‘এত ভালো আউটডোর আগে কখনও পাইনি’
সদ্য অরুণাচল প্রদেশ থেকে ফিরেছেন তিনি। পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিকের পরবর্তী ছবি ‘হৃৎপিণ্ড’র কাজে পুরো টিমের সঙ্গে অরুণাচলে দশদিনের আউটডোর সেরে বাড়ি ফিরে রেডিওবাংলানেট-এর মুখোমুখি হলেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়। জানা গেল পাহাড়ে শুটিংয়ের নানান অজানা গল্প।
কেমন কাটালে অরুণাচলে?
দারুণ ভালো। এত ভালো আউটডোর আগে কখনও হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। ওখানে যাওয়ার আগে আমরা কিছুদিন বারুইপুরে কাজ করেছিলাম। সকলে এতটাই মন দিয়ে কাজ করেছিল যে যতটা সময় লাগবে বলে ভাবা হয়েছিল তার অনেক আগেই কাজ উঠে গেছিল। আর অরুণাচলে যে কি সাংঘাতিক আনন্দ করে কাজ করেছি সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। শুধু আমি, অর্পিতা (চট্টোপাধ্যায়) আর প্রান্তিক (বন্দ্যোপাধ্যায়) নয়, পুরো টিমটাই খুব মজা করেছে অরুণাচলে।
শিলাদিত্যর সঙ্গে এটা তো তোমার প্রথম কাজ। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা?
শিলাদিত্যর কোনও তুলনা হয় না। ওর মতো পরিষ্কার মাথা খুব কম পরিচালকের হয়। যে কোনও শটের আগে ওর মাথায় যেন দৃশ্যটা আঁকা থাকে। শিলা জানে ও কী চায়। ফলে কাজটা করা খুব সহজ হয়ে যায়। প্রতিটা দৃশ্য নিয়ে শিলার হোমওয়র্ক এতটাই ভালো যে কোথায় কার কোন সংলাপ আছে, পুরোটাই ওর মনে গাঁথা। তাছাড়া ও এমন একজন পরিচালক যাকে আমি কখনও সেটে রাগতে দেখিনি। সামান্য রাগারাগি বা বিরক্ত হওয়া পরিচালকদের মধ্যে কমন ব্যাপার, কিন্তু শিলা ভীষণই ঠাণ্ডা মাথার একজন মানুষ। কোনও ব্যাপারেই ও বিশাল কোনও প্রতিক্রিয়া দেয় না, শুনে নেয় সবটা। তারপর যেটা করা দরকার সেটা করে।
কোন দৃশ্যে তুমি কীভাবে অভিনয় করবে সেটা কে ঠিক করত, তুমি না পরিচালক?
আমি তো পুরোটাই ওর ওপরে ছেড়ে দিয়েছিলাম। একটা আলোচনা করে নিতাম শটের আগে যে এটা এভাবে করা যেতে পারে। ওর কিছু বলার থাকলে সেটা বলতো। সেটা আমি মেনে নিতাম, কারণ ওর চেয়ে ভালো করে দৃশ্যটা ভিসুয়ালাইজ় আর কেউ করতে পারবে না, এটা আমি জানতাম। আর আমি নিজেও যেমন খুঁতখুঁতে, শিলাও তাই। তাই দুজনে মিলে ঠিক করে নিতাম কাজটা কীভাবে হবে।
আরও পড়ুন: সিনেমার মতোই ছিল যে জীবন
এই ছবিতে তোমার চরিত্রটা নিয়ে কিন্তু বেশী কিছু জানা যায়নি
এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম সোমক। গল্পটা সোমক, আর্যা ও ঋকের। এইটুকু বলতে পারি যে আমার চরিত্রটা একজন ভালো মানুষের। আর ছবিটা দেখলে মানুষ বুঝবে হৃদয় আর হৃদপিণ্ড দুটো আলাদা জিনিস। এর বেশী কিছু এখন বললে ছবি দেখার মজাটা নষ্ট হবে।
অর্পিতা আর প্রান্তিকের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগলো? প্রান্তিকের সঙ্গে তো প্রথমবার কাজ করলে
অর্পিতার সঙ্গে তো প্রচুর কাজ করেছি। ও বরাবরই ভীষণ ভালো বন্ধু। ওর সঙ্গে কেমিস্ট্রি নিয়ে সমস্যা হয় না তাই। আর এবার প্রান্তিকের সঙ্গে কাজ করে আমি মুগ্ধ। ও আমার ছোট ভাই হয়ে গেছে। আমাদের একসঙ্গে নেওয়া সিনগুলো খুব ভালোভাবে উতরে গেছে। আমি আবারও প্রান্তিকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এরকম কো -অ্যাক্টর পেলে কাজ আপনিই ভালো হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: পাকদণ্ডীর পথে পথে দেওরিয়াতাল
অরুণাচলে কিরকম শিডিউল ছিল তোমাদের? খাওয়াদাওয়া কেমন হতো?
ওখানে ভোররাতে ঘুম থেকে উঠতে হতো। ভোর ছ’টায় কল টাইম থাকত। তাই সাড়ে তিনটেয় উঠে পড়তাম। কিন্তু অত রাতে উঠে ভোরবেলায় রেডি হয়ে শুটিং স্পটে পৌঁছতে কোনও কষ্টই হতো না, বরং খুব ফ্রেশ লাগত। ওই দশটা দিন যেন সকলের এনার্জি বেড়ে গিয়েছিল। আমার তো বেড়েছিলই। আর খাওয়াদাওয়া বলতে জমিয়ে রান্না হতো, ভালোমন্দ মিশিয়েই। আর লোকাল খাবার যা খেয়েছি তার মধ্যে মনে পড়ছে এক ধরণের লঙ্কার কথা। এটার নাম ভূত জলোকিয়া। উত্তরবঙ্গেও পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা শুকিয়ে যাওয়া লঙ্কার মতো। আমরা প্রথমে অতটা বুঝিনি। খাবার পর বুঝলাম কি মারাত্মক ঝাল! খেয়ে সকলের নাকচোখ দিয়ে জল বেরিয়ে একাকার অবস্থা।
শুটিংয়ের পর কী করে সময় কাটাতে?
সন্ধ্যেবেলা রোজ গানবাজনা হতো সবাই মিলে। আমি গাইতাম, অর্পিতা গাইতো, সকলে মিলেই প্রচুর গান গাওয়া হয়েছে। ‘হৃৎপিণ্ড’র প্রযোজনা করছে পরমা (নেওটিয়া)। ও আমাদের থেকে অনেক ছোট, সাংঘাতিক কুমার শানুর ভক্ত। আমাকে রোজ বলতো শানুর গান গাইতে। একটা করে গান খুঁজে বার করতো আর আমাকে গাইতে বলতো। আমি শুরুটা করতাম, তারপর আর গানের কথা মনে থাকতো না, আমি ডা-ডা-ডি-ডি করে চালিয়ে দিতাম। শেষে দেখা যেত গানে আর কথা নেই, ওই ডা-ডা-ডি-ডি-ই চলছে। সেই নিয়ে খুব হাসাহাসি হতো।
এই ছবিতে তোমার গলায় গান থাকছে?
না। তবে ছবির গানগুলো খুব সুন্দর। রণজয়ের (ভট্টাচার্য) সুরের ভক্ত হয়ে গেছি আমি। ওর কম্পোজ়িশনগুলো দারুণ, সকলেরই ভালো লাগবে। ছবিতে কারোর লিপেই গান থাকছে না। তবে খুব সুন্দরভাবে গানগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: লুকোনো আয়নায় নিজেকে চেনার প্রয়াস, মঞ্চস্থ হলো ‘প্রতিবিম্ব’
দারুণ অভিজ্ঞতা হলো তাহলে অরুণাচলে
একদম। ভীষণ ভালো কেটেছে দিনগুলো। পরমা, শিলা আর বাকি সকলে, এমন কি যিনি আমাদের সকালে চা খাওয়াতেন তিনি অবধি, আমরা সকলে একটা পরিবার হয়ে গিয়েছিলাম। বহু ছবির আউটডোর করেছি, কিন্তু এত ভালো কাজের পরিবেশ আগে কোথাও পাইনি। শুটিং শেষ হয়ে গিয়ে এখন খুব মিস করছি দিনগুলো। অরুণাচলে আমাদের খুব টাইট শিডিউল ছিল। সকালে বাইরে কাজ, পরে অন্ধকারেও ভেতরে শট নেওয়া হয়েছে। আউটডোর, ইনডোর দুভাবেই শুট করা হয়েছে কিন্তু কখনও ক্লান্ত লাগেনি।