“যেখানে চ্যালেঞ্জ সেখানেই আমার খিদে বেশি”

বর্ষশেষের শীতের আমেজ মেখে  মুক্তি পেতে চলেছে ইন্দিরা ধর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘পুতুল’, যেখানে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন মুমতাজ সরকার (Mumtaz Sorcar)। ছবির বিষয়বস্তু বেশ অভিনব। ছবি মুক্তির আগে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে অভিনেত্রীর দাবি, যেখানে চ্যালেঞ্জ, সেখানেই তাঁর খিদে বেশি।

প্রশ্ন: অনেকদিন পর রূপোলি পর্দায়!

মুমতাজ: অনেকদিন বলতে, কয়েকমাস পর। তিন মাস আগেই মুক্তি পেয়েছিল বানতলা ধর্ষণকান্ড নিয়ে ছবি ‘দ্য রেড ফাইলস’। তার আগে সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’। ওটা ভালো ব্যবসা করেছিল। তার আগে হিন্দি ছবি ‘সাবাশ মিঠু’ করলাম। যেখানে তাপসী পন্নু ছিল ক্রিকেটার মিতালী রাজের চরিত্র। আমি ঝুলন গোস্বামীর চরিত্রে ছিলাম। প্রত্যেক মাসে তো আর ছবি বেরোয় না। তাছাড়া প্রত্যেকটা কাজের জন্য তো একটা হোমওয়ার্ক লাগে। অভিনয়ের দিক থেকে আমি নিজেকে কী করে আরও পরিণত করতে পারি সেটার জন্য হোমওয়ার্ক জরুরি।



প্রশ্ন: যেমন ‘পুতুল’?

মুমতাজ: আমার মনে হয় ক্রিয়েটিভিটির জন্য সময় লাগে। আর সেই সময়টা আমি নিজেকে দিই। আমি বরাবরই সিলেক্টিভ। শেষ বয়সে গিয়ে যখন ফিরে তাকাব, তখন যেন আলাদা-আলাদা চরিত্রে নিজেকে দেখতে পাই, এটাই আমার ইচ্ছে। ইন্দিরা আমাকে কয়েক বছর আগে ‘পুতুল’-এর গল্প বলেছিল। এবং ভেলি চরিত্রের জন্যই আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছিল। তখনও গল্প সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু ছবির ভাবনা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি ইন্দিরাকে বলেছিলাম, তুমি যদি কুড়ি বছর পরেও এই ছবি করো, আমি কিন্তু ভেলি চরিত্রটাই করব। তারপর তো একদিন ফোন পেলাম ইন্দিরার।

আরও পড়ুন: বাজিকা ভাষায় প্রথম ছবি, সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেলেন আরিয়ান

প্রশ্ন: ভেলি একজন স্ট্রিট মাদার এবং সিঙ্গল প্যারেন্ট। চরিত্রটা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

মুমতাজ: প্রথমে বলি এরকম চরিত্র সকলে পান না। পেলেও, করতে রাজি হন না। কারণ এটা চ্যালেঞ্জিং। আর সকলেই জানেন, যেখানে চ্যালেঞ্জ সেখানেই মুমতাজের খিদেটা অনেক বেশি। ‌ইন্দিরা তো আগেই অনেক রিসার্চ করেছিল। ‌আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল ভেলি হয়ে ওঠা। দেখো, আমরা সবাই আলাদা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। অভাব দেখিনি। আমাদের জীবনে তিনবেলা খাবার খাওয়ার লাক্সারিটা আছে। মাথার উপর একটা ছাদ আছে। শিক্ষা আছে। কিন্তু ভেলির এসব কিছুই নেই। ছবিটা হাতে পাওয়ার পর আমি যখনই রাস্তায় বেরিয়েছি, সে দেশে থাকি বা বিদেশে, আমি ভেলিদের অবসার্ভ করেছি। ওরা কীভাবে কথা বলে, কীভাবে রিয়্যাক্ট করে। ওদের শরীরী ভাষা, সবকিছু বোঝার চেষ্টা করেছি। আর একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গ্রুমিং। আমরা সবাই নিজেদের খুব পলিশড রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু ভেলি একজন রুক্ষ মানুষ। পর্দায় সেটা ফুটিয়ে তোলা কঠিন ছিল। পাশাপাশি ভেলি দুই সন্তানের মা। ওটাও কম চ্যালেঞ্জিং নয়।

Mumtaz Sorcar

পরিচালক ইন্দিরার সঙ্গে

প্রশ্ন: এই ছবির শুটিং কোথায় হয়েছে?

মুমতাজ: গতবছর পুজোর অষ্টমীতে ছবির মহরৎ হয়। শুটিং হয়েছে কলকাতা জুড়েই। ওই পুজোর সময় কলকাতার সব রাস্তা পরিষ্কার ছিল। কারণ শুটিং করতে গিয়ে সারা রাস্তা ঝাড়ু দিয়েছি আমি। কলকাতা পৌরসভা থেকে আমাকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া উচিত (হেসে)। শুধু তাই নয়, শহরের নাগরিকরা পানের পিক, গুটখা, কফ, থুতু দিয়ে শহরে যেসব আলপনা দিয়ে রাখেন, তার মধ্যে বসেই শুটিং করতে হয়েছে। শুধু আমাকে নয় বাচ্চা মেয়েটিকেও। মুমতাজ হলে হয়তো বলে উঠত, সো ডার্টি! কিন্তু ভেলি সেটা বলতে পারত না। কারণ ওটাই ওর জগৎ, ওই ফুটপাথেই ওর সংসার।

আরও পড়ুন: বাস্তুচ্যুত প্রান্তজন, নর্মদা ‘পরিক্রমা’য় দেখালেন গৌতম

প্রশ্ন: নতুন আর কোন ছবিতে কাজ করছ?

মুমতাজ: মুম্বই-কলকাতা মিলিয়ে কাজ করছি। একটি হিন্দি ছবি ফ্লোরে রয়েছে। দক্ষিণের একটা ছবি মুক্তি পাবে। তবে সেটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না। একটা বাংলা ছবির শুটিং শেষ হয়েছে। নাম ‘ফেয়ার অ্যান্ড আগলি’। এছাড়া অশোক বিশ্বনাথনের একটি ছবির কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ চলছে, মুমতাজ থেমে নেই।

প্রশ্ন: বাংলায় তোমার কাজ কম। সে নিয়ে কোনও আফসোস আছে?

মুমতাজ: হ্যাঁ এবং না। আমার মনে হয় অভিনেত্রী মুমতাজকে আরও বেশি এক্সপ্লোর করা যেত। তবে আমি পরিচালকদের দোষও দিই না। এর পেছনে একটা নেটওয়ার্ক কাজ করে। সেই নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য যে খেয়োখেয়ি করতে হয়, সেটা আমি কোনওদিন করিনি। আর্টিস্ট যখন গেমে ঢুকে যায়, তখন আর্ট হারিয়ে যায়। যতটুকু কাজ আমার কাছে এসেছে, তা সম্পূর্ণ অর্গানিকভাবেই। ভগবান আমার প্রতি সদয়, এটুকু বলতে পারি।

আরও পড়ুন: ২২ বছর পর মুক্তি পেতে চলেছে অনুরাগের ছবি

প্রশ্ন: আর প্রেম-বিয়ে?

মুমতাজ: আপাতত ছবির সঙ্গেই প্রেম করছি। তবে বাবা-মা বিয়ে দিতে চাইছে।

প্রশ্ন: সরকার বাড়ির মেয়ের বিয়ের বিজ্ঞাপন নিয়ে তো হইচই!

মুমতাজ: এতদিন গা বাঁচিয়ে চলছিলাম এবার বাবা-মা আমাদের তিন বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বিয়ে ব্যাপারটা বেশ সুন্দর। বাবা-মাকে দেখেছি। ওরা প্রেমিক, পার্টনার ইন ক্রাইম। একসঙ্গে পারফর্ম করেছে, এতবড় একটা এম্পায়ার তৈরি করেছে। এগুলো দেখেই আমরা বড় হয়েছি।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *