রহস্যের কেন্দ্রে বিখ্যাত নায়িকা, সমাধানে ‘মাছে-ভাতে’ গোয়েন্দা
কলকাতা: বাংলা সাহিত্যে গোয়েন্দা চরিত্র নেহাত কম নয়। তবে গোয়েন্দা বলতেই প্রথমে যে মুখগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে তারা হলো ফেলুদা, বোমকেশ, কিরীটি ও কাকাবাবু। এছাড়াও রয়েছেন ভাদুড়ি মশাই, কর্নেল, শবর, অর্জুন। ছোটদের জন্য রয়েছে ঋজুদা, গোগোল, কিকিরা, মিতিনমাসি ও পাণ্ডব গোয়েন্দা। এদের পাশাপাশি গত কয়েক বছরে বাঙালির মনে জায়গা করে নিয়েছেন আরও এক গোয়েন্দা একেন্দ্র সেন ওরফে একেন। চার বছরে পাঁচটি ওয়েব সিরিজ় সিজ়নের পর, এবার বড়পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে ‘দি একেন’।
কিন্তু দর্শকের মনে গোয়েন্দাদের সম্পর্কে সচরাচর যে ধারণা থাকে, একেনের ক্ষেত্রে তা একেবারেই অমিল। সেই কারণেই একেন্দ্র সেন হয়ে উঠেছেন বাঙালির ‘মাছে-ভাতে’ গোয়েন্দা, মনে করেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ছবির নামভূমিকায় রয়েছেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। গতকাল শহরে প্রাক নববর্ষের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিম ‘দি একেন’।
জয়দীপ জানালেন, “একেনকে বড়পর্দায় নিয়ে আসার পিছনে যে দুজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন তাঁরা হলেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত ও অনির্বাণ।”
সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে যাওয়া এক গোয়েন্দা একেন, যার নামের আগে ভারী কোনও তকমা নেই, বিশেষ কোনও অস্ত্র নেই। তিনি বুদ্ধিদীপ্ত কথাও বলেন না। তাকে দেখলে কোনও দিক থেকেই গোয়েন্দা বলে মনে হয় না। আর পাঁচজন বাঙালির মতোই একেন রসিক, পেটুকও বটে।
আরও পড়ুন: বড়সড় চমক দিতে চলেছে ‘মিঠাই’, ঘুরে যাবে গল্পের মোড়
“‘একেনবাবু’ সিরিজ় দেখে দর্শক চরিত্রটিকে যেভাবে গ্রহণ করেছেন তা এককথায় অভাবনীয়। গোয়েন্দাসুলভ না হয়েও বড়পর্দায় একেনকে নিয়ে আসার সাহস যুগিয়েছেন তাঁরাই,” বললেন পরিচালক।
সুজন দাশগুপ্তের লেখায় একেন চরিত্রটির বর্ণনা যেমন, পর্দায় তাকে দেখতে একেবারেই তেমনটা নয়। অথচ, এখন একেনকে নিয়ে লিখতে গেলে লেখকের চোখের সামনে ফুটে ওঠে পর্দার একেনের মুখ। সুজনের লেখা ‘ম্যানহাটানে ম্যাডম্যান’ গল্প অবলম্বনেই তৈরি হয়েছে ‘দ্য একেন’। তবে ম্যানহাটান নয়, গল্পের পটভূমি দার্জিলিং। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ।
“অভিনয় করার আগে যখন গল্পটা পড়েছি, তখন সত্যিই আমার মনে হয়েছে যে এই চরিত্রের সঙ্গে আমার বাহ্যিক কোনও মিল নেই,” বললেন অনির্বাণ। “তবুও এই চরিত্রটিকে আমাকে আমার মতো করে ফুটিয়ে তুলতে হবে। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করেছি। এখন স্রষ্টা নিজে যখন আমায় ফোন করে বলেন, লিখতে গেলে আমার মুখটা তাঁর চোখের সামনে ভেসে ওঠে এটা আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি।”
এই ছবিতে বিখ্যাত অভিনেত্রী বিপাশা মিত্রের চরিত্রে দেখা যাবে পায়েল সরকারকে। রহস্যের কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি। বিপাশার চরিত্রে বাস্তবে নায়িকাসুলভ জীবনযাপনে একেবারেই অনভ্যস্ত পায়েল জানালেন, “বিখ্যাত নায়িকা হওয়ার অনেক বিড়ম্বনা। সবসময় নায়িকার মতো আচরণ করতে হবে, এটা মাথায় রেখে আমাকে কাজ করতে হয়েছে।”
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
প্রায় গোটা ছবিরই শুটিং হয়েছে দার্জিলিংয়ে। অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটার আগে যেমন চারপাশ স্তব্ধ হয়ে যায়, রহস্য ঘনীভূত হলে যেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয় চারদিক, ঠিক তেমনই রহস্যের জট খুলে গেলে আবার ঝলমল করে উঠল সূর্য। পনেরো দিনের শুটিং শেষে তেমনই ছিল শৈলশহরের আবহাওয়া।
“আগের সিরিজ়গুলো থেকেই দর্শকের কাছে একেন যথেষ্ট বিখ্যাত। তবে বড়পর্দায় একেনকে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে দার্জিলিং,” জানালেন পায়েল।
আরও পড়ুন: সব কান্নার শব্দ হয় না, বেজে উঠল পটদীপ
একেনের দুই ঘনিষ্ট বন্ধু বাপি ও প্রমথর চরিত্রে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন সুহোত্র মুখোপাধ্যায় ও সোমক ঘোষ। গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দেখা যাবে ‘মন্দার’ খ্যাত দেবাশিস মণ্ডলকে।
গোয়েন্দা কাহিনীতে গান বেমানান হলেও অম্লান চক্রবর্তীর পরিচালনায়, গোধূলি শর্মার লেখা এবং সিদ্ধার্থ (সিধু) রায়ের গাওয়া গানের ঝলক ইতিমধ্যেই দর্শকের মন জয় করেছে।
‘একটু থ্রিলে, জাস্ট চিলে’ বিপাশার কোন রহস্যের সমাধান করেন একেন্দ্র সেন এখন সেটাই দেখার।
১৪ এপ্রিল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘দ্য একেন’।