বাংলা ব্যান্ডের ভাঙাগড়ার গল্প নিয়ে অরিজিতের ‘ব্যান্ড-হু’
কলকাতা: গানের কথাগুলো ছিল ‘আজ রক্ত ঝরুক/আজ হোক কলরব/আজ গানের সুরে/আসুক রঙিন বিপ্লব’। বেস গিটারের মাতাল ঝংকারে, কিবোর্ডের সুরে, বাঁশির মসৃণ আবহে, ড্রামের উদ্দাম তালে তখন অভিনেতারা তাল মেলাতে ব্যস্ত। সেই সময়ই টিম রেডিওবাংলানেট পৌঁছে গিয়েছিল ভারতলক্ষ্মী স্টুডিওর ‘ব্যান্ড-হু’ ছবির সেটে। দৃশ্যটি ছিল ব্যান্ডের একটি গানের। নিজেদের ডেরায় জ্যামিং-এ ব্যস্ত অর্ক, বাজু, জিশা, তন্ময়রা। দ্বিতীয়দিনের শ্যুটিং চলছে পুরোদমে, পরিচালক অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ব্যস্ত দৃশ্যের খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দিতে। কয়েকবারের চেষ্টায় ক্যামেরা প্যান করে প্রত্যেক অভিনেতার ক্লোজ় শট নিয়ে তখনকার মতো প্যাক আপ ঘোষণা করলেন তিনি।
লাঞ্চ ব্রেকে পরিচালককে পাওয়া গেল কিছু সময়ের জন্য। জানালেন, “এটা একটা ব্যান্ডের ভাঙাগড়ার গল্প। সেই ব্যান্ডের বেড়ে ওঠা, তারপর তার আভ্যন্তরীণ সমস্যা, সেগুলোকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে কতরকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়, এই সব নিয়েই গল্প এগোবে।”
কলকাতা ছাড়াও উত্তরবঙ্গে এই ছবির একটা অংশের শ্যুটিং করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানালেন অরিজিৎ। ‘ব্যান্ড-হু’র ছবির বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সমদর্শী দত্ত, সৌরভ দাস, পূজারিনী ঘোষ ও অন্যান্যরা।
আরও পড়ুন: মন নিয়ে (পর্ব ১): মধ্যবিত্তের লাইফস্টাইল সমস্যার সমাধানের খোঁজে অনুত্তমা
ছবির কাহিনী শুরু হয় ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য সৈকতের দল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে। সৈকতের সঙ্গে আরও কয়েকজন বেরিয়ে যাওয়ার ফলে দলটির ভেঙে যাওয়া অনেকটাই অবধারিত হয়ে যায়। কিন্তু বাকি সদস্যরা এত সহজে ভেঙে যেতে দেয় না তাদের স্বপ্নের গন্তব্যকে। চেষ্টা করে আবার নতুন করে শুরু করার। নিজেদের সময় দেওয়ার উদ্দেশ্য তারা একসঙ্গে উত্তরবঙ্গে বেড়াতে যায়। সেখানে একটি রোস্তোরাঁয় গান শোনাতে গিয়ে আলাপ হয় নতুন কিছু মানুষের সঙ্গে, যারা পরবর্তীকালে এই ব্যান্ডটির সঙ্গে জড়িয়ে যায় নানানভাবে। এইভাবে এগিয়ে চলে ছবির গল্প।
সেট থেকে বেরোতেই দেখা সৌরভের সঙ্গে। তাঁর অভিনীত চরিত্রটির নাম অর্ক। সৌরভ জানালেন, “অর্কর সঙ্গে আমি খুব সহজেই একাত্ম হতে পেরেছি কেন না আমি নিজেও ছোটবেলায় ওর মতোই ছিলাম। গান গাইতে পারলেও এগিয়ে গিয়ে গাইতাম না। আমি নিজেও একসময় বেস গিটার বাজিয়েছি। ব্যান্ড পলিটিক্স কি সেটাও দেখেছি। তাই এই সবকিছু নিয়ে গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছে। অর্কর বেস গিটারিস্ট থেকে একজন ভোকালিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে ছবির একটা বড় অংশ থাকছে।” ছবিতে প্রত্যেকটি চরিত্রেরই একটা নিজস্ব গল্প থাকছে বলে জানালেন সৌরভ। এই সবকটা গল্প গিয়ে একটা জায়গায় মিলে ‘ব্যান্ড-হু’র গল্পটা তৈরি করবে।
আরও পড়ুন: ‘সিনেমার গল্প লেখকদের নাম কেউ জানতে চান না’
ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র জিশার ভূমিকায় থাকছেন পূজারিনী। “জিশার চরিত্রটা একটু জেদি গোছের,” জানালেন পূজারিনী। “সে মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে, তার যখন যেটা চাই সেটা চাইই। তবে জিশা কিন্তু মনের দিক থেকে খারাপ মেয়ে নয় একেবারেই। জীবনের পারিপার্শ্বিকের কারণে জেদি হয়ে ওঠে সে। জিশা এই ব্যান্ডে ড্রাম বাজায়। এই ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে একটা আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। সেগুলো নিয়ে নানান ওঠাপড়া থাকবে গল্পে। চরিত্রটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।” তবে নিজের সঙ্গে জিশার চরিত্রের মিল প্রায় নেই বলেই জানালেন পূজারিনী।
ছবির আর এক কেন্দ্রীয় চরিত্র সমদর্শী জানালেন, “আমার চরিত্রের নাম বাজু। আমি এই ব্যান্ডে বাঁশি বাজাই। ব্যান্ডটা ভেঙে যেতে যেতে আবার কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সেটা নিয়েই এই ছবিটা।”
পাঁচটা গান থাকছে ছবিতে। সঙ্গীতের দায়িত্বে রয়েছেন দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। রূপঙ্কর বাগচী, রুপম ইসলাম ও দিব্যেন্দু নিজেও গান গেয়েছেন এই ছবিতে। এ বছরের শেষের দিকে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ব্যান্ড-হু’।
ছবি: গার্গী মজুমদার