আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
নেপালের মুসতাং জেলার মুক্তিনাথ (১২,৪০০ফিট) উপত্যকায় জগৎপালক বিষ্ণু মুক্তিনাথের অবস্থান । আবার বৌদ্ধদের মতে ইনি চুমিগ জ্ঞাৎসা, তিব্বতি ভাষায় যার অর্থ ‘Hundred Waters’।
মুক্তিনাথ মন্দির
রুক্ষতার ভাষ্কর্য, মুক্তিনাথ থেকে ফেরার পথে
কাঠের তৈরী প্যাগোডা আকৃতির মন্দিরে সোনার (স্থানীয় কথন) বিষ্ণু। চাকার পথ শেষ করে খাড়া রুক্ষ পায়ে-পায়ে তৈরী পথ বা পাথুরে সিঁড়ির ধাপ ধরে ১০মিনিট উঠতেই মিলল দেবদর্শন ।
কিন্তু একি? এত ভোরেও যেন মেলা বসেছে এমনই লোক সমাগম। মন্দিরকে ঘিরে আছে পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা ১০৮টি জলের ধারা যাদের সিংহ আকৃতির মুখ রূপো দিয়ে বাঁধানো ।গর্ভগৃহে ঢোকার আগে কাঠের উপর কারুকার্য করা সিংহদুয়ার। প্রবেশদ্বারের আগে পার হতে হলো দুটি জলপূর্ণ কুন্ড, নাম লক্ষ্মী ও সরস্বতী । দৃষ্টিকটু হলেও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাজ-ধৰ্ম-বয়স-স্থান ভুলে শুধুমাত্র মুক্তিনাথের দ্বারপ্রান্তে মুক্তি লাভের আশায় ডুব দিচ্ছে ওই দুই কুন্ডের জলে। সেই সঙ্গে চলছে নিজস্বী তোলার বহর।
ফিরতি পথ, মুসতাং
ধবলগিরি
গর্ভগৃহের স্বর্ণাভ বরাভয় রূপধারী বিষ্ণু ও তার দুই পাশে লক্ষ্মী ও সরস্বতী দর্শন করার মুহূর্তে, মনে ভিড় করে থাকা এতদিনের উদ্দীপনা-উত্তেজনা যেন হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেলো। এত নিজস্বীর ভিড়ে-ভিড়াক্কার পরিবেশের মধ্যেও যে এই স্নিগ্ধতা থাকতে পারে তা বোধহয় এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না। তাই বোধহয় তিনি মুক্তিনাথ, অন্য সমস্ত পাহাড়ী দেবস্থান থেকে স্বতন্ত্র। ঘোর লাগা মনে তখন “ওম নমঃ, ভাগবতে বাসুদেবায়ঃ মুক্তিনাথায়ঃ নারায়নায়ঃ নমঃ।”
শুনেছিলাম মুক্তিনাথ উপত্যকা সতীর ৫১ পীঠের মধ্যে একটির জন্যও নামাঙ্কিত। তবে সময় বাধ সাধলো। দেবভূমির ঘোর মুক্ত হয়ে দেখি, ফেরার পথ ধরতে অনেকটাই বেলা করে ফেলেছি। “আবার আসিব ফিরে,”এই আশায় ফিরে চললাম। বিধাতা বোধহয় বাকি রয়ে যাওয়া ইচ্ছের পরিপূরক কিছু ভেবে রেখেছিলেন। চাঁদের আলোয় তার অন্য এক মায়াময়তা চোখে পড়ছিল ঠিকই, কিন্তু রাতের অন্ধকার আর দীর্ঘ যাত্রাপথের ক্লান্তির পর্দা যে রূপকে পাহাড়পাগল চোখের দৃষ্টিগোচরে আসতে দেয়নি, ফিরতি পথে শরতের ঝকঝকে সকাল তাকে সহজভাবেই হাজির করলো একরাশ মুগ্ধতা দিয়ে। আলপাইন হিমালয় বনভূমির রুক্ষ ভাস্কর্যের সাথে শ্বেতশুভ্র ধবলগিরি ও অন্নপূর্ণার অতুলনীয় মেলবন্ধন, সাথে বিস্তৃত নদীখাতের উপর কালীগণ্ডকীর জলধারার আঁকিবুকি, বিদায়পথকেও স্মৃতিমেদুর করে রাখলো।
রুপসে ফলস্
গোধুলিলগ্নে ধবলগিরি
মুক্তিক্ষেত্র মুক্তিনাথ যাত্রা আক্ষরিক অর্থে শেষ হলো ঠিকই, তবে তার রেশ এবং চারপাশের স্বচ্ছ স্নিগ্ধ প্রকৃতির ডালি সম্পৃক্ত হয়ে মনের প্যাগোডায় যে বাসাটি বাঁধলো তা আজীবনের।
ছবি: প্রণমি ও মানিক মণ্ডল
shabder por shabdo sajiye information to sobai dite paren…. kintu kichhu shabdera emon bhabe sari bendhe daray je, mon odhao hote chay tar sathe…. asadharon lekha… sathe asadharon photor jugalbondi… darun laglo….. emon lekha aaro porte chai…
Mon bhalo kora lekha…. shobder madhyame jeno dorshon kore nilam.