অনির্বাণের উদ্যোগ, ব্রহ্মপুর রাঙালেন চার তরুণ

RBN Web Desk: শিল্পীর তুলির আঁকিবুঁকি টানে রঙিন হয়ে ওঠে সাদা ক্যানভাস। কত শিল্পীর কতদিনের পরিশ্রম এবং ভাবনার প্রকাশ ঘটে এক একটি ছবির মাধ্যমে। ছবি যে শুধুই ক্যানভাসের মাধ্যমে প্রদর্শনালয়তেই স্থান পায় না, তা প্রমাণ করে দিলেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য। না, এটা পিকাসো বা ভ্যান গখের চিত্র প্রদর্শনী নয়, এটা অনির্বাণের পাড়া। ব্রহ্মপুর প্লেসের বাসিন্দা অনির্বাণের উদ্যোগে এক অভিনব ক্যানভাসে সেজে উঠেছে তাঁর পাড়া।

মোট ৯,৪৩৮ বর্গফুট জায়গা তুলির ছোঁয়ায় রঙিন করেছেন শিল্পী ত্রিগুণা শঙ্কর, অরুণ মণ্ডল, অরিজিৎ দত্ত, ও সৌরভ পাল। এরা কেউই প্রথাগত আর্ট কলেজের ছাত্র নন। পেশাদার চিত্রশিল্পীও তাঁদের বলা চলে না। তবু নিজেদের শিল্পীসত্বা দিয়ে বিভিন্ন বাড়ির দেওয়ালে তুলে ধরেছেন তাঁদের শৈল্পিক প্রয়াস। কোথাও হ্যারি পটার, ছোটা ভীম, সত্যজিৎ রায়, চারুলতা, জয় বাবা ফেলুনাথ, আবার কোথাও অসংখ্য ডাকবাক্স ছড়িয়ে রয়েছে দেওয়াল জুড়ে।

আরও পড়ুন: আবারও জুটি বাঁধছেন ঋতুপর্ণা, কৌশিক

রেডিওবাংলানেট-কে ত্রিগুনা জানালেন, “লকডাউন পর্ব মিটে যাওয়ার পর একদিন মধুরিমা (গোস্বামী, অনির্বাণের স্ত্রী) আমাকে ফোন করে বলে যে অনির্বাণদা পাড়ার বাড়িগুলিতে ছবি আঁকার কথা ভাবছেন। আমরা গিয়ে দেখি আমাদের আঁকার সুবিধার জন্য বাড়িগুলোতে সাদা রং করানো হয়েছে। তারপর ধীরে-ধীরে কাজটা আমরা শুরু করি।”

ব্রহ্মপুর

শুধুমাত্র অভিনয় জগতের ছবি নয়, চার তরুণের তুলিতে উঠে এসেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের বেদনাগাথা, তুলে ধরা হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা। “ছোটবেলায় আমরা কিশলয় পড়তাম যা এখনকার অনেক শিশুই হয়ত জানে না,” বললেন ত্রিগুণা। “তাই কয়েকটা বাড়ির দেওয়ালে আমরা সেগুলো তুলে ধরেছি। আবার অনির্বাণদার বাড়ির সামনে রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের ছবি।”

এছাড়াও ২০২০ সালে হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্ররা, যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুশান্ত সিং রাজপুত, গিরিশ কারানডদের ছবিও রয়েছে অনির্বাণের বাড়ির দেওয়ালজুড়ে।

আরও পড়ুন: জটায়ুর সাহস

ঝাড়গ্রামের খোয়াব গাঁয়ের অনুকরণে নিজের পাড়াকে সুন্দর করতে চেয়েছিলেন অনির্বাণ। ইঁট, কাঠ, কংক্রিটের জঙ্গলে একটু নান্দনিকতার ছোঁয়া দেওয়ার এই কর্মযজ্ঞ প্রায় আড়াই মাস ধরে চলেছে। গতবছর দুর্গাপুজোর পঞ্চমী থেকে কাজ শুরু করেন চার শিল্পী। শেষ হয় ডিসেম্বরে।


এই বিরাট কর্মযজ্ঞের পিছনে অর্থের যোগান এল কীভাবে? এখানেও এগিয়ে আসেন অনির্বাণ। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল এই ছবিগুলো যেন দীর্ঘদিন থাকে। তাই প্রত্যেকটি ছবির ওপর ওয়েদার কোট করানো হয়েছে। “রঙের খরচের অনেকটাই পাড়ার ক্লাব থেকে দেওয়া হয়েছিল। বাকি অর্থ এবং আমাদের পারিশ্রমিক দিয়েছেন অনির্বাণদা। শেষের দিকে কিছু রং এবং অন্যান্য খরচ আমরা নিজেরাই করি,” জানালেন ত্রিগুণা।

সব মিলিয়ে আপাতত কলকাতার বুকে এই উদ্যোগ এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। 

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *