমিটি তৈরি হওয়ার পর টেলি অ্যাকাডেমির ভবিষ্যৎ কি?
নীরবতার মাঝে অন্য প্রেমের ছবি, মুক্তি পেল টিজ়ার
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ধর্মঘট সাময়িকভাবে উঠলেও, আসল সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। প্রতি মাসে অন্তত একবার এই কমিটির সভা হওয়ার কথা। তাই পরবর্তী বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে সব পক্ষ।