‘পথের পাঁচালী’র মতোই অবস্থা হয়েছিল ‘ফেলুদা’ তথ্যচিত্রের: সাগ্নিক
কলকাতা: অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র মতোই অবস্থা হয়েছিল ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ারস অফ রে’জ় ডিটেকটিভ’ তথ্যচিত্রের, এমনটাই জানালেন সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎ সৃষ্ট গোয়েন্দা ফেলুদার গল্প প্রথম প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাগ্নিক তৈরি করেছেন পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রটি। এই ছবির জন্যই চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ নবাগত পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ প্রথম নন-ফিকশন ছবির জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
“আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তথ্যচিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রযোজক পাওয়া ভীষণ মুশকিল,” রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন সাগ্নিক। “সেক্ষেত্রে অনেককে বলার পরও যখন কেউ এগিয়ে এল না, তখন আমি কর্পোরেট প্রযোজকের খোঁজ শুরু করি। সেই মুহূর্তে আমার এক সহপাঠী এগিয়ে আসেন ছবিটির প্রযোজনা করতে।”
কিন্তু তাতেও মেটেনি সমস্যা। সাগ্নিকের এই ছবির বাজেট ছিল অনেকটাই বেশি। “ছবির কাজ যখন প্রায় অর্ধেক শেষ, সেই সময় টাকার জোগাড় না হওয়ায় প্রযোজক হাত তুলে নিলেন। একে তো ফিচার ছবি না হওয়ার দরুণ কেউ তথ্যচিত্র বানানোর কথা শুনতেই চান না। এরপর যখন ছবির অর্ধেক কাজ বাকি, তখন ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্বও আমার ঘাড়ে এসে পড়ল,” জানালেন পরিচালক।
আরও পড়ুন: আজানের সুর আর মঙ্গলারতির শঙ্খধ্বনি মেলালেন শিবু-নন্দিতা
২০০৮ সালে যে তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন তিনি, তার কাজ শুরু হয় ২০১৪-তে। “তবে অর্থের অভাবে ছবি বানানো আটকে থাকবে, এ কথা আমি ভাবতেই পারিনি। সেই সময়ে আমার মা তাঁর বেশিরভাগ সোনার গয়না আমায় দিয়ে দেন। সেগুলো বন্ধক রেখে আমি তথ্যচিত্রটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। অনেকটা ‘পথের পাঁচালী’র মতোই দৈনিক যা পুঁজির জোগাড় হয়েছে, তাই দিয়ে এগিয়েছি ছবির কাজ,” জানালেন সাগ্নিক।
তবে ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই এই বিশ্বাসটা সাগ্নিকের ছিল, এবং সেটা হল ২০১৬-তে। “সেই বছর ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ারস অফ রে’জ় ডিটেকটিভ’ প্রথম দেখানো হয় গোয়ার এনএফডিসি ফিল্ম বাজারে। সেখানে কিছু লোকের নজরে পড়ে ছবিটি। তখনই একটি বেসরকারী ক্রাউডফান্ডিং সংস্থা এগিয়ে আসে। সেই সংস্থার সহযোগিতায় এবং মূলত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সাহায্যে ২১৫ জন এগিয়ে এলেন এই ছবি প্রযোজনা করতে, যাঁদের মধ্যে খুব বেশি হলে হয়ত আমি ৩০ জনকে চিনতাম। প্রায় ₹১৫.৫০ লক্ষ ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া গেল,” জানালেন তিনি।
কিন্তু এরপরেও দেখা দিল ছবি ডিস্ট্রিবিউশনের সমস্যা। “কেউ বিশ্বাসই করেনি ছবিটা মুক্তি পাবে,” বললেন সাগ্নিক। “অনেক জায়গায় কথা বলার পর কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন যারা ছবিটাকে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে সাহায্য করেন।”
আরও পড়ুন: মূল্যবোধের দ্বন্দ নিয়ে হাজির নতুন ধারাবাহিক
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। প্রেক্ষাগৃহে টানা ৫০ দিন হাউজ়ফুল যায় ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ারস অফ রে’জ ডিটেকটিভ’। তারপর জাতীয় পুরস্কার।
“আমি শুধু চেয়েছিলাম ছবিটা মুক্তি পাক। টাকার সমস্যা আসার পরেও আমি ছবি তৈরির ক্ষেত্রে কোনও আপোষ করিনি। লন্ডন থেকে শুরু করে ভারতের যে যে প্রান্তে শ্যুটিংয়ের প্রয়োজন ছিল, ছবির স্বার্থে সবটা বজায় রেখেছি। আপোষ করিনি বলেই আজ জাতীয় পুরস্কারের মতো এত বড় সম্মান পেলাম। কোথাও একচুল এদিক ওদিক হলেই এই ছবি কারোর ভালো লাগত না। এমন কি দর্শক হিসেবে আমারও না। এই ছবিটা ছিল আমার ‘ইনার কল’,” দাবী সাগ্নিকের।
সত্যজিৎ পরিচালিত ‘সোনার কেল্লা’ ও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর শ্যুটিংয়ের জায়গা, ফেলুদাকে নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে এই তথ্যচিত্রে। এছাড়া সাগ্নিকের কথায়, তাঁর এই ছবি ফেলুদার জার্নির গল্প। লন্ডন থেকে লক্ষ্ণৌ, কাশী থেকে জয়সলমির হয়ে প্রায় সাতটি শহর ঘুরে জার্নি শেষ হয় ‘ফেলুদা’র। আগামী দিনে বিদেশেও প্রদর্শিত হবে ‘ফেলুদা: ফিফটি ইয়ারস অফ রে’জ় ডিটেকটিভ’।
ছবি: কলকাতা টিভি