ফিরল নিশ্চিন্দিপুর, তবু দাগ কাটল না

ছবি: আমি ও অপু

পরিচালনা: সুমন মৈত্র

অভিনয়ে: প্রকৃতি পূজারি, ঈশান রানা, সৌমিত্র ঘোষ, আনন্দ চৌধুরী, পার্থ মুখোপাধ্যায়, অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, অমৃতা হালদার, ধ্রুব দেবনাথ, আরাত্রিকা গুহ, সুশীল শিকারী

দৈর্ঘ্য: ১ঘন্টা ৪৬ মিনিট

RBN রেটিং: ২.৫/৫

জসীমউদ্দিনের নকশী কাঁথার মাঠ হোক কিংবা জীবনানন্দ দাশের ধানসিঁড়িটির তীর, পল্লীবাংলার রূপ বরাবরই আমাদের আকৃষ্ট করে। শহুরে রোজনামচার তাল কেটে গিয়ে মাঝেমধ্যে এক টুকরো ধানক্ষেত বা দিঘির জলে পানকৌড়ির ডুব এসব বড়ই ভালোলাগার জায়গা। তাই দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বহু বাঙালির মনে বেঁচে থাকে একটাই কথা, ‘আবার আসিব ফিরে’। পরিচালক সুমন মৈত্র সেই পল্লীবাংলার এক জলছবি তুলে ধরলেন তার নতুন ছবি ‘আমি ও অপু’তে।




বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস যেন সেই নমো নমো নমো সুন্দরী মম, জননী বঙ্গভূমির জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আর এই বিভূতিভূষণের পল্লীবাংলাকেই বিশ্ব দরবারে স্থান দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’র মাধ্যমে। এই গল্পের অপু-দুর্গা যেন বাংলার ঘরে-ঘরে থাকা প্রতিটি ভাইবোনের প্রতীক। সেই অপু-দুর্গাই ফের ‘আমি ও অপু’ তে ফিরে এল ভিন্ন রূপে। মা-বাবাকে হারানো ভাইবোনের একমাত্র সম্বল তাদের কাকা নেপাল। সামান্য ওষুধের ব্যবসায়ী নেপালের একমাত্র স্বপ্ন অপুকে সুস্থ করে তোলা। ছোট থেকেই কনজেনিটাল হৃদরোগে আক্রান্ত অপুর তাৎক্ষণিক অপারেশন না হলে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু সেই অপারেশনের খরচ প্রবল। জোগাড় করবে কী করে নেপাল? নাকি এখানেই ঘুরে যাবে গল্পের মোড়? আসল উপন্যাসে দুর্গাকে হারিয়েছিল অপু। প্রবল জ্বরে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।

আরও পড়ুন: মাধুরী, মাসাবার সঙ্গে একই সিরিজ়ে স্বস্তিকা

বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস এবং সত্যজিতের মাস্টারপিস ‘আমি ও অপু’র প্রেরণা। সম্পূর্ণ সাদাকালোয় একের পর এক দৃশ্য যেন নিখুঁত ল্যান্ডস্কেপ। এমনকী কালার টোনও চোখকে আরাম দেয়। চিনিবাস ময়রার নিয়ে আসা মিষ্টির লোভে তার পিছনে ছুটত বিভূতিভূষণের অপু-দুর্গা। সুমনের ছবিতে এক আইস্ক্রিমওয়ালার গাড়ির পিছনে তাদের ছুটতে দেখা গেল। বড় মন ভালো করা সে দৃশ্য।

ছবির সংলাপের অধিকাংশে রয়েছে কবিতার মেলবন্ধন। তবে শিল্পীদের সংলাপ বলার ধরণে খামতি থেকে যাওয়ায় সেগুলি উপভোগ্য হয় না। সুমনের ছবির বেশিরভাগ অভিনেতাই নবাগত। তাঁদের প্রচেষ্টা ভালো হলেও দর্শকমমে দাগ কাটতে পারে না। তবু তারই মধ্যে ভালো লাগে নেপালের ভূমিকায় আনন্দর অভিনয় এবং অপুর চরিত্রে ঈশানের সারল্য। চোখে পড়ে পাগলের ভূমিকায় সৌমিত্রের অভিনয়। তবে রমেনদার চরিত্রে সুশীলের অভিনয় বেশ চড়া মাপের।

আরও পড়ুন: হাফপ্যান্ট পরে অভিনয়, কিশোরের প্রস্তাবে সত্যজিতের অট্টহাসি

এছাড়া আরও কয়েকটি খুঁত চোখে পড়ল। আনন্দর বাড়িতে স্মার্টফোন রয়েছে কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। কনজেনিটাল হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ ফুটে ওঠেনি অপুর চেহারা। সর্বক্ষণ হেঁটে দৌড়ে, বেড়ানো প্রাণবন্ত একটি ছেলের শরীরে এরকম মারণরোগ যে বাসা বেঁধে আছে, তার কোনও মেডিক্যাল সিম্পটম দেখাননি পরিচালক। এরকম একজন রোগী, যার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রপোচার না করালে ছ’মাস মাত্র আয়ুকাল, তার এরকম দৌড়াদৌড়ি বা লাফালাফি করা বোধহয় সম্ভব নয়। এমনকি এরকম একটা রোগের অস্ত্রপোচার যে কোনও হাসপাতলই একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে।

বাপ্পাদিত্য শুভ্রর পরিচালনায় ছবির আবহসঙ্গীত ভালো হলেও মনে রেশ রেখে যায় না।

একদম অন্যধারার ছবি ‘আমি ও অপু’। সব দর্শকদের জন্য এ ছবি হয়তো নয়। সুমনের ক্যামেরায় ফিরল নিশ্চিন্দিপুর, ফিরল সেই মাঠ, কাশবন, অপু-দুর্গা। সেই ছেলেবেলাকে ফিরিয়ে আনতে চাইলে একবার দেখাই যায় ‘আমি ও অপু’।



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *