দর্শক বোকা নয় যে ইমেজ দিয়ে অভিনেতার বিচার করবে: মনামী
‘ইরাবতীর চুপকথা’, ‘পুণ্যিপুকুর’ বা ‘বিন্নি ধানের খই’-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করার পর ‘মৌচাক’ ওয়েব সিরিজ়ে নিজের ইমেজ ভাঙলেন মনামী ঘোষ। সাহানা দত্তর রচনায় আর সায়ন্তন ঘোষালের পরিচালনায়, এই সিরিজ়ে এক লাস্যময়ী বৌদির চরিত্রে রয়েছেন তিনি। এত বছরের অভিনয় জীবনে এমন একটা ছকভাঙা সিদ্ধান্ত কেন নিলেন মনামী? শুনল রেডিওবাংলানেট।
সাহসী চরিত্র বলেই কি এই সিদ্ধান্ত?
খুব চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এমন নয়। চরিত্রটা আমার পছন্দ হয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম, যাই করি নামভূমিকায় থাকব আর ওয়েব মাধ্যমে যদি পা রাখি তাহলে এমন কিছু করব যা আমি আগে করিনি। দর্শককে চমকে দেওয়ার মতো একটা শুরু চাইছিলাম। সেটা ‘মৌচাক’ আমাকে দিয়েছে। আর মৌয়ের মতো কোনও চরিত্র আমি আগে করিনি। এছাড়া যাঁদের সঙ্গে আমি কাজ করতে অভ্যস্ত, সাহানাদি (দত্ত) বা প্রযোজনা সংস্থা, সবকিছু দেখেই চরিত্রটা করব বলে সিদ্ধান্ত নিই।
মৌয়ের মতো চরিত্র বড়পর্দায় পেলে করতে? নাকি সচেতনভাবেই ওয়েব মাধ্যমে কাজ করতে চেয়েছিলে?
না, এমন নয় যে ওয়েবই চাইছিলাম। এটা যদি ছবিতে পেতাম তাহলেও করতাম। তবে এটাও ঠিক যে ওটিটি এখন হটকেক। বরং ছবির মুক্তি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। বড় বাজেটের ছবি বানাতেই লোকে ভয় পাচ্ছে। সেই সময় এই অফারটা আসায় আমি আর কিছু ভাবিনি।
মৌয়ের চরিত্রটা যেরকম তাদের এখনও আমাদের সমাজে একটু নিষিদ্ধরূপেই দেখা হয়। তুমি সচরাচর যে ধরণের চরিত্র করে থাকো, মৌ তার থেকে একেবারেই আলাদা। এত বছরের তৈরি করা ইমেজ ভেঙে যাওয়ার ভয় ছিল না?
ইমেজ ভাঙার ভয় আমার ছিল না। আমার পুরনো ইমেজেও আমি যখন ইচ্ছে ফিরে যেতে পারি। ওটা তো সহজ। বরং এটাই আমার কাছে কঠিন ছিল। নিষিদ্ধ কিনা সেটা নিয়ে ভাবিনি, কারণ আর পাঁচটা চরিত্রের মতোই এটাও একটা চরিত্র। তাছাড়া দর্শক এত বোকা নয়। এই সময়ে দাঁড়িয়ে ইমেজ দিয়ে অভিনেতা বিচার করার ব্যাপারটাই আর নেই। একটা সময় ছিল যখন মানুষ চরিত্রকে চিনত, মূল অভিনেতাকে নয়। ইমেজের ভয়টা তখন ছিল। এখন আর এগুলো নিয়ে কেউ ভাবে না। দর্শক জানে আসল মনামী কেমন। সে ইরাবতীও নয় আবার মৌও নয়। আসল মনামীকে তারা রিয়্যালিটি শোতে দেখছে। আমার ইউটিউব চ্যানেলেও দেখছে। তাঁরা বরং এখন অভিনেতাকে নানারকম চরিত্রে দেখতেই ভালোবাসে। এরপর যদি মোহর বা ইরাবতীর মতো চরিত্রে ফিরে যাই, আমি জানি তাঁরা আবারও সেই চরিত্রটিকে গ্রহণ করবেন। কারণ তাঁরা জানেন এটা একটা চরিত্র। এটা আমি নই।
আরও পড়ুন: বেহিসেবী জীবনযাপন, আজ স্মৃতির অতলে সৌমিত্র
এর আগে ‘দুপুর ঠাকুরপো’ সিরিজ়ের বৌদিদের সঙ্গে মৌয়ের মিল কতটা? উমা, ঝুমা বা ফুলওয়া বৌদি কি মৌয়ের ওপর কোনও ছাপ ফেলবে?
আগের কোনও বৌদিদের আমি দেখিনি। কারণ ওই বৌদিদের থেকে মৌ একেবারেই আলাদা। সব বৌদি কি একরকম হয়? এই গল্পটা একদম অন্যরকম কারণ এখানে একটা রহস্য আছে। নাহলে সায়ন্তনের মতো পরিচালকই বা কেন এই সিরিজ়টা করতে রাজি হবে? এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা চরিত্র। ‘দুপুর ঠাকুরপো’ বলতে যে ধরণের বৌদিকে বোঝানো হয়, এটা একেবারেই তেমন নয়। আমাকেও কোথাও বলা হয়নি যে ওইভাবে বা ওদের দেখে কাজটা করতে হবে। বরং মৌ খুব স্পষ্টবক্তা, স্ট্রিট স্মার্ট একজন মেয়ে। ন্যাকামি জিনিসটাই তার মধ্যে নেই।
সায়ন্তনের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করে কেমন লাগল?
খুব ভালো লেগেছে। সায়ন্তন খুব মিষ্টি ছেলে। যেমন ভালো ব্যবহার তেমনই মন দিয়ে কাজটা করে। এই সিরিজ়টা আমাদের দুজনেরই ইমেজ ব্রেক করছে বলতে পারো। তবে ‘মৌচাক’-এর মেজাজটা আলাদা হলেও এটা কিন্তু সায়ন্তনের ঘরানারই কাজ। এখানে লাস্যটাই একমাত্র কনটেন্ট নয়। বরং এটা একটা অন্য ধরনের থ্রিলার বলা যেতে পারে। কাজটার মধ্যে চ্যালেঞ্জ ছিল। আসল মনামী ওরকম নয়। বা মনামীর করা চরিত্ররাও কেউ সেরকম নয়। এখানে যেমন কমেডি আছে তেমনই রহস্য আছে।
কাঞ্চন মল্লিকের মতো অভিজ্ঞ শিল্পী ছাড়াও বেশ কয়েকজন নতুন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করলে। সেই অভিজ্ঞতা কেমন?
হ্যাঁ, এই সিরিজ়ে অনেকেই রয়েছে যাঁরা প্রায় নতুন। এদের সকলের মধ্যেই ভালো কাজ করার খিদেটা রয়েছে। প্রত্যেকের মধ্যেই এটা দেখেছি। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এটাই একজন বড় অভিনেতা হয়ে ওঠার চাবিকাঠি। ট্যালেন্ট হয়তো কারোর উনিশ-বিশ হতে পারে কিন্তু ওই খিদেটা থাকাই আসল কথা। আর নতুন বা পুরোনো কারোর সঙ্গেই কাজ করতে আমার অসুবিধা নেই যদি তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকে।