সত্যজিৎজ্যেঠুকে গিয়ে বললাম, ওসব জামা আমি পরবো না: সোহম
RBN Web Desk: ‘শাখা প্রশাখা’ ছবিতে তাঁর জন্য নির্ধারিত পোশাক পছন্দ না হওয়ায় খোদ পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সোহম চক্রবর্তী। ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবিতে সর্বকনিষ্ঠ অভিনেতা ছিলেন তিনি। দীপঙ্কর দে, মমতা শংকর, অজিত বন্দোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তীর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন সোহম।
কীভাবে এসেছিল সেই সুযোগ? সম্প্রতি একটি ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে সোহম রেডিওবাংলানেট-কে জানালেন, “সত্যজিৎ রায়ের বিশেষত্বই ছিল যে উনি শিশুদের সঙ্গে শিশুর মতোই মিশতেন। একটি বাচ্চাকে কীভাবে বোঝালে সে বুঝবে, সেটা উনি জানতেন। আমার কিছু ঘটনা আবছা মনে আছে। তবে এই কথাগুলো বাবা-মায়ের কাছে এত শুনেছি, রঞ্জিতআঙ্কল (মল্লিক), টিটোআঙ্কল (দীপঙ্কর), মমআন্টি (মমতা শংকর) এখনও বলেন দেখা হলে, যে শুনে-শুনে মুখস্থ হয়ে গেছে।”
আরও পড়ুন: শেষের সেদিন, উপস্থিত ছিলেন শুধু মহেশ ও ড্যানি
দীপঙ্করই প্রথমে সোহমের বাবা-মাকে বলেন যে ছবিতে তাঁর এবং মমতা শংকরের ছেলের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য একজন শিশু-অভিনেতা খুঁজছেন সত্যজিৎ। “বাবা-মা আমাকে ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে নিয়ে যান। সেখানে জ্যেঠু আমাকে একটা কবিতা বলতে বলেন। আমি কিছুই না জেনে সুকুমার রায়ের ‘ভয় পেও না’ ছড়াটা বলেছিলাম,” জানালেন সোহম।
এরপর একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় প্রোডাকশন থেকে গাড়ি আসে সোহমকে নিয়ে যেতে। সেদিন কিছু সংলাপ তাঁকে বলতে বলেছিলেন সত্যজিৎ। “সেই ‘আমি উইম্বলডন জানি’ সংলাপটা বলতে বলা হলো। আমি বললাম। উনি তখন বললেন, ঠিক আছে বাড়িতে ডেট চলে যাবে,” বললেন সোহম।
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
এরপর একদিন বেশ কয়েকবার রিটেকের পর পিকনিকের দৃশ্য শুট করা হয়। সেই প্রসঙ্গে সোহম জানালেন, “আমি তখন খুবই ছোট, মাত্র পাঁচ বছর বয়স। যেভাবে জ্যেঠু বলে দিয়েছিলেন, সেভাবেই করেছিলাম। সংলাপের একটা জায়গায় ‘দুটো’ কথাটায় জোর দিতে হতো, যেটার একটা ভিডিও ভাইরালও হয়েছিল কদিন আগে। সেটা বুঝিয়ে বলার পর আমি ঠিকঠাক করতে পেরেছিলাম। আমার দৃশ্যের শুট শেষ হওয়ার পর সেটা দেখে উনি এত খুশি হয়েছিলেন যে খুব উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, ‘বোমা বোমা!’ এটা উনি খুব খুশি হলে বলতেন। তখন তো আর বুঝিনি কার পরিচালনায় কাজ করছি। তিনি কে সেটা তো পরে জানলাম।”
বড় হয়ে সত্যজিৎ সম্পর্কে জানার পর যদি কাজটা করতে হতো তাহলে হয়তো তিনি এত সহজভাবে পারতেন না বলে জানালেন সোহম। কারণ তখন সামনের মানুষটা সম্পর্কে সচেতন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
আরও পড়ুন: নব্বইয়ের ‘সত্যান্বেষী’, বাদ পড়লেন ব্যোমকেশ
“ড্রেসারকাকুরা এক একদিন যে জামাকাপড় পরাতে চাইতো, সেটা আমার পছন্দ হতো না। হয়তো ওরা একদিন টাইট জ্যাকেট পরতে দিল, এদিকে আমার ঢিলেঢালা জামা পছন্দ। আমি সোজা জ্যেঠুর কাছে গিয়ে বললাম ওটা আমি পরবো না। আমি ভয়-টয় পেতাম না। পছন্দ না হলে সোজা বলে দিতাম। উনি ড্রেসারদের বলে দিতেন, যেটা আমার পছন্দ নয় সেটা যেন না পরানো হয়। এই যে বাচ্চাদের পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া, তাদের সঙ্গে বড়দের মতো করে মেশা এই ব্যাপারটা আমি অন্তত কারও মধ্যে দেখিনি,” বললেন এক সময়ের মাস্টার বিট্টু।