ইতিহাসটাই প্রধান চরিত্র

ছবি: কোলকাতায় কোহিনূর

পরিচালনা: শান্তনু ঘোষ

অভিনয়ে: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, সব্যসাচী চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী দত্ত, দেবদূত ঘোষ, অনুপ পান, মোনা দত্ত, অঙ্কিতা মজুমদার

দৈর্ঘ্য: ২ ঘন্টা ০৯ মিনিট

RBN রেটিং: ২.৫/৫

ভাগ্যিস বাঙালির ফেলুদা ছিল। ‘কি দুর্দশাই হত তা না হলে!’ এখনও, এত বছর পরেও, এমনকি গুপ্তধন খুঁজতে গেলেও বাঙালির ফেলুদাকে প্রয়োজন হয়। আর ফেলুদা মানেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছাড়া এ কাজ আর কেই বা পারবে? দ্বিতীয়জন বরুণ চন্দ। ছবিতে এনার উপস্থিতি বেশ কয়েকটি খুঁত ঢেকে দিয়েছে। ইনি না থাকলে কোহিনূরের প্রতিও তেমন উৎসাহ জাগত বলে মনে হয় না। পরিচালক শান্তনু ঘোষের প্রথম ছবি ‘কোলকাতায় কোহিনূর’-এর সম্পদ এই দুই অভিনেতা।




প্রত্নতত্ববিদ তাপস রঞ্জন সরকার (বরুণ) মৃত্যুর আগে তাঁর নাতনি অবন্তিকার (মোনা) জন্য রেখে যান গুপ্তধনের সংকেত। সেই গুপ্তধন উদ্ধারে পাকেচক্রে ডড়িয়ে পড়েন ডঃ সাত্যকি বসু (সৌমিত্র) ও তাঁর ছাত্র অর্ণব সেন (সব্যসাচী)। এরই মাঝে কিডন্যাপ হয়ে যান তাপস রঞ্জনের প্রিয়পাত্র সায়ন গুহ (দেবদূত)। গুপ্তধনের খোঁজ করতে গিয়ে বেড়িয়ে পড়ে এক গভীর ষড়যন্ত্র।

রহস্য-সংকেত-কিডন্যাপ-গুপ্তধন সন্ধান সব মিলিয়ে জমজমাট ছবি হতে পারত কোলকাতায় কোহিনূর। হল না তার প্রধান কারণ দূর্বল চিত্রনাট্য। বাংলা ছবির আউটডোর মানেই কি উত্তরবঙ্গের জঙ্গল নয়ত পাহাড়? আর কোথাও শ্যুটিং করা যেত না? তাপস রঞ্জনের মেয়ে অনামিকার ভূমিকায় ইন্দ্রাণীর মেকআপের ব্যাপারে আলাদা যত্ন নেওয়া উচিত ছিল। প্রায় মধ্যবয়সী নায়িকাকে জোর করে বয়স কমাতে গেলে দুদিকে দুটো পনিটেল বাঁধলেই হয়ে যায়, এই ধারণা আশির দশকের বাংলা ছবিতে চলতে পারে, ২০১৯-এ তা খুবই বেমানান। সাংবাদিক অনিন্দ্যর চরিত্রে অনুপ একেবারেই সপ্রতিভ নন। কাগজ-পেন নিয়ে নোট নেওয়ার চল অনেকদিন উঠে গেছে। আজকাল মোবাইল ফোনেই কথা রেকর্ড করা হয়। ছবিতে ‘মাই গড’ সংলাপটি একাধিকবার এসেছে বিভিন্ন অভিনেতার মুখে। অবাক হওয়া বোঝানোর জন্য আর কোনও কথা পাওয়া গেল না?

তিন মূর্তি ও পায়ের তলায় সরষে

সবচেয়ে বড় খটকা রয়ে গেল গল্পের মূল সূত্রে। অবন্তিকা ও তার দাদু ভদ্রকালীর মন্দিরে তাহলে কিসের আলো দেখলেন? এর বেশি বলতে গেলে গল্প বলা হয়ে যায়। তাছাড়া বহু ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া ফেলুদার সংলাপগুলো খুব কিছু চমক এনে দেয় না আর এটা এবার বাংলা ছবির পরিচালকদের বোধহয় বোঝার সময় এসেছে।

তবুও কেন দেখবেন কোলকাতার কোহিনূর? ইতিহাস জানার জন্য। ছবিতে প্রথমে সাত্যকি বসু ও পরে অর্ণব সেনের মুখ থেকে ফ্রিমেসন সোসাইটি ও কোহিনূর হীরের যে দীর্ঘ ইতিহাস শোনা যায় তা বেশ চমকপ্রদ ও মনোগ্রাহী। লেখক হিসেবে পরিচালকের ইতিহাস ও গল্পকে মিলিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।




অভিনয় বিভাগে সব্যসাচীর বিশেষ কিছু করার ছিল না। তবু পর্দায় তাঁর উপস্থিতি অনেক কিছু পাল্টে দেয়। এই ছবির সবচেয়ে উজ্জ্বল আবিষ্কার মোনা। তার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ ও অভিনয় দক্ষতা দর্শকের ভালো লাগতে বাধ্য। সে সহজ ও স্বাভাবিক, যেমনটা তার চরিত্র দাবী করে। আগামী দিনে মোনার কাছে আরও ভাল কাজের আশা রইল। ইন্দ্রাণী যতটা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ততটা আশা পূরণ করতে পারলেন না। দেবদূতকে ছবিতে সেভাবে ব্যবহারই করা হল না। তাঁর চরিত্রটি আর একটু বড় হলে ভালো লাগত। মধুমিতার চরিত্রে অঙ্কিতা মজুমদারের নায়িকা সুলভ চেহারা থাকলেও অভিনয়ের ক্ষেত্রে আর একটু যত্ন প্রয়োজন। ছোট অবন্তিকার চরিত্রে শিশু অভিনেত্রীকে ভালো লেগেছে।

Amazon Obhijaan



Like
Like Love Haha Wow Sad Angry
1

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *