না বলা কথার রেশ রেখে যায়
ছবি: সেদিন কুয়াশা ছিল
পরিচালনা: অর্ণব মিদ্যা
অভিনয়ে: সৌরসেনী মৈত্র, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায, দেবশঙ্কর হালদার, জয় সেনগুপ্ত, জিতু কমল, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৯ মিনিট
RBN রেটিং ★★★★★★☆☆☆☆
সাধারণভাবে মানুষের জীবনকাল নেহাত কম নয়। তবু কত কথা না বলা থেকে যায়। জমতে-জমতে একসময় তা পাহাড় হয়ে ওঠে। তাই কখনও সময় করে এসে দিয়ে যেতে হয় অভিযোগের উত্তর, জমানো অভিমানের চিঠি।
তিনটি গল্পের সমাহারে তৈরি ছবি ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ (Sedin Kuyasha Chilo)। প্রথম গল্প ‘সেদিন আঁধার ছিল’। রাতের অন্ধকারে গৃহবধূর (সৌরসেনী) দরজায় অনাহুত অতিথি হয়ে আসে এক স্বাধীনতা সংগ্রামী (অর্ণ)। দুই ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ সারা রাত ধরে একে অন্যের চিন্তাধারাকে বোঝার চেষ্টা করে।
দ্বিতীয় গল্প ‘সেদিন দেখা হয়েছিল’। তিরিশ বছর পর দেখা হয় তিন বাল্যবন্ধুর। বর্তমান জীবনে প্রতিষ্ঠিত তিন বন্ধুর একজন পরিচালক (জয়), একজন লেখক (খরাজ) এবং একজন চিত্রশিল্পী (দেবশঙ্কর)। এতবছর বাদে দেখা হয়ে খুব সহজে গলে যায় সম্পর্কের ভেতর জমে থাকা বরফ।
আরও পড়ুন: আবারও ‘গল্প হলেও সত্যি’র রিমেক
তৃতীয় গল্প ‘সেদিন কথা হয়েছিল’। ডাক্তার ছেলের (জিতু) বাড়িতে হঠাৎই গ্রাম থেকে এসে হাজির হন বাবা (পরান) ও মা (লিলি)। বিরক্ত স্ত্রীকে (সায়ন্তনী) সামলে ছেলে চেষ্টা করে যায় বাবা-মাকে খুশি করতে।
তিনটি গল্পের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র না থাকলেও রয়েছে এক বিশেষ সূত্র যা সবসময় বাস্তবের মাটিতে পা রেখে জানা যায় না। বা হয়তো জেনেও এড়িয়ে চলে সবাই। কিছু সত্যের মুখোমুখি হওয়া কঠিন। আবার কিছু সত্য হয়তো জীবনটাকেই পাল্টে দেয়।
তিনটি ভিন্ন কাহিনিকে অদৃশ্য এক সুতোয় গেঁথে ফেলার ভাবনা দেখতে মন্দ লাগে না। তবে ছবির দৈর্ঘ্য আর একটু কম রাখা যেত। চিত্রনাট্যের বাঁধুনি কিছু জায়গায় কিঞ্চিৎ আলগা লাগে। উপযুক্ত সংলাপের অভাব দক্ষ অভিনেতাদেরও হাত-পা বেঁধে দেয়। ছবির অন্য দুর্বলতা গল্পের সময়োপযোগী সংলাপ ও তার উচ্চারণের দিকে মনোযোগ না দেওয়া। ফলে স্বাধীনতার আগের গল্পে আধুনিক শহুরে বাংলা উচ্চারণ কানে লাগে। প্রথম দুটি গল্পে প্রকৃতির ক্যানভাস উঠে আসতে পারত ক্যামেরায়, কিন্তু তা পাওয়া গেল না। তবে সামাজিক ও পারিবারিক কাহিনির কোলাজ হিসেবে ছবির ভাবনা বেশ অন্যরকম।
অভিজ্ঞ শিল্পী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ আকর্ষণ করে নেন দেবশঙ্কর, খরাজ এবং জয়। দ্বিতীয় গল্পটির আবেদন মনকে ছুঁয়ে যায় যদিও আরও কিছু অতীত ঘটনার কথা উঠে এলে রিইউনিয়ন সার্থক হতো। এছাড়াও স্বল্প পরিসরে পরানবাবুর অভিনয় প্রত্যাশিতভাবেই মনে রাখার মতো। অন্যেরা যথাযথ।
আরও পড়ুন: কী বলবে সেন্সর? জানেন না রাজর্ষি
নচিকেতা চক্রবর্তী ও শাওনি মজুমদারের কণ্ঠে রনজয় ভট্টাচার্যের পরিচালনায় ছবির শীর্ষসঙ্গীত ‘সেদিন কুয়াশা ছিল’ শুনতে ভালো লাগে। এছাড়া অন্য রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলি সুখশ্রাব্য হলেও ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ ছাড়া অন্য গানগুলির প্রয়োজন খুব একটা ছিল না। খরাজ ও দেবশঙ্করের গলায় গানটি আলাদা আমেজ রেখে যায়।
নানা সম্পর্কের টানাপোড়েনে কোথাও এক অজানা অপরাধবোধের জন্ম দেয় এ ছবি। অন্যধারার ভাবনা ও প্রচেষ্টা হিসেবে অর্ণবের কাজ প্রশংসনীয়।