ব্যতিক্রমী প্রয়াসে অনবদ্য রুক্মিণী

ছবি: পাসওয়ার্ড

পরিচালনা: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

অভিনয়ে: দেব, রুক্মিণী মৈত্র, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, আদ্রিত রায়, তৃণা সাহা

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ১৮ মিনিট

RBN রেটিং: ৩/৫

বিপদের সম্মুখীন বর্তমান প্রযুক্তিভিত্তিক সভ্যতা। অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহৃত যান্ত্রিক আধুনিকীকরণের জটিল জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা মানবসভ্যতা। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে থাকা ছোট থেকে বড় সব মানুষই একে অপরের সঙ্গে নিমেষে যুক্ত হতে পারেন ইন্টারনেট নামক এক অক্টোপাসের মাধ্যমে। এই অক্টোপাস ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে প্রত্যেকের স্কুলে, কলেজে, অফিসে, ডাইনিংরুমে, শোওয়ার ঘরে। সেকেন্ডের মধ্যে যে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত যে মাধ্যম, কখনও সেই আন্তর্জালের দ্বারাই প্রতিনিয়ত চুরি যাচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য। যে কোনও অজানা ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকার সময় এটা। ওয়েবের এই কালো দুনিয়ার হাল হকিকতের খবর নিয়েই কমলেশ্বরের নতুন ছবি ‘পাসওয়ার্ড’।




তাঁর ছবির মাধ্যমে অনেক কথাই বলতে চেয়েছেন পরিচালক। তাই তাঁর চরিত্ররাও যেন একটু বিভ্রান্ত। কি করবেন, কখন করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঘটনাগুলো এতটাই তাড়াতাড়ি ঘটে যায় যে দর্শকাসনে বসে থাকা মানুষটির ধরতে একটু সমস্যা হয়। ৩৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার শিকার হন কয়েক লক্ষ মানুষ। সেই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্রে রেখে ‘পাসওয়ার্ড’-এর প্লট সাজিয়েছেন কমলেশ্বর। একঝাঁক ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রীকে নিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন এক অজানা পাসওয়ার্ড আনলক করার চেষ্টায়। 

সেই চেষ্টা সফল হল কি?

প্রথমেই বলা ভালো এ ছবিতে গল্প বা সাসপেন্স বিশেষ নেই। বিভিন্ন দৃশ্যের কাট টু কাট সিকোয়েন্স নিয়ে তৈরি ‘পাসওয়ার্ড’। পরিবর্তে ছবির ক্লাইম্যাক্সকে যদিও বা সাসপেন্স ধরা হয় তাহলেও তা পরিষ্কার নয়। প্রথমার্ধে রহস্য যেভাবে ঘনীভূত হয়, তাতে দ্বিতীয়ার্ধে একটি টানটান গল্প আশা করে থাকেন দর্শক। কিন্তু ঘটে ঠিক উল্টোটাই। অত্যধিক প্লটের ভিড়ে শেষটা ঠিক জমে ওঠে না ।

আরও পড়ুন: পুজোয় রবীন্দ্র সদনে বাংলা ছবি, সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের

কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রোহিত দাশগুপ্ত (দেব) তাঁর ঝকঝকে উপস্থিতি দিয়ে চমকে দিয়েছেন। দেব তাঁর পুরোনো, প্রথাগত ধারা ভেঙ্গে অন্যধারার ছবিতে কাজ করছেন। ‘পাসওয়ার্ড’-এ তিনি অনেক পরিণত, মার্জিত। ড্রাগ পাচারের দায়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়া নিশা (রুক্মিণী) বুঝিয়ে দিলেন বাংলা ছবির অভিনেত্রীদের এবার অন্যরকম ভাবে ভাবতে হবে। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন নিশাকে যে চরম অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়, সেই দৃশ্যে রুক্মিণী অনবদ্য। তাঁর বডি ফিটনেস, অ্যাকশন দৃশ্যে দেহের মুভমেন্ট এবং স্মার্ট অভিনয় এই ছবির সম্পদ। আরও বেশি ছবিতে তাঁর সুযোগ পাওয়া উচিৎ। ওয়েব জগতের কালো রাজা ইসমাইলভের চরিত্রে পরমব্রত এবং মরিয়মের চরিত্রে পাওলি তাঁদের অন্যান্য ছবির মতো এখানেও জোরালো। আদ্রিতের অভিনয় জীবনে ‘পাসওয়ার্ড’ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

কমলেশ্বর একজন সুদক্ষ পরিচালক হওয়া সত্বেও ‘পাসওয়ার্ড’-এ বেশ কয়েকটা অসঙ্গতি চোখে পড়ল। ছবিতে ড্রাগ পাচারের সংযোজন অসংগত লাগল। এছাড়াও রয়েছে একটি অর্থহীন অপহরণ। ডার্লিং টয় নামক গেমিং অ্যাপ যে রোহিতের বৌদি তার মেয়ের জন্য ফোনে ডাউনলোড করবেনই, এই বিষয় কিভাবে নিশ্চিত হলো অপরাধী দল? ছবির শেষে একটি অত বড় সভাগৃহে প্রতিশোধ নেওয়ার দৃশ্যটিও বেশ নাটুকে।

আরও পড়ুন: খেল দিখা সকোগে না?

তবুও ‘পাসওয়ার্ড’ দেখার কারণ অনেক। প্ৰথমত এই ধরণের প্লট নিয়ে হিন্দি বা অন্যান্য ভাষায় অগুনতি ছবি হলেও বাংলায় এই প্রথম। অভীক মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরা এই ছবিতে আলো নিয়ে যেভাবে খেলা করেছে তাতে তাঁর নিপুণ শৈল্পীকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

তবে ‘পাসওয়ার্ড’-এর প্রধান নায়ক ভিএফএক্স। এত ভালো কম্পিউটার গ্রাফিক্স বোধহয় বাংলা ছবিতে আগে কখনও দেখা যায়নি। স্যাভির আবহসঙ্গীত এবং ছবিতে ব্যবহৃত দু’টি গান শুনতে মন্দ লাগে না। কে কে-এর গাওয়া ‘অ্যায় খুদা’ গানটিতে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা গেল অভিনেতা সৌরভ দাসকে। 

একটা কথা বলতেই হয়, ‘পাসওয়ার্ড’ যদি বাংলায় না হয়ে হিন্দিতে হতো, তাহলে সেই ভাষায় অন্যান্য অ্যাকশন ছবির মতো একে ঘিরেও দর্শকদের উন্মাদনা থাকত প্রবল। একটু ব্যতিক্রমী চিত্রনাট্য ও অন্যধারার ছবির স্বাদ পেতে চাইলে ‘পাসওয়ার্ড’ দেখতে প্রেক্ষাগৃহে একবার ঢুঁ মারাই যায়।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Gargi

Travel freak, nature addict, music lover, and a dancer by passion. Crazy about wildlife when not hunting stories. Elocution and acting are my second calling. Hungry or not, always an over-zealous foodie

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *