তোর টিমে, তোর পাশে

ছবি: উমা

নির্দেশনা: সৃজিত মুখোপাধ্যায়

অভিনয়ে: সারা সেনগুপ্ত, যীশু সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ২৯ মিনিট

RBN রেটিং: ৪/৫

শেষ ছবি থেকে প্রতিবারই অচেনা রাস্তায় হাঁটতে ভালবাসেন সৃজিত। অ্যাডভেঞ্চার ছবি ইয়েতি অভিযান-এর পর, জাতিস্বর পরিচালকের মুখে তাই এবার এক অন্য মানবিকতার গল্প। কানাডার সেন্ট জর্জ শহরের সাত বছরের ইভান লিভারসেজের জীবনযুদ্ধের কাহিনী সৃজিত তুলে এনেছেন সেলুলয়েডে। ছবির পটভূমি কলকাতা।




ইভানের মতই এক মারণরোগে আক্রান্ত ছোট্ট উমা (সারা)। থাকে সুইটজ়ারল্যাণ্ডে। শুনেছে দুর্গা পুজোর কথা। জীবনের শেষ কটা দিনে তার ইচ্ছে কলকাতার পুজো দেখার। কিন্তু আশ্বিন আসতে তো অনেক দেরি। তাহলে উপায়? পিতা হিমাদ্রি (যীশু) শরণাপন্ন হন ব্রহ্মানন্দর (অঞ্জন)। কি করতে হবে শুনে প্রথমে ভাগিয়ে দেন কাজ খোয়ানো চিত্র পরিচালক। পরে সংকল্প দৃঢ় হয়। এক এক করে জোগার করে ফেলেন একটা গোটা দল। অসাধ্য সাধনে নামেন কিছু মানুষ। সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা, দাঁতে দাঁত চিপে প্রতিজ্ঞা। তারপর? সেটা না হয় তোলা থাক ছবির পর্দায় দেখার জন্য।

চরিত্রের নামকরণে চমক রেখেছেন সৃজিত। তাই উমার পিতার নাম হিমাদ্রি, মা মেনকা (সায়ন্তিকা)।

আমার মুক্তি আলোয় আলোয়

প্রতিযোগিতা অন্য এক ক্ষেত্রেও। অভিনয়ে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার দৌড়ে নেমেছেন প্রত্যেকটি শিল্পী। অঞ্জন, অনির্বাণ, যীশু, রুদ্রনীলরা বুঝিয়ে দিলেন সঠিক হাতে পড়লে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া সম্ভব। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। এক অতি সাধারণ মেয়ের চরিত্রে অসাধারণ ছাপ রেখে গেলেন শ্রাবন্তী। প্রমাণ করে দিলেন ভিন্ন ধারার কাজ করার লোক এই বাংলাতেই আছে। শুধু ঠিক জহুরীর নজরে পড়া চাই। ছোট একটি চরিত্রে চমকে দেন বাবুল সুপ্রিয়।

এবং সারা। এক সংবাদমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতায় সৃজিত বলেছিলেন, সারার চোখদুটো দেখেই তিনি স্থির করে ফেলেন উমা চরিত্রে আর কাউকে নেওয়া সম্ভব নয়। হয় সারা নয়ত শেষ। যীশুকন্যার নিষ্পাপ বিস্তৃত চোখ ঘুরে বেড়ায় পর্দার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। চোখ ফেরানো যায় না। শুধু গলায় দলা পাকিয়ে আসে মাঝে মাঝে। এই উমা হয়ত আমাদের অনেকের বাড়িতেই আছে আর তাই অপরিচিত মনে হয় না।

সৃজিতের দুটি বড় গুণ। এক, তিনি জানেন কাকে দিয়ে কোন কাজটা হবে। হাতে পাঁজি মঙ্গলবার রাজকাহিনীর ঋতুপর্ণা এবং চতুষ্কোণের পরমব্রত ও চিরঞ্জীৎ। তবে এই যেন-তেন-প্রকারেণ কাজ বার করে নেওয়ার জন্য তার সুনাম এবং দুর্নাম দুটোই জোটে। দুই, স্মার্ট প্যাকেজিং তার ছবির সম্পদ। দৃশ্য পরিকল্পনা, ঝকঝকে চিত্রগ্রহণ এবং মেদহীন সম্পাদনার মিশেলে যে খাদ্যটি তিনি উপস্থাপন করেন, দর্শক তা চেটেপুটে খায়। এ ছবিও তার ব্যতিক্রম নয়।

এবং সঙ্গীত। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আব্বাস কিয়রোস্তামির নির্বাক ছবির ভক্ত অনুপম রায় সেরাটা তুলে রাখেন এই মুখুজ্যের জন্য। ছবির পাঁচটা গানের পাঁচটাই হিট এরকম সচরাচর হয় না। না, ভুল বললাম, হয়। তবে সেটা সৃজিত-অনুপম কম্বিনেশন হওয়া চাই। বিশেষভাবে মনে থেকে যায় সুরঙ্গনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অলসায়ো। ওপেনটি বায়স্কোপে তাক লাগিয়ে দেওয়া অভিনেত্রীর এও এক ধরণের প্রত্যাবর্তন। নীল দত্তর আবহ সঙ্গীত যথাযথ।

যে আগুন নেভে না

আক্ষরিক অর্থেই অকাল বোধনের গল্প বলে উমা। কলকাতার ছোটবড় অনেক পুজোরই প্রস্তুতি পর্ব এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাড়ায় পাড়ায় খুঁটিপুজোও শুরু হয়ে যাবে এ মাসের শেষের দিকে। তাই সুদূর আল্পসের পাহাড় থেকে কলকাতার ধরাধামে দেবী উমাকে নামিয়ে আনার এর থেকে ভালো সময় বোধহয় আর ছিল না।

ইউটোপিয়ান আখ্যা দিয়ে অনেকেই হয়ত এ ছবির গল্প শুনে নাক সিঁটকোতেন। তা হয়নি তার কারণ ইভান সত্যি, তার অন্তিম ইচ্ছে সত্যি, আর সত্যি সেন্ট জর্জের সেই সব মানুষগুলো যাদের জন্য কোনও কুর্ণিশই যথেষ্ট নয়।

তাই ৯ অক্টোবর ভোররাতে সুপ্রীতি ঘোষের বাজলো তোমার আলোর বেণুর পাশাপাশি রুপঙ্করের জাগো জাগো উমা বেজে উঠলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।

Amazon Obhijaan

Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
11

Ritam

Want to explore every corner of this world. Country music with friends around a campfire is my dream evening. Love the rains. Reading and photography are my second nature. Ah yes, and did I say fishing?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *