জটায়ু করার সময় অবাধ স্বাধীনতা পেয়েছি: অনির্বাণ
RBN Web Desk: কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলেছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ওয়েব সিরিজ় ‘ফেলুদা ফেরত’। নতুন ফেলুদার পাশাপাশি নতুন জটায়ুরও আবির্ভাব হতে চলেছে এই সিরিজ়ে। জটায়ুর ভূমিকায় এবার রয়েছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। তবে ফেলুদা চরিত্রের জন্য পরিচালককে যেভাবে অভিনেতা খুঁজতে হয়েছে, জটায়ুর ক্ষেত্রে তা করতে হয়নি। সত্যজিৎ রায়ের ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’ ও ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’ নিয়ে তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ় পরিচালনা করেছেন সৃজিত।
এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাওয়ার আগে অনির্বাণ কি নিজেকে কখনও জটায়ু হিসেবে কল্পনা করেছিলেন? “’একেনবাবু’ মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম জানলাম আমার চেহারার সঙ্গে জটায়ু চরিত্রের মিল রয়েছে। অনেকেই তখন এটা বলতে শুরু করেছিলেন। তার আগে ব্যাপারটা কখনওই আমার ভাবনাতে আসেনি,” রেডিওবাংলানেট-কে বললেন অনির্বাণ।
জটায়ু চরিত্রের মধ্যে উত্তর কলকাতার বাসিন্দার ছাপ স্পষ্ট। বেস্টসেলার লেখক হলেও তাঁর চরিত্রের মধ্যে এক ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালি বর্তমান, যেমনটা এখন আর তেমন দেখা যায় না। অনির্বাণ কীভাবে জটায়ু হয়ে উঠলেন? “উত্তর কলকাতার মানুষ না হলেও জটায়ু সম্পর্কে একটা ধারণা তো ছিলই,” বললেন অনির্বাণ। “বইতে যেভাবে চরিত্রটাকে আঁকা হয়েছে, বা সংলাপগুলো যেভাবে আছে সেখানে মানুষটাকে বুঝে নিতে সমস্যা হয় না। চরিত্রটা নিয়ে সৃজিত যে খুব নির্দেশ দিয়েছিল তেমন নয়। ওর চিত্রনাট্য পড়ার সময় কিছু পরিষ্কার ইঙ্গিত থাকে তাতে বোঝা যায় ও চরিত্রটাকে কিভাবে দেখছে। তারপর ও আর খুব একটা নির্দেশ দেয় না। আর যেহেতু চরিত্রটা অচেনা নয় তাই বুঝে নিতে সমস্যা হয়নি। আমাকে কখনওই কৃত্রিমভাবে কারোর মতো হয়ে উঠতে বলা হয়নি। সৃজিত সেটা কখনওই চায়নি। কাজটা করার সময় অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। তবুও অবচেতনে কিছুটা তো নিশ্চয়ই থেকেই যায়। জটায়ু মানেই সন্তোষ দত্ত, আমাদের সকলেরই অবচেতনে সেটা রয়েছে। সেখান থেকে যদি আমার অভিনয়ে কিছুটা প্রভাব পড়ে থাকে তাহলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত।”
আরও পড়ুন: জটায়ুর সাহস
সিরিজ় মুক্তি পেলে দর্শকের একাংশের সমালোচনা যে আসবেই তা জানেন অনির্বাণ। তার জন্য প্রস্তুতও রয়েছেন তিনি। “অনেকের ভালো আবার কিছু মানুষের খুব খারাপ লাগবে। তাঁরা যাচ্ছেতাই করে বলবেন সেটাও জানি,” বললেন অনির্বাণ।
সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রোলিং নিয়ে ভাবিত নন অভিনেতা। ওগুলো ইচ্ছে করে করা হয় বলেই মনে করেন তিনি। তবে সমালোচনাকে তিনি গুরুত্ব দেন। “সমালোচনা হবেই সেটা জানি, হওয়া উচিতও। এমন কোনও আর্ট ফর্ম নেই যেটা সকলের একইভাবে ভালো লাগতে পারে। যেভাবে কেউ ভালো বললে এড়িয়ে যাই না, খারাপ বললেও এড়িয়ে যাব না। কাজটা দেখার পরে কেউ যদি সমালোচনা করেন সেটা নিশ্চয়ই শুনব,” জানালেন তিনি।
তবে ফেলু, তোপসে, জটায়ুকে নিয়ে বাঙালির যে অন্যরকম আবেগ রয়েছে সেটা অস্বীকার করছেন না অনির্বাণ। “আসলে যে যেভাবে চরিত্রটাকে ভেবেছেন, পর্দায় তেমনটা দেখতে না পেলেই তাঁর খারাপ লাগে। একটা চরিত্রের আবেদন এক একজনের কাছে এক একরকম। দশজনকে যদি একটা চরিত্র করতে দেওয়া হয়, তারা দশরকমভাবে সেটা করে দেখাবে। কেউ যে হুবহু কারোর মতো হয়ে উঠতে পারে না, সেটাও বুঝতে হবে। কেউ যদি জটায়ুকে শুধু একজন লেখক ও নিপাট ভালোমানুষ মনে করেন বা শুধু হাস্যকর একটা চরিত্র বলে ভেবে নেন, সেটা তো তাঁর ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা। জটায়ু কখনওই শুধুমাত্র একজন কমিক এলিমেন্ট নন। তার হাবভাব বা কথাবার্তা পরিস্থিতির বিচারে কিছুটা হাস্যকর মনে হলেও তিনি নিজে যথেষ্ট সিরিয়াস এবং সব অবস্থায় ফেলুদার পাশে থাকতে চান। কয়েকটা গল্পে তিনি ফেলুর সহকারীও হয়ে উঠছেন। ফেলুও জটায়ুর প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল,” ব্যাখ্যা করলেন অনির্বাণ।
জটায়ুর চরিত্রের সঙ্গে তাঁর চেহারাগত সাদৃশ্য থাকায় কি ধরে নেওয়া যায় যে আগামীদিনে যেই ফেলুদা কাহিনী নিয়ে ছবি করুন, সেখানে তিনি ডাক পাবেন। প্রশ্ন শুনে হেসে উঠলেন অনির্বাণ। “আমার চেহারাটা যে জটায়ু করার উপযুক্ত, তাই তো জানতাম না। তবে গোঁফ লাগালে হয়তো জটায়ুর মতো দেখতে লাগে। এটার বাইরে অনির্বাণ একেবারেই অন্য একটা মানুষ,” বললেন অনির্বাণ।
২৫ ডিসেম্বর আড্ডাটাইমসে মুক্তি পেতে চলেছে ‘ফেলুদা ফেরত’।