অপূর্ণ প্রেমের মাধুর্যে মন ভরতে দিল না চিত্রনাট্যের খামতি
ছবি: শ্রীমান v/s শ্রীমতি
পরিচালনা: পথিকৃৎ বসু
অভিনয়ে: মিঠুন চক্রবর্তী, অঞ্জনা বসু, অঞ্জন দত্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, মধুমিতা সরকার, সত্যম ভট্টাচার্য, রোশনি ভট্টাচার্য, তনিমা সেন
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট
RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆
সফল প্রেমের গল্পের থেকেও অপূর্ণ প্রেমের গল্প অনেক সময় বেশি করে মনে থেকে যায়। যে ভালোবাসা পূর্ণতা পায়, দাম্পত্যে পরিণত হয় সে প্রেমকে প্রতিদিন হাজারো পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাছাড়াও দৈনন্দিন রোজনামচায় পড়ে সেই ভালোবাসার সর্বাঙ্গে কবেই যেন তেলচিটে দাগ ধরে যায়। রোজকার চাল ডাল নুন তেলের একঘেয়েমির মাঝে পড়ে কেমন করে যেন পথ হারিয়ে ফেলে এতদিনের যত্নে লালন করা স্বপ্নগুলো। কিন্তু অপূর্ণ প্রেমের সেই দায় থাকে না। সে তার লুকিয়ে রাখা আবেগ, দুচোখ জোড়া স্বপ্ন আর অনেকটা মুগ্ধতা নিয়ে অপেক্ষায় থেকে যায় সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তের। অপূর্ণ ভালোবাসা সব বয়সেই সেই প্রথম যৌবনের স্বাদ এনে দেয়। ‘শ্রীমান v/s শ্রীমতি’ (Shreeman v/s Shreemati) তেমনই এক অপূর্ণ ভালোবাসার গল্প। কেমন হলো পথিকৃতের নতুন ছবি, দেখে নেওয়া যাক।
জাস্টিস অমল চৌধুরীর (মিঠুন) এজলাসে কখনও কোনও ডিভোর্স হয় না। বিচ্ছেদের মামলা এলেই তিনি বুঝিয়ে সুঝিয়ে দম্পতিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কখনও তাদের সময় দিয়ে বলেন কোথাও বেড়িয়ে আসতে। তাতেই কাজ হয়ে যায়। উকিল সাক্ষীগোপালের (বিশ্বনাথ) সাহায্যে কোর্টে বিচ্ছেদের মামলা লড়তে এসে সৌরভ (পরমব্রত) আর অমৃতারও (মধুমিতা) একই অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু অন্যদের ডিভোর্স আটকে দিলেও নিজের ডিভোর্সের মামলাকে আটকাতে পারেননি অমল। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি মামলা লড়ছেন স্ত্রী অপর্ণার (অঞ্জনা) সঙ্গে। কিন্তু একে অপরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না আনার ফলে প্রতিবারই আগামী তারিখ দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান এজলাসের বিচারক। সৌরভ আর সাক্ষীগোপাল এগিয়ে আসে অমলকে সাহায্য করতে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান অমল। কিন্তু পুরোনো কিছু ঘটনার জেরে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন, আর ফিরবেন না। একের পর এক পরিকল্পনা ফেল করে যায়, অপর্ণা কিছুতেই বোঝেন না। এই সময় অমল ও অপর্ণার মাঝে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয় অপর্ণার কলেজ জীবনের বন্ধু নিলয় সেন (অঞ্জন)। অমলের সমস্ত চেষ্টায় জল ঢালার জন্যই যেন আগমন ঘটেছে তার। এর পরের ঘটনা জানতে প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে।
আরও পড়ুন: বড় পর্দায় অভিষেক শাশ্বত কন্যার, তালিম নিয়েছেন অভিনয়ের
গল্পের মূল বিষয় অভিনব তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই অভিনব বিষয়ের উপস্থাপনায় আর একটু আঁটোসাঁটো চিত্রনাট্যের প্রয়োজন ছিল। ছবির শুরু থেকে শেষ পুরোটাই দুর্বল চিত্রনাট্যের শিকার। অভিনেতারা প্রত্যেকেই চেষ্টা করে গেছেন সেই চিত্রনাট্যে মানিয়ে নিতে। কিন্তু বিশ্বনাথ, অঞ্জনা বা অঞ্জন কিংবা পরমব্রতর মতো অভিনেতারা যে জায়গায় বিচরণ করেন তাঁদের আর একটু উন্নত মানের চিত্রনাট্য প্রাপ্য ছিল। গল্পে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। সেসবকে যদি এড়িয়েও যাওয়া যায় তবুও মূল ঘটনার উপস্থাপনা অত্যন্ত দায়সারা ও বাঁধুনিহীন। মিঠুন তারকা অভিনেতা নিশ্চয়ই, কিন্তু তাঁকে জায়গা দিতে গিয়ে বাকিদের গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে। সৌরভ ও অমৃতার গল্প নেহাতই অপ্রয়োজনীয় এক সাবপ্লট হিসেবে থেকে গেছে। এমনকী অপর্ণার জার্নিটাও কোথাও স্পষ্ট করা হয়নি।
আরও পড়ুন: বাদশার সঙ্গে আসছেন শাহেনশাহও, আগামী বছর
অমল ও অপর্ণার কম বয়সের চরিত্রে সত্যম ও রোশনিকে দেখতে ভারী ভালো লাগে। দুজনেই চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছেন। বিশ্বনাথ এবং পরম যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন দুর্বল চিত্রনাট্যে খাপ খাইয়ে নেবার। মিঠুন তাঁর নিজের মতোই। ইদানিং কিছুটা একধরনের চরিত্রেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে। অঞ্জন এই ছবিতে কিছুটা অন্যরকম। তবে অভিনয়গুণে তিনি সব চরিত্রেই মানিয়ে যান, এখানেও ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর গলায় একটা নতুন গোটা গান দর্শকদের কাছে বড় প্রাপ্তি অবশ্যই। সবশেষে উল্লেখ্য অঞ্জনার শক্তিশালী ও সংবেদনশীল অভিনয়। শুধুমাত্র চোখ এবং অভিব্যক্তি দিয়ে যারা একটা গোটা চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলতে পারেন, অঞ্জনা তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ এত বছরেও তাঁকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। পার্শ্ব চরিত্রে কিছু অভিনেতা বেশ চড়া দাগের অভিনয় করেছেন।
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর সুরে ও রিতম সেন এবং বারিশের কলমে ‘আমি ফিরেছি ঘরে’ ও ‘মনখারাপ’ দুটি গানই বেশ ভালো। বার বার শুনলে আলাদা ভালো লাগার রেশ রেখে যায়। প্রথমটি গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী ও ইমন চক্রবর্তী এবং দ্বিতীয়টির শিল্পী সোনু নিগম ও অন্তরা মিত্র। অভিনব কাহিনী, ভালো অভিনয় এবং বেশ কিছু ভালো গানের জন্য ‘শ্রীমান V/s শ্রীমতি’ দর্শকমনে অন্তত কিছুটা জায়গা করে নিতে পারবে বলে মনে হয়।