ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন অরিন্দম, অভিযোগ ‘শিবপুর’ প্রযোজকের
কলকাতা: ‘শিবপুর’ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের পর এবার মুখ খুললেন ছবির প্রযোজক অজন্তা সিংহ রায়। স্বস্তিকার অভিযোগের তীর প্রযোজনা সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সন্দীপ সরকারের দিকে হলেও, অজন্তা বললেন, অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁদের কোনও বিরোধ নেই। স্বস্তিকা ছাড়াও ছবির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।
গতকাল এক সাংবাদিক বৈঠকে আইনজীবী শৌভিক বসুঠাকুরকে পাশে নিয়ে অজন্তা বলেন, “শিবপুর-এর জন্য ₹৭২ লক্ষ বাজেট দিয়েছিলেন ছবির পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্য। ছবির মার্কেটিং অরিন্দম তাঁর নিজের সংস্থা ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে করতে চেয়েছিলেন। আমি তা নাকচ করে দেওয়ার পর থেকেই আমার ওপর তিনি চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকেন। এমনকি স্বস্তিকার ফ্যানদের নাম নিয়েও ভয় দেখিয়েছেন। বলেন, তোমার দোকান বন্ধ করে দেব।”
আরও পড়ুন: এবার ইতালির প্রেক্ষাপটে বাংলা ছবি ‘গুডবাই ভেনিস’
স্বস্তিকার অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার আগে অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি কোনও কথাই হয়নি বলে জানালেন অজন্তা। বললেন, “সবকিছুই হয়েছে অরিন্দম আর স্বস্তিকার ম্যানেজারের মাধ্যমে। সত্যি কথা বলতে কী, অরিন্দম কখনও স্বস্তিকার সঙ্গে আমাদের কথাই বলতে দেননি। আমি কোনওদিন শুটিংয়েও যাইনি।”
স্বস্তিকাকে করা অশ্লীল ইমেল আদৌ সন্দীপ পাঠাননি বলে দাবি অজন্তার। “সেটি করা হয়েছিল সন্দীপের এক বন্ধু রবীশ শর্মার নামে একটি ভুয়ো ইমেল থেকে। সেই ইমেলটি অরিন্দমই প্রথমে আমার নজরে আনেন,” বললেন তিনি।
তবে সেই ইমেল পাঠানোর পর দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সেটি ট্র্যাক করা গেল না কেন, এমন প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি অজন্তা বা শৌভিক।
আরও পড়ুন: এবার বড়পর্দায় নন্টে-ফন্টে, সুপারিনটেনডেন্ট স্যার
তিনি অমিত-ঈশানকে ছবির আবহসঙ্গীত তৈরির দায়িত্ব দিলেও, অরিন্দম তাঁকে কিছু না জানিয়েই অন্য একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়রকে দিয়ে সেই কাজ করিয়ে নেন বলে দাবি অজন্তার। “পরমব্রতর প্রচুর দৃশ্য ছবি থেকে বাদ দেন অরিন্দম। এমনকি মমতা শঙ্করকে দিয়ে দু’দিন শুটিং করানোর পরে তিনি সেই দৃশ্যও ছবি থেকে বাদ দিতে বলেন। অথচ মমতা শঙ্করকে উনিই ছবিতে নিতে বলেছিলেন। এডিট এফএক্স স্টুডিওতে ছবির হার্ড ডিস্ক থাকলেও অরিন্দমের হস্তক্ষেপেই আমরা এখনও তা হাতে পাইনি। এছাড়া শ্রীকান্ত মোহতা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়দের নাম নিয়েও অরিন্দম আমাদের ভয় দেখিয়েছেন,” অভিযোগ অজন্তার।
সুরকার অমিত জানালেন, “নভেম্বরে অজন্তা ম্যাডাম আমাকে এই ছবির আবহ করার জন্য ডাকেন। কিন্তু পরিচালক যেদিন জানতে পারলেন আমি সুর করব, সেদিন তিনি আমার সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করেন। এরপরেও একটানা অনেকদিন ধরে আমার নামে বহু লোকের কাছে উল্টোপাল্টা কথা বলতে থাকেন। আমার মনে হয়েছিল উনি আমাকে এই ছবিতে চাননি বলেই এইসব করতে চেয়েছেন। আমি তবু আমার কাজটা করে গিয়েছি, এইসব নিয়ে কথা বলতে চাইনি। আমি ছবিটার সঙ্গে এখনও যুক্ত। কারণ আমি জানি, এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে একজন প্রযোজক চলে যাওয়া মানে বাংলা ছবির বিরাট ক্ষতি।”
অজন্তা জানালেন, “এখনও পর্যন্ত ছবির পেছনে ₹১.৪০ কোটির বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে। কারওর কোনও পারিশ্রমিক বাকি নেই।”
আবহসঙ্গীত ছাড়া ছবির বাকি কাজ সম্পূর্ণ। এমতাবস্থায় অজন্তা চাইছেন অরিন্দম যেন আর কোনওভাবে ‘শিবপুর’-এ হস্তক্ষেপ না করেন। ছবিটি ২ মে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না।
ছবি: প্রবুদ্ধ নিয়োগী