পুজোর আবহে জমাটি অ্যাডভেঞ্চার
ছবি: দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন
পরিচালনা: ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়
অভিনয়ে: আবীর চট্টোপাধ্যায়, ইশা সাহা, অর্জুন চক্রবর্তী, কৌশিক সেন, লিলি চক্রবর্তী, আরিয়ান ভৌমিক, খরাজ মুখোপাধ্যায়, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ১৩ মিনিট
RBN রেটিং: ৩.৫/৫
আবির (অর্জুন) ও ঝিনুককে (ইশা) সঙ্গে নিয়ে এবার দুর্গেশগড় অভিযানে সোনাদা (আবীর)। তবে অভিযান না বলে সন্ধান বলাই ভালো। ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই এই ছবির গল্প শুরু। সোনাদার ছাত্র ডাম্বেল (আরিয়ান) দেশের বাড়ির পুজোয় নিমন্ত্রণ করে তিনমূর্তিকে। ছাত্রের পূর্বপুরুষ দুর্গাগতি দেবরায় আর তার সঙ্গে ইতিহাসের যোগাযোগ সোনাদা আগেই ধরে ফেললেও, সেই টানই আরও বেশি করে দুর্গেশগড় যাওয়ার তাগিদ যোগায়।
এ গল্প লিখে বোঝান মুশকিল এবং তা অনুচিতও। তবে নিঃসন্দেহে সিরাজউদ্দৌলা ও জগৎ শেঠের কাহিনী এই ছবির ভিত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসের রেশ। কাহিনীকার শব্দ নিয়ে খেলা করেছেন, সৌমিক হালদারের ক্যামেরা চোখ ভরিয়েছেন, আর পরিচালক ধরে রেখেছেন টানটান উত্তেজনা।
ছবির শুরু চুরি যাওয়া এক ঐতিহাসিক ছুরি নিয়ে, পরবর্তীকালে যা হয়ে ওঠে রহস্য সমাধানের চাবিকাঠি। দুর্গেশগড় পৌঁছে জানা যায়, জগৎ শেঠের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল ধনরত্ন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র দিয়ে যান তাঁর অভিন্নহৃদয় বন্ধু দুর্গাগতিকে। বাড়ির পুজোর রীতিনীতির মধ্যে দুর্গাগতি রেখে যান সেই গুপ্তধনের ক্লু।
ফেলুপুজো ও বাঙালির হা-হুতাশ
সোনাদার এবারের গুপ্তধন অভিযান খুব মসৃণ ছিল সেটা অবশ্য বলা যায় না। দেবরায় পরিবার সোনাদা ও তার দুই সঙ্গীকে স্বাগত জানালেও, বংশের অন্য এক সদস্য হামেশাই সন্দেহ জাগায়।
ছবিতে আবির-ঝিনুক রসায়ন থেকে শুরু করে দুর্গাপূজার আচার অনুষ্ঠান, ভোজনরসিক বাঙালিয়ানা থেকে সোনাদার সেনস অফ টাইমিং, অদ্ভুত এক ভালো লাগা তৈরি করে।
পঁচিশে ‘উনিশে এপ্রিল’
অভিনয়ে লিলি, অনিন্দ্য, জুন মালিয়া যথাযথ। একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কৌশিক অনবদ্য। কচি সদস্য ‘কুচো’ (আসলে সে পরিচালকের নাতি) বড়ই আদুরে। আবীর চলনে বলনে সত্যিই সোনাদা। ‘সোয়েটার’-এর পর ইশা এ ছবিতে বেশ ঝকঝকে, অভিব্যক্তি চমকপ্রদ। তবে গোবেচারা উকিলবাবুর চরিত্রে তাক লাগিয়ে দেন অর্জুন। ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’র থেকে এই ছবিতে তিনি আরও সপ্রতিভ। অর্জুন এ ছবিতে আগের থেকে অনেক বেশি অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন এবং তা ভরপুর কাজে লাগিয়েছেন।
তবে বলতেই হয় এই ছবির শ্রেষ্ঠ চমক অপুদা চরিত্রে খরাজ। সাম্প্রতিককালে অন্য কোনও ছবিতে তাকে এভাবে আবিস্কার করা হয়নি। সোনাদার গুপ্তধন অভিযানে অপুদার অংশগ্রহণ মনে রাখার মত। শুধু ভালুকবাবাজিকে কেন রাখা হল, সেটাই বোঝা গেল না।
তাশি গাঁওয়ে একদিন
গল্প যত এগোয়, দানা বাঁধতে থাকে সন্দেহ। কিন্ত ক্লাইম্যাক্সে ট্যুইস্টের ঝটকা বেশ একটু বিষম খাইয়ে দেওয়ার মত। গ্রাফিক্স এই ছবির সম্পদ। গানের মাধ্যমে সংকেতের ব্যবহারও চমক জাগায়। কিন্তু গুপ্তধনের মূল বিষয়টা আরও একটু ধাঁধালো হলে, সন্ধানের নেশাটা জোরালো হত। দৃশ্যপট অসাধারণ, সম্পাদনাও চমৎকার। তবে জঙ্গলের দৃশ্যগুলো আরও রোমহর্ষক হতে পারত।
তবে সে যাই হোক, আট থেকে আশি যারা বড় পর্দায় রহস্য অ্যাডভেঞ্চারের গল্প দেখতে ভালোবাসেন, এ ছবি তাদের। ইতিহাসের পাতায় চোখ রেখে, বাংলা ভাষায় বাঙালির ছবি ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’। পরিচালকের সাধুবাদ প্রাপ্য।
মনিকান্তপুর যদি আবির-ঝিনুক সম্পর্ককে নিশ্চিত করে থাকে, তাহলে এ ছবির একেবারে শেষ দৃশ্য সোনাদার রোমান্টিক দিকের আগাম ইঙ্গিত দিয়ে গেল।