হোপ ‘৮৬-এর ঘোরতর বিরোধী ছিলেন মৃণাল সেন, স্মৃতিচারণায় দেবপ্রতিম
RBN Web Desk: নিজে বামপন্থী মনোভাবাপন্ন হলেও ১৯৮৬ সালে বামফ্রন্ট সরকার আয়োজিত হোপ ‘৮৬ কনসার্টের ঘোরতর বিরোধী ছিলেন মৃণাল সেন। পরিচালকের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সিনে সেন্ট্রাল ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণে বললেন অভিনেতা দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত।
মৃণাল পরিচালিত ‘চালচিত্র’ ছবি দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়। এরপর ‘খারিজ’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন তিনি।
সে সময় সদ্যনির্মিত সল্টলেক স্টেডিয়ামে দুঃস্থ টেকনিশিয়নদের সাহায্যার্থে মুম্বইয়ের চিত্রতারকা ও সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে এসে এক বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন সুভাষ চক্রবর্তী। সেই নিয়ে বিদগ্ধ মহলে, এমনকী বামফ্রন্টের অন্দরমহলেও প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল। সেই নিয়ে বিরক্ত ছিলেন স্বয়ং মৃণালও।
দেবপ্রতিম জানালেন, “আমাদের বাড়িতে মৃণালজেঠু এসেছিলেন একটা অ্যাম্বাসাডর গাড়ি করে। আমি তখন অনেক ছোট। কে মৃণাল সেন সেটা বোঝার মতো বয়স আমার তখন হয়নি। শুধু মনে আছে পাঞ্জাবি আর চোস্ত পায়জামা পরা লম্বা আর সাদা জুলপিওয়ালা একজন মানুষ এলেন বাড়িতে। আমাকে বললেন, এরকম একটা কাজ আছে, তুই পারবি? বললাম, হ্যাঁ পারব।”
আরও পড়ুন: এত ‘অরণ্য’ কেন?
এরপর খুদে অভিনেতাও যেমন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি তেমন পরিচালকও কিছু বলেননি কী করতে হবে। শ্যুটিং হতো অরোরা স্টুডিওতে।
“একটা বাড়ির সেট বানানো হয়েছিল যেটা ওই সময় আসল বাড়ি ছাড়া কিছু মনে হতো না আমাদের,” বললেন দেবপ্রতিম। “উনি কোনওদিন বলেননি, এটা হয়নি বা ওটা হচ্ছে না। বলতেন, খুব ভালো হয়েছে, আর একবার করবি? তবে আমরা এত বিরক্ত করতাম যে উনি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। একদিকে শট চলছে আর অন্যদিকে আমরা ক্রিকেট খেলছি। আমার অটোগ্রাফ খাতায় এখনও ওঁর সই আছে, ‘হনুমান দাশগুপ্তকে মৃণাল সেন’। আমাকে ওই নামেই ডাকতেন উনি।”
শ্যুটিংয়ের লাঞ্চ ব্রেকে এখনকার মতো কোনও অভিনেতার জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল না। সকলের জন্য টানা বেঞ্চ পেতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হতো।
দেবপ্রতিমের স্মৃতিচারণে উঠে এলো শ্যুটিংয়ের খুঁটিনাটিও। জানালেন, “মৃণালজেঠু নিজেও সকলের সঙ্গে বসে খেতেন। তাঁর পাশে হয়তো লাইটম্যান বা ইউনিটের সাফাইকর্মীও বসে যেতেন। যাঁরা পরিবেশন করতেন তাঁরা ছাড়া প্রত্যেকে একই লাইনে বসে খেতেন, এটাই নিয়ম ছিল। মুম্বইয়ের অভিনেতা আমোল পালেকর আসতেন শ্যুটিং দেখতে। তিনিও ওইভাবেই আমাদের বসে খেতেন সঙ্গে। সিনেমাটা যে একটা সম্মিলিত শিল্প, সেটা ওই খাবার জায়গায় বুঝিয়ে দিতেন মৃণালজেঠু।”
পরবর্তীকালে তাঁর মৃণাল সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লেও ,পরে রাজনৈতিক কারণেই তা কমেছিল বলে জানালেন দেবপ্রতিম। “তখন সদ্য কলেজে এসএফআই করছি,” বললেন দেবপ্রতিম। “হোপ ‘৮৬ উপলক্ষে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছিল। আশুতোষ কলেজের ছাত্র হিসেবে আমার দায়িত্ব পড়েছিল মৃণালজেঠুর বাড়ি গিয়ে তাঁর সাক্ষর সংগ্রহ করার। সেদিন তিনি আমাকে যা-যা বলেছিলেন সেগুলো এখন আর না বলাই ভালো।”
গুরু-শিষ্যের মধ্যে মনোমালিন্য হলেও যোগাযোগ ছিলই। পরে দূরদর্শনের একটা কাজের সূত্রে দুজনের দেখা হয়েছিল। দেবপ্রতিম বললেন, “তখন অনেকে বলতেন, উনি নাকি সব ভুলে যাচ্ছেন। আমার সৌভাগ্য আমাকে দেখে চিনতে পেরেছিলেন। জিজ্ঞাসা করেছিলেন, হরি, ভালো আছিস?”
ছবি: ‘পালান’-এর লুকসেট থেকে