বিষয় নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক

ছবি: অপরাজিতা

পরিচালনা: রোহন সেন

অভিনয়ে: তুহিনা দাস, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, দেবতনু, অমৃতা দে, রানা বসু ঠাকুর

দৈর্ঘ্য: ১ ঘন্টা ৪৮ মিনিট

RBN রেটিং: ২.৫/৫

বাবা-মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ সবসময়ই আলাদা। একটি মেয়ের চোখে তার বাবা-ই বাস্তবের নায়ক। বাজার করা, সাইকেল চালানো কিংবা পুকুরমাঝে হাবুডুবু খেতে-খেতে সাঁতার কাটতে শেখাও বাবার হাত ধরে। অপু অর্থাৎ অপরাজিতার (তুহিনা) গল্পটা এখানেই ব্যতিক্রম। ছোট থেকেই অপু মা-ঘেষা। বিয়ের পর দিদি চলে যায় বিদেশে। যোগাযোগ থাকলেও দুই বোনের সম্পর্ক খুব সহজ নয়। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই অপু তার বাপির (শান্তিলাল) সঙ্গে সরাসরি কথা বলা বন্ধ করে দেয়। দুজনে একই বাড়িতে থাকলেও বহুকাল তাদের দেখা হয় না। সকাল থেকে উঠে বাড়ির সমস্ত কাজ সেরে, সবটা গুছিয়ে রেখে অফিস যায় অপরাজিতা, যাতে তার বাপির কোনও অসুবিধা না হয়। অথচ বাবা-মেয়ের সম্পর্কে এমন অভিমানের ঠান্ডা স্রোত যে বাইরে থেকে অপরাজিতার দিদি বা বন্ধু সাহেব (দেবতনু) কেউই কিছু করে উঠতে পারে না। সেই অভিমান জমতে থাকে ডায়েরির পাতায়। বাবার অবর্তমানে অপুর হাতে আসে সেই ডায়েরি এবং সেখান থেকেই ফ্ল্যাশব্যাকে ছবি শুরু হয়।




তুহিনা এই ছবির তুরুপের তাস। প্রায় পুরোটাই তাঁকে ঘিরে আবর্তিত। অত্যন্ত সাবলীল অভিনয় করলেন তিনি। বিপরীতে শান্তিলাল ভালো, তবে বেশিরভাগ সময় পরিচালক তাঁকে অসুস্থ দেখিয়ে অভিনয় করার সুযোগ দিলেন না। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের জটিলতা যতটা ফুটে উঠল তুহিনার অভিনয়ে, ততটা ছাপ ফেলতে পারলেন না শান্তিলাল। দেবতনুর প্রচেষ্টা ভালো, কিন্তু তুহিনার সামনে বড়ই ফিকে।

যে কোনও ছবির মূল উপাদান ছবির বিষয়বস্তু, চিত্রনাট্য। এক্ষেত্রে তা খুব একটা নতুন নয়। খালি চোখে চিত্রনাট্যের বেশকিছু গরমিল ধরা পড়ে। যেমন, সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়িতে বড় দাদা বা দিদি থাকলে তাদের শুনে শুনেই ছোটরা সম্মোধন করতে শেখে। কিন্তু এখানে অপুর দিদি এবং অপু, তাদের বাবাকে ভিন্ন নামে সম্বোধন করে। আবার, গুরুতর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা সেরিব্রাল অ্যাটাক না হলে সাধারণ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে আগে থেকেই কিছু লক্ষণ রোগীর শরীরে প্রকাশ পায়। তেমন কিছুই এখানে দেখানো হয়নি। রুটিন চেকআপে এসে সবকিছু ঠিক দেখা সত্ত্বেও ডাক্তারবাবু শুধুই ব্যবসায়িক স্বার্থেই ওষুধ লিখে দিলেন কিনা, বোঝা গেল না। বা ঘর-গেরস্থালির পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখা অপু, ডাক্তারকাকুর ফোন পাওয়া সত্ত্বেও অফিস থেকে ফিরে কেন প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইল না, সেটাও বোধগম্য হলো না।

আরও পড়ুন: ওয়েব সিরিজ়ে শেখর কাপুর

এছাড়াও ছবিতে কন্টিন্যুইটি বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ‘অপরাজিতা’য় সেই ত্রুটিও চোখ এড়িয়ে গেল না। একটি দৃশ্যে দেখা গেল, অফিসে যাওয়ার আগে অপু তার বাপির চা করে, কাপে ঢেলে, চাপা দিয়ে রেখে যাচ্ছে। পরে দেখা গেল ঘুম থেকে উঠে তার বাপি আবার কাপে চা ঢেলে খাচ্ছে। অপুর জন্মদিনের আগের রাত্রে একসঙ্গে খাবার টেবিলে খেতে বসে অপুর মাংস রান্নার প্রশংসা করেন তার বাবা। অথচ ছবিতে দেখা গেল ডিমভরা ইলিশ মাছ খাওয়ার দৃশ্য, মাংসের বাটি কার্যত টেবিলেই পড়ে থাকল।

গোটা ছবির বেশিরভাগটাই যে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হচ্ছে তা বোঝা যায় অনেক পরে। অতীত এবং বর্তমানকে একই ফ্রেমে দেখানো যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সায়ন্তন সেনের সম্পাদনায় সেই ফাঁক থেকে গেছে।



‘অপরাজিতা’র সঙ্গীত পরিচালানা করেছেন কৃষ্ণেন্দু আচার্য। ছবির বিষয়বস্তু আদৌ আবহে ফিউশন দাবি করে কিনা সেটা বোঝাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের যন্ত্রসঙ্গীত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানে বোধহয় না করলেও চলতো। তবে আবহে প্রতীক শ্রীবাস্তবের সরোদ, বাবা-মেয়ের সম্পর্কে প্রাণ এনে দেয়। ছবির তিনটি গান গেয়েছেন অনুপম রায় ও অমৃতা দে।

বিষয় নির্বাচনে রোহনের দ্বিতীয় ছবি ‘অপরাজিতা’ প্রাসঙ্গিক। তবে পরিচালনার পাশাপাশি পরিচালকের কাঁধে আরও অনেকগুলো দায়িত্ব থাকে। চিত্রনাট্যের বুনন, সংলাপে বৈচিত্র্য সর্বোপরি অভিজ্ঞতায় পাক ধরাতে পরিচালককে এখনও অনেকটা পথ পেরোতে হবে।




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Ankeeta

Sleep, travel, eat, repeat! Anchor, presenter, news reader, editor by profession. Long drives and exploring life are my favorite options. Stuck between food and fitness. Intoxicated by music. Painting, singing, photography and Rabindranath are my soulmates

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *