‘প্রতিবার একই কথা শুনতে হয়, বাজেট নেই’
চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া হয়ে গেছে সেই কবেই। তবুও খুব বেশি ছবিতে দেখা যায় না তাঁকে। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র পর সম্প্রতি সুদেষ্ণা রায় ও অভিজিৎ গুহ পরিচালিত ‘সামসারা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এই ছবিতে নিজের চরিত্র ছাড়াও নানান বিষয়ে রেডিওবাংলানেট-এর সঙ্গে কথা বললেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
ছবির নাম ‘সামসারা’। এই ‘সামসারা’ কথাটার মানে কি?
আমি যতদূর জানি ‘সামসারা’ একটা সংস্কৃত শব্দ। এর মানে হল জীবন ও জীবনের পরে। যে জীবনকে আমরা যেভাবে দেখতে পাই তারপরেও কিছু থাকে এমনটাই বলা হয়। এখানে জীবনের সেই অন্যদিকটা তুলে ধরা হয়েছে। যেটা আমরা খালি চোখে দেখি না বা বুঝতে পারি না, এই ছবিটা সেই জীবনকে নিয়েই। থ্রিলিং এলিমেন্টও থাকছে ছবিতে।
এখন তো প্রায় সব ছবিতেই থ্রিলার এলিমেন্ট থাকছে কিছু না কিছু। সেখানে আবার একটা থ্রিলার কেন ?
থ্রিলার এখন যে সব হচ্ছে সেগুলো প্রায় সবই গোয়েন্দা গল্প নিয়ে। ‘সামসারা’তে কোনও গোয়েন্দার ব্যাপার থাকছে না। এটা তিনজন বন্ধুর গল্প, বেড়াতে গিয়ে তাদের সঙ্গে নানারকম ঘটনা ঘটে।
এই ছবিতে তোমার চরিত্রটা কিরকম?
এই তিন বন্ধু, যাদের কথা বললাম, তাদের অনেকদিন পর দেখা হয়। তারা ঠিক করে যে কোথাও একটা ঘুরতে যাবে। সেখানে গিয়ে তাদের আমার সঙ্গে দেখা হয়। পৃথিবীর কোনও এক পাহাড়ি জায়গায়। সেটা যে কোনও জায়গাই হতে পারে। এক স্থানীয় পাহাড়ি বাসিন্দার চরিত্রে অভিনয় করছি আমি। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর এই তিনজনের মধ্যে নানারকম কথাবার্তা হয়। আমাকে দেখার পর, বিশেষ করে রাহুলের (বন্দ্যোপাধ্যায়) মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা দেখা দেয়। সেটা কি এবং কেন তার উত্তর পাওয়া যাবে ছবিতে।
বিশ্বনাথের বারাণসী, বারাণসীর বিসমিল্লাহ
তোমাকে খুবই কম ছবিতে দেখা যায়। সেটা কি নিজের ইচ্ছেতেই, না কি কাজের ব্যাপারে তুমি খুব খুঁতখুঁতে?
খুব সহজ উত্তর—কাজ পাই না তাই করি না (হেসে)। এটা সত্যি যে আমি প্রচুর ছবির অফার পাই না। তবে এটাও ঠিক যে ভালো ছবির অফার তার থেকেও কম আসে। প্রথমত চরিত্র পছন্দ না হলে আমি কাজ করি না। আর দ্বিতীয়ত আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে পারিশ্রমিক নিয়ে একটা সমস্যা আছেই। এতই কম টাকা অফার করা হয় যে না নিলেই ভালো হয় আর কি। প্রতিবার একই কথা শুনতে হয় ‘বাজেট নেই’। এমনকি বড় বড় স্টার যারা এখন ছবি প্রযোজনা করছেন, তাঁদের তরফ থেকে কাজের প্রস্তাব এলেও বলে দেওয়া হয় বাজেট কম।
এটা কি সকলের সঙ্গেই হয় না কি তুমি একাই এর শিকার ?
না, না। আমি একা নই। এটাই বাস্তব এখানে। বাজেট কম রাখা ছাড়া উপায় নেই। আর অভিনয় করাটাই যেহেতু আমার পেশা, তাই ন্যায্য টাকা না পেলে কাজ করব না, এটাই আমাকে কম ছবিতে দেখার একটা কারণ বলা যেতে পারে।
শব্দ যখন ছবি আঁকে
আর কোন ছবিতে দেখা যাবে তোমাকে?
‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র পড়ে ‘সামসারা’তেই কাজ করলাম। তবে দুটো ছবি তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে অনেকদিন। সেগুলো কবে রিলিজ় হবে জানি না। একটা অতনু ঘোষের ‘বাহাত্তর ঘণ্টা’। অতনুদার এই ছবিটা ‘ময়ূরাক্ষী’রও আগে শ্যুট করা। এছাড়া অনিমেশ বোসের ‘তৃতীয়’ বলে একটা ছবি আছে যেখানে আমি, জয় (সেনগুপ্ত) আর সম্পূর্ণা (লাহিড়ি) কাজ করেছি।
ওয়েব সিরিজ় বা টেলিভিশনে কাজ করছ না?
হ্যাঁ, একটা ওয়েব সিরিজে় কাজ করেছি। অরিন্দম শীলের ‘সত্যমেব জয়তে’। এটার সম্প্রচার কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। এছাড়া আরও কথাবার্তা চলছে, তবে সেগুলো এখনও বলার মত পর্যায়ে নেই। টেলিভিশনের অফার সবসময়ই আসে। কিন্তু এর-ওর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করায় আমার আপত্তি আছে। এমন নয় যে মায়ের চরিত্র করতে আমার সমস্যা আছে। অনিন্দ্যর (চট্টোপাধ্যায়) ‘ওপেনটি বায়স্কোপ’-এ তো ঋদ্ধি সেন আর ঋত্বিক চক্রবর্তীর মা হয়েছি। কিন্তু চরিত্রটা শুধু মায়ের হলেই চলবে না। শুধুমাত্র কারোর মা হয়ে থাকার মত চরিত্রে আমি কাজ করব না।
ছবি: অর্ক গোস্বামী