ভরপুর বিনোদন দিতে সক্ষম

ছবি: দ্য একেন রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান

পরিচালনা: জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

অভিনয়ে: অনির্বাণ চক্রবর্তী, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, সোমক ঘোষ, রজতাভ দত্ত, সন্দীপ্তা সেন, রাজেশ শর্মা, সুদীপ মুখোপাধ্যায়

দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ১ মিনিট

RBN রেটিং ★★★★★★★☆☆☆

রাজস্থানে রক্তপাত এবং রুদ্ধশ্বাস রহস্য দুইই পাওয়া গেল। উপরি পাওনা হলো ভরপুর অ্যাডভেঞ্চার আর হাসি মজার সুস্বাদু ককটেল। বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে এমন জমজমাট ছবি বাঙালি দর্শককে এই গরমেও হলমুখী করবে আশা করা যায়।



গতবার একেন অ্যান্ড কোম্পানির গন্তব্য ছিল দার্জিলিং। এবার তাদের গন্তব্য রাজস্থানের কেল্লা শহর জয়সলমের। বাপির (সুহোত্র) দাদার বাড়িতে নিছক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গিয়ে পড়লেও শেষমেশ একেনবাবুকে (অনির্বাণ) রহস্যে জড়িয়ে পড়তে হয়। সঙ্গী অবশ্যই প্রমথও (সোমক)। জয়সলমের মিউজ়িয়ম থেকে হঠাৎই উধাও হয়ে যায় আনুমানিক পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো কলিবঙ্গানের ষাঁড়। সেটি সবচেয়ে আগে আবিষ্কার করেন প্রফেসর শতদ্রু ঘোষ (রজতাভ)। কিউরেটর রাজ্যশ্রীকে (সন্দীপ্তা) সে কথা জানালেও সে বিশ্বাস করতে চায় না। অবশেষে চুরি প্রমাণিত হয় এবং তদন্তের ভার গিয়ে পড়ে একেনের ওপর। 

রাজস্থানের ছবি মানেই অবধারিতভাবে এসে পড়বে ‘সোনার কেল্লা’র প্রসঙ্গ, এ তো জানা কথা। বস্তুত যোধপুরে গিয়েও সার্কিট হাউজ়ের আশেপাশে একবারও ঘোরাঘুরি করবে না এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। তেমনই হাইওয়েতে চলতে-চলতে রামদেওরা থেকে বারমেরের মতো পরিচিত নাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে পেলে পুলকিত হওয়াই স্বাভাবিক। তবু সেই সমস্ত ইস্টার এগ থাকবে জেনেও কোথাও প্রয়োজনের অতিরিক্ত এতটুকু বাড়াবাড়ি দেখা যায়নি ছবিতে। যদিও ছবিতে মূর্তি চুরি আছে, অন্ধকার গলিতে চাকু দিয়ে খুন আছে, উট নিয়ে দুষ্টু লোকের পিছনে ধাওয়া করা আছে, তবু দেখতে বসে কখনও মনে হবে না এ কাহিনী ফেলুদা থেকে অনুপ্রাণিত। বরং আগাগোড়া গল্পেই একেনের নিজস্ব মেজাজ রয়েছে ভরপুর।

ভরপুর বিনোদন দিতে সক্ষম

গল্প অ্যাডভেঞ্চারধর্মী হওয়ার ফলে কোথাও একঘেয়ে লাগার প্রশ্নই ওঠে না। উল্টে বেশ একটা ফিলগুড আগ্রহ সারাক্ষণ ‘এরপরে কী হবে’ ভাবটা জাগিয়ে রাখে। সঙ্গে রয়েছে একেনের সাংঘাতিক সব উক্তি যা শুনে দর্শকের পেটের ভেতর থেকে সোডার মতো হাসি বেরিয়ে আসতে বাধ্য। উটের নাম উট কেন বা রাজস্থানে বউকে কী বলা হয়, এরকম হাজারো একেন্দ্র থিওরি গোমড়ামুখো দর্শককেও হাসিয়ে ছাড়বে। এছাড়াও মজার মোড়কে এরকম এক সাংঘাতিক রহস্যকে বেঁধে ফেলার জন্য পরিচালকের মুন্সিয়ানা অনস্বীকার্য।

একেনবাবুর চরিত্রে অনির্বাণ অনবদ্য এবং অপ্রতিরোধ্য। এতগুলো সিরিজ় এবং ছবির পর এ কথা চোখ বুজে বলা যায় যে এই চরিত্র শুধুমাত্র অনির্বাণের জন্যই। আর কারও পক্ষে কমেডি ও সিরিয়াস গোয়েন্দার এই মেলবন্ধন নিজের ভেতর একইসঙ্গে ঘটানো সম্ভব হতো না। খুব সতর্কভাবে তিনি নিজেকে জটায়ু এবং একেন্দ্র দুই চরিত্রে ভাগ করে নিয়েছেন। কোথাও মিলে যেতে দেননি। একেন্দ্র তার স্বকীয়তায় উজ্জ্বল এক গোয়েন্দা চরিত্র, যার রূপকার এক ও একমাত্র অনির্বাণই হতে পারেন। কোনও প্রশংসাই তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়।

আরও পড়ুন: ‘অমৃতের সন্ধানে’ পাড়ি দিচ্ছেন দেবাশিস, সৌরসেনী

একেন্দ্রর সহকারী ও বন্ধু হিসেবে বাপি ও প্রমথর চরিত্র নিয়ে আর একটু ভাবা যেতে পারত, বিশেষ করে দুজনেই যখন ভালো অভিনেতা। সুহোত্র ও সোমক দুজনেই স্বল্প পরিসরে ভালো অভিনয় করেছেন। রজতাভ এই ছবিতে অন্যরকম এবং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। ভালো লেগেছে আনন্দের ভূমিকায় রাজেশকেও। সন্দীপ্তা এবং সুদীপ যথাযথ।

গোটা ছবিতে খারাপ লাগার একটাই জায়গা, তা হলো বিজ্ঞাপন। ছবির মধ্যে বিশেষ কিছু ব্র্যান্ড দেখালে সেটাই দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এমন ‘না বুঝবি তো মগজে তোর গজাল মেরে গোঁজাব’র মতো প্রদর্শন না করলেও চলত। বিশেষ করে মুখ্য চরিত্রদের দিয়ে বিশেষ কিছু ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন করিয়ে নেওয়া, প্রয়োজনে এক-আধ মিনিটের দৃশ্য প্রসারণ অত্যন্ত দৃষ্টিকটু লাগে এবং ছবির মান খারাপ হয়। আদ্যন্ত মজার একটি ছবিও দেখতে বিরক্ত লাগে। বাংলার বিজ্ঞাপনদাতারা আর কবে বুঝবেন যে শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করতে গেলে শিল্পটাও বোঝা দরকার।



ছবির চিত্রগ্রহণ ঝকঝকে এবং প্রশংসার দাবি রাখে। জয়সলমের শহর ও থর মরুভূমিকে খুব আকর্ষণীয় লেগেছে রম্যদীপ সাহার ক্যামেরায়। পদ্মনাভ দাশগুপ্তের আঁটোসাঁটো চিত্রনাট্য ও সংলাপে কথার খেলা দর্শককে হলে বসিয়ে রাখবে। শুভদীপ গুহর আবহসঙ্গীত ছবির মেজাজকে ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। 

ভরপুর বিনোদন দিতে সক্ষম এই ছবি। আশা করা যায় দর্শক আনুকূল্য পাবে ‘রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান’। তবে একটাই দুঃখ, এই ছবি শীতকালে মুক্তির জন্য আদর্শ ছিল। বেড়ানো, মজা, গোয়েন্দা, রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার, এইসবের মিশেলে বানানো ছবি বাঙালির বিনোদনের সেরা সময় ডিসেম্বরকেই দাবি করে এ কথা বলাই বাহুল্য। তবু গরমেও একেনবাবু দর্শককে পুরোদস্তুর আনন্দ দেবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। 




Like
Like Love Haha Wow Sad Angry

Swati

Editor of a popular Bengali web-magazine. Writer, travel freak, nature addict, music lover, foody, crazy about hill stations and a dancer by passion. Burns the midnight oil to pen her prose. Also a poetry enthusiast.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *