‘ভালো চরিত্রের অভাব আমার কোনওদিন হবে না’
গত কয়েক বছরে ছোট ও বড় পর্দায় শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন অম্বরিশ ভট্টাচার্য। শুরুতে কমিক চরিত্রে অভিনয় করলেও ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ধারাবাহিকের কাজ করতে করতেই বাংলা ছবির জগতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন তিনি। সম্প্রতি ‘গোত্র’ ছবির পঁচিশ দিন পূর্তির অনুষ্ঠানে পাকড়াও করা গেল অভিনেতাকে। একান্ত সাক্ষাৎকারে রেডিওবাংলানেট-কে অম্বরিশ জানালেন তাঁর অভিনয় জীবনের নানান উপলব্ধির কথা।
পরের পর ছবিতে কোথাও গোয়েন্দা আবার কোথাও পুলিশের চরিত্রে তোমাকে দেখা যাচ্ছে। ‘গোত্র’তে যেমন তুমি পুরোহিতের চরিত্রে অভিনয় করেছ। এত রকম চরিত্রের জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করো?
আমি উত্তর কলকাতার মানুষ। তাই ছোট থেকে প্রচুর মানুষ দেখেছি। ঘরে বসে থাকার ছেলে কোনওদিনই ছিলাম না। কোনও বাঁধাধরা ছকের বন্ধুগোষ্ঠী ছিল না আমার। সকলের সঙ্গে মিশতাম। আর উত্তর কলকাতায় অনেক ধরণের মানুষ এমনিই দেখা যায়। সেখানে কেউ পুরোহিত, কেউ বা পুলিশ কেউ আবার খুব হাবাগোবা একটা লোক। তাই অভিজ্ঞতা থেকেই এই চরিত্রগুলো তুলে আনতে আমার অসুবিধা হয় না। আর আমি চেষ্টা করি ভালো পরিচালকদের ছবিতে কাজ করতে, তাতে করে তাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি থাকে ওই চরিত্রের প্রতি সেটাও আমাকে অনেকটা সাহায্য করে।
ভালো পরিচালক মানে কি যাঁদের ছবি হিট করে?
ঠিক তা নয়। আমি নানান পরিচালকের সঙ্গে কাজ করি। এ বছরেও করেছি। তার মধ্যে এমনও অনেকে আছেন যাদের ছবি হয়ত সেইভাবে হিটের তালিকায় পড়ে না। কিন্তু তাঁরা ভালো ছবি বানান। বরং আমার কাছে তাঁরা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাঁদের সঙ্গে আমার মানসিকতায় মেলে। আর আমি যাঁদের ছবিতে বিশ্বাস রাখি। সেক্ষেত্রে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিতে চরিত্রটা কেমন হওয়া উচিত সেটা আমাকে সাহায্য করে। আর বাকিটা আমার দেখা আর শোনা, যেভাবে আমি বিভিন্ন মানুষকে দেখি বা দেখেছি, সেভাবেই সাজিয়ে নিই চরিত্রটাকে।
এখনও পর্যন্ত কত রকমের চরিত্রে অভিনয় করেছ?
একটা সময় পর্যন্ত আমি কমিক চরিত্রই পেতাম। যেহেতু আমার প্রথম কাজ কমিক চরিত্র দিয়েই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কোনও চরিত্রে সফল হলে তাকে সেটার মধ্যে বেঁধে ফেলার একটা প্রবণতা দেখা যায়। তবে এখন আমি যে ধরণের কাজগুলো পাচ্ছি সেখানে কমিক ব্যাপারটা থাকলেও সেই চরিত্রে অন্য শেডও থাকে। সেটা ‘সামসারা’ বা ‘শান্তিলাল ও প্রজাপতি রহস্য’র মতো ছবিতে ছিল। কিছুদিন বাদেই আসছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মী ছেলে’। সেখানে আবার খুব সিরিয়াস একটা চরিত্র করছি। এই ধরণের চরিত্র পাওয়ার জন্য আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় সাত-আট বছর। ভালো লাগেনি বলে অনেক চরিত্র রিজেক্টও করেছি।
আরও পড়ুন: পঁচিশে ‘উনিশে এপ্রিল’
তার মানে কি এখন পছন্দের চরিত্র বেছে নিতে পারছ?
একটা সময় আমি প্রচুর বাজে কাজ করেছি, করতে হয়েছে বলেই। কিন্তু সেগুলো করার সার্থকতা একটাই, কাজগুলো করে আর্থিক দিক থেকে আমার কিছুটা লাভ হয়েছে। তাই এখন সেরকম কাজগুলোকে ‘না’ বলতে পারার জোরটা আমার আছে। আর তাছাড়া আমার সঙ্গে সকলের সম্পর্কই ভালো। সব হাউজ়ের হয়েই কাজ করি। তাই চরিত্র বেছে নিতে গিয়ে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আর নানান ধরণের পছন্দের চরিত্রে কাজ করতে আমারও খুব ভালে লাগছে।
অভিনেতাদের কিছু স্বপ্নের চরিত্র থাকে। এমন কোনও চরিত্র আছে যেটায় অভিনয় করার ইচ্ছে আছে?
সেভাবে আলাদা করে কোনও চরিত্রের কথা ভাবিনি কখনও। তবে আমি তরুণ কুমারের খুব ভক্ত বরাবরই। ওঁর চরিত্রে কখনও অভিনয় করার সুযোগ পাব ভাবিনি (‘মহানায়ক’ ধারাবাহিকে)। ওটা একটা প্রিয় চরিত্র আমার। খুব ভালো লেগেছিল ওটা করতে। এছাড়া তেমন কোনও স্বপ্নের চরিত্র নেই। আসলে কোন চরিত্র আসবে না আসবে, অত ভাবলে ডিপ্রেশন হয়ে যেতে পারে। তাই ওগুলো নিয়ে ভাবি না। আমার বাংলা ছবির পরিচালক, প্রযোজক ও কাহিনীকারদের ওপর অগাধ ভরসা আছে যে তাঁরা আমাকে ভালো চরিত্র দিতে থাকবেন। ভালো চরিত্রের অভাব আমার কোনওদিন হবে বলে মনে হয় না।
আরও পড়ুন: সত্যজিৎ ও রেলভূত
প্রচুর ছবিতে কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকেও নিয়মিত অভিনয় কর তুমি। ব্যালান্স করতে অসুবিধা হয় না?
এই মুহূর্তে একটাই মেগা-ধারাবাহিক করছি আমি। মাঝে দু’বছর সিরিয়ালের কাজ করিনি। আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করি, তাঁদের বলাই থাকে ছবির কাজের জন্য আমাকে দরকারে ছুটি দিতে হবে। সেটা তাঁরা দেনও। মেগা করি মানুষের কাছাকাছি থাকার জন্য। আমার ভালো লাগে কাজটা করতে। মাঝে অনেকদিন করিনি বলে খালি খালি লাগছিল।
মেগার কাজে অভিনয়ের সুযোগ কতটুকু থাকে?
আমি আমার মতো করে গড়ে নিই চরিত্রটাকে। আর এতে করে নিয়মিত অভিনয়ের প্র্যাকটিসটাও হয়ে যায়। প্রতিদিন ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, একটা লম্বা সংলাপ বলা, এগুলো আমার অনুশীলনে সাহায্য করে। চরিত্র যাই হোক সেটাকে আমি আমার মতো করে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলি। সেটাই আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় তখন।
ছবি: অর্ক গোস্বামী