শেষ থেকে শুরু অপুর পথচলা, হয়ে গেল মহরত
কলকাতা: অপর্ণার আকস্মিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অপু ফিরে যায় তার বোহেমিয়ান জীবনে। সংসার জীবন নিয়ে যার কোনও আগ্রহই ছিল না, সেই অপুকেই কেমন করে যেন সেখানেই বেঁধে ফেলেছিল অপর্ণা। শিশুপুত্র কাজলের কথা অপু ভাবতে চায় না। কাজলের কারণেই সে হারিয়েছে অপর্ণাকে। পিতৃমাতৃস্নেহ বঞ্চিত কাজল শৈশব কাটায় তার মামারবাড়িতে। তার কাছে বাবা এক বিচিত্র অনুভূতি, যার টিকিটিও সে দেখেনি। তবু একসময় বন্ধুত্বের আশ্বাসে সেই বাবার কাঁধে চড়েই সে কলকাতা দেখতে বেরিয়ে পড়ে।
১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিটি এখানেই শেষ। ঠিক ছয় দশক পর সেই শেষ থেকেই আবার শুরু হবে অপুর পথচলা। কাজলকে কাঁধে চাপিয়ে কিছু দূর নিয়ে যাওয়ার পর, ছেলেকে নামিয়ে তার হাত ধরে অপু। দুজনে এগিয়ে চলে অজানা কোনও গন্তব্যে। পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রর ছবি ‘অভিযাত্রিক’ শুরু হবে এভাবেই। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের বাকি অংশ, যা সত্যজিৎ তাঁর অপু ট্রিলজিতে রাখেননি, সেই অংশকে নিয়েই ছবি করতে চলেছেন শুভ্রজিৎ। গতকাল শহরে হয়ে গেল এই ছবির মহরত।
আরও পড়ুন: বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ
‘অভিযাত্রিক’-এ অপু ও কাজলের ভূমিকায় থাকছেন অর্জুন চক্রবর্তী ও আয়ুষ্মান মুখোপাধ্যায়। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, দিতিপ্রিয়া রায়, সোহাগ সেন, বরুণ চন্দ ও রূপাঞ্জনা মিত্র। ছবির সঙ্গীতের দায়িত্বে থাকছেন বিক্রম ঘোষ।
যে কাহিনীর সঙ্গে সত্যজিতের নাম জড়িয়ে, সেই কাজে হাত দিতে গিয়ে পরিচালক কতটা ভাবনাচিন্তা করেছেন? উত্তরে শুভ্রজিৎ জানালেন, “বাঙালি সত্যজিৎকে নিয়ে কতটা রক্ষণশীল সেটা আমি জানি। তবে আমি নিজে তার চেয়েও তিনগুণ বেশি রক্ষণশীল। এই ছবিকে গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজো বলা যেতে পারে। ফিল্মের ছাত্র হিসেবে এই ছবি গুরুর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি।”
আরও পড়ুন: গান শেষ আর জান শেষ তো একই কথা রাজামশাই
বিভূতিভূষণ যে সময়ের কাহিনী লিখে গেছেন সেখান থেকে খুব একটা সরে আসবেন না বলে জানালেন পরিচালক। উপন্যাসকে ছবির ভাষায় ব্যাখ্যা করতে যেটুকু পরিবর্তন প্রয়োজন শুধু সেটুকুই করবেন।
অর্জুন বললেন, “অপুর মতো স্মরণীয় একটা চরিত্রে অভিনয় করা তাঁর কাছে বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার।”
ছবিতে একটি বিশেষ ভূমিকায় থাকছেন সব্যসাচী। চরিত্র নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে না চাইলেও ছবি নিয়ে উচ্ছসিত তিনি। “ছবির চিত্রনাট্য অসাধারণ,” বললেন সব্যসাচী। “মূলত সেই কারণেই আমরা সকলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। ছবিটার সঙ্গে সত্যজিতের নাম জড়িয়ে আছে বলেই আরও বেশি করে তা স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। আশা করি দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব।”
আরও পড়ুন: যে জন থাকে মাঝখানে
ছবিতে অপুর রানুদির চরিত্রে দেখা যাবে শ্রীলেখাকে। “‘অভিযাত্রিক’-এ আমি একজন অল্পবয়সে বিধবা হওয়া মেয়ে রানুর চরিত্রে অভিনয় করছি, যার সঙ্গে অপুর দেখা হয়ে যায়। তবে পিরিয়ড পিস মানেই খুব কঠিন কাজ। চেষ্টা করব যাতে কাজটা ভালো করে হয়,” জানালেন শ্রীলেখা।
তবে বিভূতিভূষণের কাহিনী অবলম্বনে সত্যজিৎ যে সিরিজ় করেছিলেন, তার ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যে বেশ কঠিন সেটা মেনে নিলেন শ্রীলেখা। “আসলে সত্যজিৎ বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে বাঙালির একটা আলাদা ইমোশন তো রয়েছেই। আর সেটা স্বাভাবিকও। কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে নতুন কোনও কাজ হবে না। আশা করছি ছবিটা সকলেরই ভালো লাগবে,” বললেন তিনি।
আরও পড়ুন: তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে
রূপাঞ্জনা জানালেন, “খুব বেশি কিছু এখনও জানি না আমার চরিত্রটা নিয়ে। তবে যতটুকু শুনেছি আমার চরিত্রটা একজন বাঈজীর। বেনারসের প্রেক্ষাপটে আমার চরিত্রটা থাকলেও তার কাজ কলকাতার স্টুডিওতেই হবে বলে জানি।”
ছবিটি উপস্থাপন করছেন চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মধুর ভান্ডারকর। “সত্যজিৎ, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের কাজ দেখে ছবি তৈরি করা শিখেছি। সেই শেখা এখনও চলছে। আমার মনে হয়েছে এই ছবি এমন একটা গল্প যেটা বলা দরকার। অপুর মতো এমন একটা চরিত্র ভারতীয় ছবিতে আর দ্বিতীয়টি নেই। সেই জন্যই ‘অভিযাত্রিক’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি,” জানালেন তিনি।
ছবির শ্যুটিং শুরু হবে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। কলকাতা ছাড়াও বেনারস, গরুবাথান, টাকি ও বোলপুরে ক্যানবন্দী করা হবে ‘অভিযাত্রিক’। সম্পূর্ণ ছবিটি হবে সাদাকালোয়।