বাবা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, ট্রলি ঠেলছেন সৌমিত্রকাকু: সন্দীপ
RBN Web Desk: শুটিংয়ের ফাঁকে ট্রলি ঠেলতেও পিছপা হতেন না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রয়াত অভিনেতার স্মৃতিচারণে এমনটাই জানালেন সন্দীপ রায়। গতকাল ছিল সৌমিত্রর জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে সন্দীপ জানালেন নানা কথা। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় চোদ্দটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র। এছাড়াও ‘সুকুমার রায়’ তথ্যচিত্রে রামের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
সত্যজিৎ যখন কোনও ছবির চিত্রনাট্য পড়তেন তখনই চরিত্রকে বোঝার ও অনুশীলনের কাজ অনেকটা হয়ে যেত বলে মনে করেন সন্দীপ। এরপরে থাকতো সৌমিত্রর নিজস্ব হোমওয়ার্ক। প্রতিটা চরিত্রের জন্য আলাদা করে তিনি নিজের জন্য নোট রাখতেন বলে জানালেন সন্দীপ। চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার পর ফুটনোট লিখে রাখতেন সৌমিত্র। কোথাও কথার ওপর জোর পড়বে বা কোথাও হয়তো মোজা বা জুতো পরার কাজ রয়েছে, কিংবা হয়তো এই সময় চায়ে চুমুক দিতে হবে, এই সবই সৌমিত্র তাঁর নোটে লিখে রাখতেন।
আরও পড়ুন: নেপথ্যে গাইলেন জলি, স্টেজে দাঁড়িয়ে ঠোঁট মেলালেন রাহুল দেব বর্মণ
“যেহেতু বাবা চিত্রনাট্য পড়ার সময়েই অভিনেতারা বুঝে নিতেন কাজটা কীভাবে করতে হবে তাই শুটিংয়ের সময় আলাদা করে আর তাঁদের নির্দেশ দিতেন না তিনি,” জানালেন সন্দীপ। “সৌমিত্রকাকুকে তিনি বরাবরই বলতেন নিজের মতো করে কাজটা করতে। কোনও সমস্যা হলে তখন বোঝাতেন। ইম্প্রোভাইজ় বা নিজের মতো করে সংলাপ বলার ক্ষেত্রে সৌমিত্রকাকুকে চিরকালই স্বাধীনতা দিতেন বাবা। ব্যতিক্রম ছিল শুধু ‘হীরক রাজার দেশে’। সেই ছবিতে সংলাপ পরিবর্তন করার বিশেষ জায়গা ছিল না।”
সত্যজিতের ছবিগুলোর মধ্যে অপু চরিত্রের পর সবচেয়ে কঠিন ছিল ‘অশনি সংকেত’-এর গঙ্গাচরণ। সৌমিত্র নিজেই সে কথা বলেছেন বলে জানালেন সন্দীপ। তাঁর অন্যতম প্রিয় চরিত্রও ছিল এটি। “এই ছবির শ্যুটিংয়ের সময় সৌমিত্রকাকুকে ডাইরি রাখতে দেখেছি। শুটিংয়ের ফাঁকে লোকেশনে কোনও এক কোণে বসে তিনি নিজের চরিত্রটি নিয়ে পড়াশোনা করতেন। এমনকি মানসিকভাবে এতটাই যুক্ত ছিলেন এই ছবির সঙ্গে যে একদিন শুটিংয়ে ট্রলি ঠেলতেও দেখা যায় তাঁকে। সেই সময় ওই কাজের জন্য লোকবল কম থাকায় সৌমিত্রকাকু নিজেই সেই দায়িত্ব পালনে নেমে পড়েন। শট শেষ হওয়ার পর বাবা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন, ট্রলি ঠেলছেন সৌমিত্রকাকু। অভিনেতা ট্রলি ঠেলার কাজ করছেন দেখে তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন,” বললেন সন্দীপ।
সত্যজিৎ-সৌমিত্রর মধ্যে সম্পর্ক শুধুমাত্র পরিচালক ও অভিনেতার নয়, বরং সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে পারিবারিক ঘনিষ্ঠতাও বেড়েছিল। পরবর্তীকালে সৌমিত্র ও নির্মাল্য আচার্যের সম্পাদনায় ‘এক্ষণ’ পত্রিকার কাজে সেই সম্পর্ক ছবির গন্ডি পেরিয়ে অন্য বিষয়েও এগিয়ে যায়।
ছবি: অর্ক গোস্বামী