আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
“मेरो मन्न झूमो तिम्रो कमार माँ“
ভাষা অন্তরায়। তবে তিরতিরে মনের ভিতরটা বলে উঠলো নিশ্চয়ই গানের সুরটা আনন্দে মেতে উঠতে বলছে। হয়তো বা তাই। আর হবে নাই বা কেন? ধবলগিরির গায়ে যে মেঘের ছায়া। আর সে মেঘ পানসি।
তোমায় দেখে শুরু হলো যে দিন, মুক্তিনাথ উপত্যকা
মাৎসপুচ্ছরিকা, পোখারা
দিয়েছি যে পথে পারি
চলেছি মুক্তিক্ষেত্র। যদিও সব আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তিলাভের সময় বা বয়স কোনওটাই হয়নি, তবুও পাহাড়ের ডাক যে এই বান্দার কাছে নিশির ডাকের থেকেও সম্মোহক। সেই হিমালয় নামক নিশির ডাকে ঘর ছেড়ে ভয়ঙ্কর-সুন্দর পথকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছি। উদ্দেশ্য মুক্তিনাথ। হিন্দু ও বৌদ্ধ, দুয়েরই মুক্তিক্ষেত্র তথা তীর্থক্ষেত্র। নেপালে অন্নপূর্ণা কনজারভেশন জোন-এর অংশ এই পাহাড়।
মূলত ট্রেক-রুট। কিন্তু আবহাওয়াকে খুব একটা ভরসা করতে পারলাম না। আর তাই চাকায় চড়েই চরৈবেতি। নেপালের হ্রদ-কেন্দ্রীক শহর পোখারা (৫,৭১০ ফিট) থেকে অন্নপূর্ণা রেঞ্জ-এর কিছুটা ও মাৎসপুচ্ছরিকার (মচ্ছপুছরে, ২২,৯৪৩ ফিট) যাকে বলে ভুবন-ভোলানো রূপে বিভোর মন নিয়ে, কাঙ্খিত ভোরে চাকার ভরসায়, “জয় বাবা মুক্তিনাথ” বলে বেরিয়ে পড়লাম। পোখারা শহর ছাড়বার মুহূর্ত থেকে উচ্ছল এক যুবতী সঙ্গী হতে চাইলো। অনেকটা ওই স্বল্পবোধ্য ভাষার গানটির মতো মেতে ওঠা ভাষা তার। সারথি মহাশয় পরিচয় করিয়ে দিলেন, নাম কালীগণ্ডকী। বললেন, বাকি পথ এই হবে সঙ্গিনী। মুক্তিনাথ যাত্রায় কিছু অংশের পথ বলতে কালীগণ্ডকী নদীর প্রশস্ত চর আর তার উচ্ছল বুক। শোনা যায়, কালীগণ্ডকী নদীগর্ভে নারায়ণী শিলা বা শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়, যা কিনা ভগবান বিষ্ণুর প্রতীকচিহ্ন।
আঁকিবুঁকি কালীগণ্ডকী
যে পথ আমায় ডাকে
আগেই বলেছি, পথ ভয়ঙ্কর সুন্দর। তারই ভয়ঙ্কর অংশ শুরু বেনি থেকে, পোখারা থেকে যার দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। সমতল-সুস্থির গতি এই দূরত্বকেই আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারে মাত্র চার ঘন্টায় (অন্তত তাই জানা ছিল এই পথে পা দেবার আগে )। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। বাহনের মন্থর গতি সদ্য বর্ষা পার করা সবুজ পাহাড়ঘেরা বেনি পার হতে-হতে সন্ধ্যের আবেশ নামতে থাকলো পাহাড়ী ঝোরার শব্দে।
হাজির হলাম টুকুচা। আবদ্ধ কালীগণ্ডকী নদীখাতের উপর একমাত্র গিরিপথ। এখানকার বিশেষত্ব হল দুপুর ২-২:৩০ থেকে বয়ে চলা কনকনে ঠান্ডা ঝোড়ো বাতাস। সারথির মত নিয়ে কিছুক্ষণ থামলাম এখানে। বাতাসের শব্দ আর দাপট সময়ের সাথে-সাথে তীব্র হয়ে উঠছে বুঝে পাড়ি দেওয়াই শ্রেয় মনে করলাম। অনেক পথ বাকি। তবে এখানে বলতেই হবে ভয়ঙ্করের সাথে তাল দিতে, প্রতি মুহূর্তে হিমালয় তার অপূর্ব রূপের দর্শন করিয়ে সমস্ত ক্লান্তি কে মুছিয়ে দিতে লাগলো।
মুক্তিনাথ জনপদ
এসেছি তোমারই দ্বারপ্রান্তে, মুক্তিনাথ মন্দির
আদ্যোপান্ত দুর্বিসহ পথ হওয়া সত্ত্বেও মানুষের উৎসাহের কোথাও ভাঁটা পড়তে দেখলাম না। নেপালি দশহরা উৎসবের জন্যই যে এতো মানুষের ঢল, সেটা ঝুঝতে পারলাম। মোটরবাইক আর বাসও এই অসমতল পথের যান। তা যাই হোক, সেই তস্য দুর্গম পথ পার হয়ে সুস্থিরগতির সাড়ে আট ঘন্টার (প্রায় ১৮০কিমি) পথ মন্থরগতির চাকায় চড়ে দেবভূমির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছলাম যখন, তখন ঘড়ির কাঁটা বলছে, ইট’স ডিনার টাইম। পাণ্ডববর্জিত দেশে এমন তিনতারা বিশিষ্ট নিশ্চিন্ত আশ্রয় মিলবে এতটা সত্যিই ভাবিনি। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর সরল-সুন্দর আতিথেয়তায় তৃপ্ত হয়ে শৃঙ্গ ছোঁয়া জোৎস্নার মায়ায় গভীর ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো।
shabder por shabdo sajiye information to sobai dite paren…. kintu kichhu shabdera emon bhabe sari bendhe daray je, mon odhao hote chay tar sathe…. asadharon lekha… sathe asadharon photor jugalbondi… darun laglo….. emon lekha aaro porte chai…
Mon bhalo kora lekha…. shobder madhyame jeno dorshon kore nilam.